কবিতা বিশেষ সংখ্যা

অর্ঘ্যকমল পাত্র | কবিতা | শারদীয় সংখ্যা

Basic RGB

১.

লেখা ছেড়ে উঠে পড়ছি মানে এই নয়, তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি। আমাকে মুক্তি কেউ এত সহজে দেয়নি; আমিও দেব না…। এলাকায় বাঘ ঢুকেছে। বাঘের হাত ধরেই বসে আছ তুমি। সবল, পেশিবহুল, পুরুষালি তীব্র গন্ধ। প্রতিদিন তার নতুন নতুন শিকার কেবলই মাংসাশী করে তুলছে তোমাকে। দেখতে পাচ্ছি — তোমার সূক্ষ্ম দাঁত, নখ। আমি, এক বাঙালি কবিতা-লেখক। লেখা ছেড়ে উঠে এসেছি মানে এই নয়, কবিতা আমাকে ছেড়ে গেছে। বন্দুক হাতে ধরিনি কখনও। অগত্যা, সনাতনী কলমটিকে নিয়ে একা, একাগ্র শ্রম দিচ্ছি আরও ধারালো করতে। লেখা ছেড়ে উঠে গেছি মানে এই নয়, কবিতা ফেলে চলে গেছি। একদিন ফিরে আসব রাতের অন্ধকারে। শেষ করে ফেলব বাসায় হানা দেওয়া গোপন বাঘকে। সহসা তোমার তীক্ষ্ণতা প্রকাশ পেলে, তুমিও নিহত হবে আমার কলমে! আমিও মুক্তি এত সহজে নেব না! যেহেতু তুমি ছেড়ে চলে যাবে মানে এই নয়, আমি লেখা ছেড়ে দেব

২.

কবিতায় প্রেমের কথা আসে। কবিতায় আঘাতের কথা আসে। কবিতাই ঘাতক—তাই তোমাকে অস্বীকার করি৷ তোমার চোখ, ঠোঁট, শৌখিন দাঁত, ওদের তাচ্ছিল্য করি৷ তোমার নমনীয় দেহ, উদাত্ত স্তন—তাতে হেলায় থাবা বসাই; আবার ভুলে যাই পরক্ষণে। কবিতায় দেহের কথা আসে। কবিতায় শূন্যতার কথা আসে। কবিতার শূন্যতা—এ-কথা বুঝতে গিয়ে আমি নির্বাক তাকিয়েছি তোমার দিকে; দেখেছি এক-আধটা গাছ, কেমন দীঘির দিকে ঝুঁকতে থাকে কিছুদিন সোজা থাকার পর। দেখি, তারপর চোখ বুজি—প্রেমে কবিতার কথা আসে; আঘাতে, সম্পূর্ণ কবিতা…

৩.

মনের মতো একটা মৃত্যু চাইতে গিয়ে দেখি—লাল পতাকা নিয়ে আমাকে লোকজনে কমরেড বলে ডাকছে। কেননা শ্রমিকস্বার্থে আমার মৃতদেহ তাদের দরকার। অথবা কৃষকস্বার্থে আমার আত্মহত্যা। আমি চিৎকার চাইনি। চেয়েছি নীরবতা। সুতরাং ‘অমর রহে’ কলরব এড়িয়ে আমি এগিয়ে যেতে থাকি রেললাইনের দিকে। সামনে মোড়, রাস্তা ভেদ করে দু’জন হঠাৎ বেরিয়ে এলে, আমি চমকে উঠি! চোখের পলক ফেলতেই, পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে তারা আমাকে বোঝায়—এই বন্দুক-ই আসল লাল। রক্ত। গাঢ়। মন্ত্রীমশাইকে গুলি করতে, আমাকেই নাকি দরকার। আমি ভয় পাই। কয়েকটি মশার অধিক কখনও হত্যা করিনি কিছুই! ধারালো চাকু দিয়ে পেয়ারাটুকুও কেটে দিত মা৷ আমি শুধু নুন ছড়িয়ে নিতাম। তারপর নিজে নিজেই খেতাম। শুনে তেরঙা হাতে শত শত লোক ঘিরে ধরল—দেশপ্রেমিক হও, দেশপ্রেমিক। দেশকে ভালোবেসেই থেকে যাও বহু বহু বছর। পেয়ারাই খাও। নুন মাখিয়ে। ড্রইংরুমে বসে। তারপর না হয় আশি পেরোলে, হার্ট অ্যাটাক, বা কোলেস্টেরলে, ঘুমের মধ্যেই…

মনের মতো একটা মৃত্যু চাইতে গিয়ে দেখি—আরেকটি নতুন কবিতার মতো, ঘুম ভেঙে আমি জেগে উঠছি ফের…

অর্ঘ্যকমল পাত্র

জন্ম ২০০২, চন্দননগরে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘এখনই আত্মহত্যার সঠিক সময় নয়’ এবং ‘যদি জানো, বলো’। রাজনৈতিক ও মফস্বলের ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন৷

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    X