তীরন্দাজ Blog শিল্পকলা থিয়েটার অভি চক্রবর্তী | আমার ভিতরে জেগে ওঠে মিস্টার রাইট | থিয়েটার
থিয়েটার শিল্পকলা

অভি চক্রবর্তী | আমার ভিতরে জেগে ওঠে মিস্টার রাইট | থিয়েটার

জহ্লাদের মাথায় হাত রাখি
বিলি কেটে দি চুলে।

খুনে খুনে ক্লান্ত শরীর তার
তবুও চোখে তার ভরসা খুঁজে পাই
বুক জুড়ে খেলা করে সমুদ্র সৈকত।

মুখে তুলে দি ভালোবাসা মাখানো খাবার।
জহ্লাদ পরবর্তী খুনের পরিকল্পনা সানায়।

আসলে কখনো কখনো প্রতিশোধস্পৃহাগুলো আমাদের কুকুর করে তোলে। উলঙ্গ উন্মাদ করে তোলে। তখন আমাদের মনে হয় অনেক মার জড়ো করে রাখবো, শত্রুর জন্য। সে যেদিকেই যাবে তার জন্য অপেক্ষা করবে পরিকল্পিত মার। পরিকল্পিত অন্ধকারে তার জীবন তছনছ করে আমি সেই জীবনের উপর মোমবাতি হাতে হেঁটে যাব। অন্ধকারে আলো নিয়ে প্রার্থনা সংগীত গাইব, এই আমার অভীপ্সা। বুঝবোই না সে আমার শত্রু কি না!

তাই যখন নিজে পারছি না প্রতিশোধ নিতে, তখন প্রতিশোধ নেব অন্যকে ভালোবেসে। অন্যের সঙ্গে রাতদুপুর এক করে শলা করব। শত্রুর শত্রুকে আমার বন্ধু বানিয়ে আদর দেব, পিঁড়ি পেতে দেব সদ্য সন্ধে হওয়া হওয়া সময়ে। নিজের লোককে শত্রু বানিয়ে এমন তাড়িয়ে তাড়িয়ে মারব আমি।

কিন্তু তখনই সেই শত্রুর মধ্যে যদি জেগে ওঠে মিস্টার রাইট, তার ভিতরের মিস্টার রাইট। এই রাইটের জেগে ওঠাকে আপনি কীভাবে নেবেন তা আপনার ব্যাপার। কিন্তু কেউ যখন দেখে প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ মিথ্যে দোষারোপে তাকে দুষ্ট করতে চাইছে কেউ (পড়ুন তন্দ্রা), ক্রমাগত মিথ্যাচার তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দিচ্ছেনা। এক-একটা মিথ্যে মারের মতো তাকে ঘিরে ধরে তখন স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি অনুসারে সেখান থেকে বেরোতে চেষ্টা করি, হাত ততক্ষণে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গ্যাছে। ভালই হয়েছে, তার বা আমার ভদ্রতাবোধের তথাকথিত মুখোশ আমাকে বা তাকে তন্দ্রাকে পাল্টা মার দিতে বাধা দিত। দিতই। মহিলা হবার সুবিধে এবং সদ্য প্রেমিক হারানো মহিলা বাড়িতে এসে যতোই অনৈতিক মিথ্যাচার করুক না কেন, যতোই ভয় দেখিয়ে তাকে বা আমাকে কলুষিত করতে চাক না কেন আমি কি পারতাম তন্দ্রার গায়ে হাত দিতে? সে কি পারত? পারত তার পোশাকআশাক ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিতে? আমার মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ আমাকে বাধা দিচ্ছিল। তাকেও বাঁধা দিচ্ছিল হয়তো। আসলে সে আর আমি ততোক্ষণে এক হয়ে গেছি। কিন্তু মিস্টার রাইট আমাকে সেই সুযোগ দিল। আমাকে চোখে চোখ রেখে মারা শেখালো, ভণ্ড জ্যোতিষের টুঁটি চিপে দিতে শেখালো মিস্টার রাইট। বন্ধু ডাক্তারের রোগ ছেড়ে পালানোর অভ্যাসকে মেনে নিল না আমার ডানহাত। এভাবেই মিস্টার রাইটকে আমি মাঝে মাঝে পজিটিভভাবে দেখি। মারের বদলে মারের জলজ্যান্ত প্রতিনিধি হিসেবে দেখি। আমার নিজের লোকই যখন আমার বিরুদ্ধে কন্ট্রাক্ট কিলার লাগিয়ে দিয়েছে, নিয়োগ করেছে সুপারি কিলার তখন আমি কি করব? ডানহাত সারিয়ে তাকে কী আবার মধ্যবিত্ত মূল্যবোধে চুবিয়ে নেব নাকি ডানহাতকেই ব্যবহার করব গোপন দানবিক শক্তি হিসেবে? আমি জানিনা। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় যদি চীৎকার করে বলতে হয়, ‘এই জহ্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না’ তবে আমার মতো আম ভোটারদের একটা মিস্টার রাইট থাকলে ভালই হয়, যখন তখন যেন সে অসীম শক্তিশালী হয়ে মেরে দিতে পারে কারোকে, নিদেন আছাড় মারতে পারে তুলে সটান।

আসুন মিস্টার রাইট দেখতে থাকি। আমাদের সযত্ন নির্মাণ মিস্টার রাইট নিয়ে আরো কথা হবে ভবিষ্যতে। আপাতত এইটুকুই। অন্যভাবে আজ রাতে হঠাৎ আমার ডানহাতের কথা মনে পড়লো।

নাটক : মিস্টার রাইট
নাট্যকার : মোহিত চট্টোপাধ্যায়
প্রযোজনা : অশোকনগর নাট্যমুখ
ষোলতম মঞ্চাভিনয় হয়ে গেল : ১২ জুলাই
স্থান : উত্তরপাড়া গণভবন

Exit mobile version