গদ্য

সক্রেটিস যখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে | প্রদীপ রায় | নৈতিক দর্শন | মননশীল গদ্য

পড়তে সময় লাগবে ৫ মিনিট

সম্পাদকীয় নোট

কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়, সক্রেটিসের মৃত্যু দর্শনের ইতিহাসে আমাদের মানবীয় নৈতিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্র বুদ্ধিজীবীদের কীভাবে বিবেচনা করবে? রাষ্ট্রের সীমা কতটুকু? বুদ্ধিজীবীরা যেসব বিকেকী প্রশ্ন উত্থাপন করেন, রাষ্ট্র কী সেসব বিষয়ে কৈফিয়ত দাবি করতে পারে? একবারে উপন্যাসের আদলে সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যু নিয়ে এই লেখা। সেই সঙ্গে লেখাটি চিন্তনের দিক থেকে অনেক গভীর। মানবীয় ভাবনাবিশ্বের দিক থেকে এটি তাই একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ লেখা। যারা সাহিত্যচর্চা করেন, সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন লেখাটি তাদের নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে। একটু দীর্ঘ বলে (ছয় হাজার শব্দ) এটি তিন পর্বে প্রকাশিত হবে। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

পর্ব ১

মানবসমাজ বিকাশের ইতিহাসে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সভ্যতার উত্থানকে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বলে বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক এবং দার্শনিকসহ সকলেই দাবি করেন। কিন্তু এর মধ্যে গ্রিসে সভ্যতার আকস্মিক উত্থানকে সকলের নিকট মনে হয় আরো বিস্ময়কর, আরো গুরুত্বপূর্ণ। এর সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। ইতিহাস থেকে জানা যায় মিশর ও মেসোপটেমিয়ায় সভ্যতা গড়ে ওঠার জন্য যেসব উপাদানের প্রয়োজন ছিল সেগুলো হাজার হাজার বছর ধরেই বিদ্যমান ছিল। এসব এলাকা থেকে এই উপাদানগুলো প্রতিবেশি দেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে সভ্যতা গড়ে ওঠার জন্য যেসব উপাদান বিশেষভাবে প্রয়োজন, যেমন – অনুকূল আবহাওয়া, জলবাযু ও পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মুক্ত ও স্বাধীনচিন্তার ক্ষেত্র, গোঁড়ামি ও কুসংস্কারমুক্ত মন ইত্যাদি একমাত্র গ্রিসইে বিদ্যমান ছিল। ফলে একদিকে যেমন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে গ্রিকদের অর্জন ছিল অচিন্ত্যনীয়, তেমনি বিশুদ্ধ বৌদ্ধিক চিন্তায় তাদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণভাবে ব্যতিক্রম। সে সময় একমাত্র গ্রিসবাসীরা বিজ্ঞান, দর্শন ও গণিত আবিষ্কার করেন, জগৎ-জীবন, জগতের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও পরিণতি নিয়ে মুক্ত, উদার এবং স্বাধীনভাবে অনুধ্যানমূলক চিন্তা শুরু করেন। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিশ্বাস ও গোঁড়ামি তাঁদের মুক্ত ও স্বাধীনচিন্তার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। তাই গ্রিক সভ্যতার উত্থান বিশ্বসভ্যতায় এক বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

ঐতিহাসিকগণ লক্ষ করেছেন, এ সময় গ্রিসের সভ্যতায় ছিল উদারতার মহান দৃষ্টান্ত, হিংস্রতার সঙ্গে ছিল মহৎ সৃষ্টি, ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল বিদ্রোহ, সত্য প্রতিষ্ঠায় অসত্যের কাছে ছিল জীবন উৎসর্গ। তাই এরূপ অবস্থায় এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন মহাকবি হোমার; স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশিল্পী ইকটিনাস ও ফিডিয়াস; অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিবিদ থেমিস, টকলস, এরিস্টাইডিস ও পেরিক্লিস; বিশ্বনন্দিত সাহিত্যিক সফোক্লিস, এরিস্টোফেনিস, জগদ্বিবখ্যাত দার্শনিক মহামতি জ্ঞানতাপস সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল; ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস, বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক থুকিডাইসিস প্রমুখ।

গ্রিসের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রিস ছিল সাগরবেষ্টিত অসংখ্য পর্বতমালায় ঘেরা একটি দ্বীপময় এলাকা। এই পর্বতগুলো বিভিন্ন এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের স্বতন্ত্র জীবনধারা, রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, ন্যায়পরায়ণতার বোধ গড়ে ওঠে। এই স্বাতন্ত্র্যতার কারণেই পরবর্তীকালে গ্রিসের নগররাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এ ছাড়া অনেকাংশে অনুর্বর ভূমি, খনিজ সম্পদের অপ্রাচুর্য ও সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ার কারণে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটে। তবে একথা সত্য যে, বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যবোধ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।

গ্রিসের বিভিন্ন অংশের সামাজিক অবস্থা যেমন স্বতন্ত্র ছিল, তেমনি এর শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি সার্বিক বিকাশ লক্ষ করা যায়। গ্রিসের ইতিহাসে তাই আমরা দেখতে পাই প্রথমে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে অভিজাততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, এরপর পর্যায়ক্রমে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণ।

যতদূর জানা যায়, গ্রিসের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোনো সময়ই তেমন সুস্থিত ও সুস্থির ছিল না। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন নগররাষ্ট্র, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে স্বতন্ত্র, দাসভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল সমাজ, সামরিক শক্তিতে সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, ঘাত-সংঘাত ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে সামাজিক জীবনে এবং সৃষ্টি করে এক সংকটময় অবস্থার। এরূপ সংকটময় অবস্থায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রিস দেশ পারস্য কর্তৃক আক্রান্ত হয়। সুদীর্ঘ ৫০ বছর ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধের ফলে পারস্য পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ও পরিণতির মধ্য দিয়ে স্পার্টা ও এথেন্স নবরূপে গুরুত্বপূর্ণ নগররাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। স্পার্টা আবির্ভূত হয় অভিজাততান্ত্রিক, রক্ষণশীল, পশ্চাৎমুখী, অনুন্নত সংস্কৃতির ধারক-বাহক ও প্রবল সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী এক জাতি হিসেবে। তাই স্পার্টানরা ঘৃণ্য, ভয় ও সন্ত্রাসী পরিমণ্ডলে জীবনযাপন করার কারণে তাদের মধ্যে মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সুকুমার মনেবৃত্তি বিকাশের সুযোগ হয়নি। ফলে, বিশ্বসভ্যতায় তাদের কোনো বৌদ্ধিক অবদান নেই বললেই চলে। কিন্তু অন্যদিকে যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা এথেন্সের আর্থ-সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক-বৌদ্ধিক জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সূচনা করে। শ্রেণীবিভক্ত দাস সমাজব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও রাজতান্ত্রিক, অভিজাততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অতিক্রম করে এথেন্সে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। দরিদ্র কৃষক ও সাধারণ মানুষের জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক অধিকার আদায়, ঋণ-দাসত্ব বাতিলসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এথেন্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শুরু ও পর্যায়ক্রমে বিকাশলাভ করে। এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন সোলন, ক্লিসথিনিস ও পেরিক্লিস। তবে বলা হয়ে থাকে পেরিক্লিসের সময়েই (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬১-৪২৯) গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং এই সময়কালকেই এথেন্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

কিন্তু এথেন্সের এই গৌরবময় অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায় নি। গ্রিক-পারসিক যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী স্পার্টানরা খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ অব্দে এথেন্স আক্রমণ করে। এই যুদ্ধ প্রায় ৩০ বছর স্থায়ী হয় যা ইতিহাসে পেলোপনেসিয় যুদ্ধ নামে সমধিক পরিচিত। বৈরীতাপুর্ণ এই যুদ্ধ এথেন্সের আর্থ-সামাজিক জীবনে এক গভীর সংকটের সৃষ্টি করে। এথেন্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভাঙন দেখা দেয় যার প্রভাব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রভাবিত করে। এই সংকটময় অবস্থা গৌরবন্বিত গ্রিসের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনেও অবক্ষয়ের সূচনা করে। বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে হানাহানি, শোষণ, অত্যাচার, অসাম্য ইত্যাদির কারণে নগররাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ফলে এথেন্সের দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ ভূলুন্ঠিত হয়।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে গ্রিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। গ্রিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যক্তিক হওয়ার তুলনায় মূলত ছিল গোষ্ঠীভিত্তিক। এদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের উদ্দেশ্য ছিল গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা, শস্যাদি ও উদ্ভিদের ফলন বৃদ্ধি, মানবেতর প্রাণী এবং মানুষের স্বার্থ বৃদ্ধি করাসহ যাবতীয় উন্নতিসাধন। গ্রিসের প্রতিটি নগর ও অঞ্চলের ছিল নিজস্ব দেবতা। প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। অন্যান্য দেব-দেবীর মধ্যে যুদ্ধের দেবতা ছিলেন আরাস, প্রেমের দেবী ছিলেন এ্যাপ্রোডাইট, সূর্যের দেবতা ছিলেন এ্যাপোলো, জ্ঞান ও বায়ুর দেবী ছিলেন চিরকুমারী এথেনা ইত্যাদি। গ্রিকদের রাষ্ট্রচিন্তাকে বিশেষভাবে আলোকিত ও প্রভাবিত করেছে ডেলফির বাণী। তাদের নীতিবোধ, চিন্তা ও কর্মের বিকাশ অনুপ্রাণিত করেছে ডেলফির দৈবজ্ঞ অ্যাপোলোর বাণী। এ ছাড়া ডেলফির বাণী তাদের মিতাচার, সহিষ্ণুতা, শাসন ও আইন সংস্কারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তারা বিশ্বাস করতো যে, দেব-দেবীরা মানবসমাজের জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। তাই তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রকার সমস্যা সমাধানের জন্য দেব-দেবীর উপাসনা করতো। তাদের আরো বিশ্বাস ছিল, দেব-দেবীরা বিশ্বের স্রষ্টা ও শাসক, শুভ-অশুভ সবকিছুই দেব-দেবীর ইঙ্গিতে হয়ে থাকে। তারা দেব-দেবীর সম্মানে প্রতি বছর ক্রীড়া অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতো। তবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো পুরোহিততন্ত্রের কথা জানা যায় না।

সামগ্রিকভাবে গ্রিসের, বিশেষ করে এথেন্সের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় উত্থান-পতনের মধ্যে খ্রস্টপূর্ব ৪৬৯ অব্দে সক্রেটিসের জন্ম। তিনি ছিলেন প্যাগান দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে সদগুণসম্পন্ন ও আলোকিত ব্যক্তিত্ব। জন্মসূত্রে তিনি এথেন্সের নাগরিক ও অ্যালোপেকি শহরের অধিবাসী। সক্রেটিসের জন্মসময়কে এভাবে উল্লেখ করা হয় : কনফুসিয়াসের (সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১-৪৭৯ পর্যন্ত। তিনি ছিলেন চিনের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাঁর চৈনিক নাম কাং ফু জি এবং ল্যাটিন নাম কনফুসিয়াস। একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কনফুসিয়াস শস্যগোলার পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং নিজের মেধা ও অধ্যবসায়ের দ্বারা মন্ত্রীত্ব পদে উন্নীত হন। কিন্তু অচিরেই তিনি নিজের জীবন-পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দর্শন, ধর্ম, নৈতিকতা, শিক্ষা, সমাজজীবন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন এবং নিজস্ব মতবাদ গড়ে তোলেন আর শিষ্যদের নিয়ে তা প্রচারে ব্রতী হন। তাঁর দার্শনিক প্রভাব আজো বিদ্যমান। তার জন্মের দশ বছর পর, ৭৭তম অলিম্পিয়াডের চতুর্থ বছর প্রাচীন গ্রিসে পরপর দুটি অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান হয় (মধ্যবর্তী ব্যবধান ছিল চার বছর। খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দ থেকে ৩৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গ্রিকবাসী অলিম্পিয়াড ধরে সময়ের হিসেব করতো। একটি অলিম্পিয়াডকে একক ধরে তার প্রথম থেকে চতুর্থ বছর পর্যন্ত হিসেব করা হতো।) সেই সঙ্গে থারগেলিয়ন (এথেন্সের উৎসবসমূহের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব) উৎসবটি আর্টেমিসের জন্মদিন উপলক্ষে পালন করা হয়। তাঁরা যথাক্রমে থারগেলিয়ন মাসের ৬ষ্ঠ ও ৭ম দিবসে জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমান দিনপঞ্জি অনুযায়ী ২৪মে এবং ২৫মে বলে মনে করা হয়। পূর্ব প্রথা অনুযায়ী এই দিনটিতে এথেন্স শহরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধকরণ করা হয়।

সক্রেটিসের জীবন, কর্ম ও দর্শন সম্পর্কে আমরা বর্তমানে তিন ধরনের ভাষ্য পাই :

১. এরিস্টোফ্যানিস কর্তৃক রচিত The Clouds নাটকে;
২. জেনোফোন কর্তৃক রচিত Memorablilia নামক গ্রন্থে; এবং
৩. প্লেটো কর্তৃক রচিত The Republic-সহ তাঁর বিভিন্ন সংলাপে।

এরিস্টোফেনিস ছিলেন গ্রিক কমেডি সম্রাট এবং জেনোফোন ও প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের শিষ্য বা ছাত্র। পণ্ডিতদের মতে, প্লেটো বর্ণিত সক্রেটিসই সবচেয়ে ঐতিহাসিক, আকর্ষণীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তব। এথেন্সের স্বর্ণযুগে সক্রেটিসের জন্ম। তিনি মধ্যবিত্ত এথেনীয় নাগরিক। তাঁর পিতার নাম সফ্রোনিস্কস্, মাতার নাম ফেনারিটি এবং স্ত্রীর নাম জানথাপি। জানথাপির গর্ভে সক্রেটিসের ঔরসজাত একমাত্র পুত্রের নাম ল্যাম্প্রোক্লিস। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সক্রেটিস মায়ারতো নামে এক ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেন এবং এই স্ত্রীর গর্ভে সফ্রোনিস্কস্ (সক্রেটিসের পিতার নামের অনুরূপ) ও মিনিক্সিনস নামে দুই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। একথা বিশ্বাসযোগ্য মনে করার কারণ হচ্ছে, পেলোপোনেসীয় যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করে, ফলে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এথেন্সের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এথেনীয় সরকার একটি অর্ডিন্যান্স পাশ করে। এ সময় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলে অনেক ঐতিহাসিকেরা অভিমত ব্যক্ত করেন। মনে হয় সক্রেটিস একটু বেশি বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। কারণ ৭০ বছর বয়সে যখন তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তখন তাঁর বড় সন্তান একবারেই বালক, অন্য দুই সন্তান নিতান্তই শিশু, এবং ছোট সন্তান নবজাতক।

পৈত্রিক দিক থেকে তাঁরা ছিলেন বনেদি ডেইডালস বংশের উত্তরাধিকারী এবং অ্যালোপেকি গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ভুক্ত। সক্রেটিসের শারীরিক অবয়ব নিয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায় : তাঁর ছিল টাক-বিশিষ্ট মাথা, ক্ষুদ্র চোখ, চ্যাপ্টা ও অবনত নাসিকা, স্ফীত উদর, বেঁটে, মোটা এবং চলাফেরা ছিল অস্বাভাবিক প্রকৃতির। তিনি ছিলেন ‘স্যাটারিক নাটকের সকল মাইলেনাসেসদের অপেক্ষা কুৎসিত’। তিনি সব সময় ময়লা ও পুরাতন পোশাক-পরিচ্ছদ পরতেন এবং খালি পায়ে সব জায়গায় যেতেন। শীত-গ্রীষ্ম-ক্ষুধা-তৃষ্ণার প্রতি তাঁর উদাসীনতা ছিল লক্ষ করবার মতো।

সক্রেটিসের পিতার আর্থিক অবস্থা কিন্তু খুব একটা অসচ্ছল ছিল না। তাঁর পিতা ছিলেন ভাস্কর, মা ছিলেন ধাত্রী। স্ত্রীর পেশা সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও একথা সকলেই স্বীকার করেন তিনি অত্যন্ত সুচতুর, ঝগড়াটে ও বদমেজাজি ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল এবং পারিবারিক জীবনও সহজ-সরল-স্বাভাবিক ছিল।

পূর্বের তুলনায় বর্তমান জগতে অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে সক্রেটিসের বাল্য-কৈশর-যৌবন-প্রৌঢ় ইত্যাদি জীবনপর্যায় সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সক্রেটিসের পিতার নিকট একবার এক দৈববাণী আসে যে, তিনি যেন তাঁর পুত্রের শিক্ষার ব্যাপারে জোরপূর্বক কোনো কিছু চাপিয়ে না দেন, পুত্র আপন মনে স্বাধীনভাবেই তাঁর পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষালাভ করবে। অন্য এক তথ্য অনুযায়ী ইউরিপাইডিস (গ্রিক নাট্যকার) নামে জনৈক ব্যক্তি সক্রেটিসকে গ্রিক দার্শনিক হিরাক্লিটাসের (প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক হিরাক্লিটাসের মতানুসারে, পরিবর্তন জগতের আদিসত্তা) একটি গ্রন্থ পড়তে দিয়ে তাঁর অভিমত জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। উত্তরে সক্রেটিস বলেন : ‘আমি গ্রন্থের যে অংশটুকু বুঝতে পেরেছি তা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, কিন্তু যে অংশটুকু বুঝতে পারিনি তার মর্মার্থ বোঝার জন্য একজন বিজ্ঞব্যক্তির প্রয়োজন হবে।’ প্লেটো তাঁর পারমেনাইডিস গ্রন্থে উল্লেখ করেন, সক্রেটিস যুবা বয়সে গ্রিক দার্শনিক জেনোর (জেনো গতির কথা অস্বীকার করেন) কথা জানতে পেরে তাঁর গ্রন্থ পাঠ করেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে ও পারমেনাইডিসের (পারমেনাইডিস স্থায়িত্বকে জগতের আদিসত্তা বলে উল্লেখ করেন) সঙ্গে জগৎ-জীবন বিষয়ক আলাপ-আলোচনা করেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-অলোচনা করে সক্রেটিস ‘প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি’ সম্পর্কে জানতে পারেন। প্লেটোর ‘মেনো’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিনি শব্দ-বিশেষজ্ঞ প্রোডিকাসের নিকট শব্দ বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। প্রোডিকাস সে সময় একটি কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য ৫০ ড্রকমা ফি নিতেন। কিন্তু সক্রেটিসের ওই পরিমাণ অর্থ না থাকার কারণে এক ড্রকমার কোর্সে পড়া বন্ধ করে দেন। প্লেটোর ‘সিম্পোজিয়াম’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিনি ম্যানটিনেইয়ারের নিকট থেকে মরমিবাদ এবং আসপাশিয়ার নিকট থেকে অলংকারশাস্ত্র এবং কোননুসের নিকট থেকে সংগীত শিক্ষালাভ করেন।

সক্রেটিস যৌবনেই সোফিস্টদের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন এবং প্রোটাগোরাস, হিপ্পিয়াস, প্রোডিকাস এবং জর্জিয়াসের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ছাড়াও জানা যায়, তিনি তৎকালীন তিনজন প্রধান দার্শনিকের নিকট শিক্ষালাভ করেন : এনাক্সেগোরাস (তাঁর মতে সূর্য আগ্নেয় প্রস্তরখণ্ড এবং চন্দ্র মাটি দিয়ে তৈরি এবং মন সমস্ত গতির উৎস), ড্যামন (উদারনৈতিক দার্শনিক) এবং আর্চেলস (প্রকৃতিবাদী দার্শনিক)। আর্চেলস ছিলেন এনাক্সেগোরাসের ছাত্র এবং তিনি সর্বপ্রথম এথেন্সে প্রকৃতিবাদী দর্শনের ধারা নিয়ে আসেন। একজন পদার্থজ্ঞিানী হওয়া সত্ত্বেও আর্চেলস আইন, শুভ-অশুভ, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি জীবনমুখী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সক্রেটিস প্রকৃতিদর্শন ও প্রকৃতিবিজ্ঞান ভালোভাবেই চর্চা এবং আয়ত্ত করেছিলেন। পরবর্তীকালে নানা কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি এসব বিষয়ের চর্চা বন্ধ করে দেন।

সেকালের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে, যেমন পেরিক্লিস (পেরিক্লিসের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৬১-৪২৯। তাঁর সময়ে এথেন্সের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এথেন্স সমৃদ্ধির উচ্চশিখরে পৌঁছায় এবং গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। মুক্তচিন্তা, স্বাধীন মনোভাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং বিকাশে তিনি সহায়কশক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।), ইস্কাইলাস (তাঁর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫-৪৫৬। গ্রিক ট্রাজিডির জনক ছিলেন ইস্কাইলাস। তিনি পারসিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি নাট্যকার হিসেবে আবির্ভূত হন। এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।), সফোক্লিস (তাঁর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৬-৪০৬। তিনি চিরায়ত গ্রিক সাহিত্যের অন্যতম ট্রাজেডিকার। অতি অল্প বয়সেই তিনি ক্রীড়া, সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য ও অভিনয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। সাহিত্য সমালোচনার ইতিহাসে ইউরিপাইডিস, সফোক্লিস এবং ইস্কাইলাসকে ‘ত্রয়ী’ হিসেবে খ্যাতিমান। সফোক্লিস ছিলেন এই ‘ত্রয়ী’র দ্বিতীয় প্রধান। সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেন। এথেন্সের সামোস অভিযানে দশজন সেনাপতির মধ্যে তিনি অন্যতম সেনাপতি মনোনীত হন। তাঁর বিখ্যাত ট্রাজেডি ইডিপাস।), ইউরিপাইডিস (তাঁর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৮০-৪০৬। তিনি অন্যতম গ্রিক ট্রাজেডিকার। তিনি অ্যানাক্সেরগোরাস ও সক্রেটিসের সাহায্য লাভ করেন এবং সোফিস্ট দার্শনিক প্রোটাগোরাস ও প্রোডিকাসের নিকট শিক্ষালাভ করেন। প্রথম জীবনে রাজনীতি শুরু করলেও পরবর্তীকালে নাটক রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হচ্ছে হেলেন, ট্রোজান উইমেন। করুণরস সৃষ্টিতে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। মহৎভাবের তুলনায় তিনি জাগতিক জ্ঞানকে তাঁর নাটকে প্রাধান্য দিয়েছেন।) প্রমুখের সঙ্গে পরিচয় হয়।

যৌবনে সক্রেটিস সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি তিনটি সামরিক অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন : খ্রিস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে পোটেইভিয়ার সামরিক অভিযানে, খ্রিস্টপূর্ব ৪২৪ অব্দে ডেলিয়ন সামরিক অভিযানে, এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪২২ অব্দে অ্যাম্পিপোলিসের সামরিক অভিযানে। এসব সামরিক অভিযান ব্যতীত তিনি একবার একটি উৎসবে যোগদানের জন্য এথেন্সের বাইরে যান। এছাড়া তিনি সারাজীবন এথেন্সের মাটি ও মানুষের সঙ্গেই কাটিয়েছেন।

সক্রেটিস ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী, সংযমী, ধৈর্যশীল, কষ্টসহিষ্ণু এবং কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর জীবনে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে যা থেকে তাঁর চরিত্রের গুণাবলি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এক সামরিক অভিযানে তাঁর এক সহযোদ্ধা হঠাৎ ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলে তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে তাকে কাঁধে তুলে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গিয়ে জীবনরক্ষা করেন। অন্য আরেকটি সামরিক অভিযানে এথেনীয় বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় জেনে যখন পিছু হটছিল তখন সক্রেটিস একাই বীরের মতো যুদ্ধ করে শত্রুদের মোকাবেলা করেন। সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার সময় এবং সামরিক অভিযানে তাঁর ধৈর্য ও বীরত্বের ঘটনা তাঁর সহযোদ্ধারা এভাবে বর্ণনা করেছেন :

একদিন সকালে তিনি কোনো একটা কিছু নিয়ে চিন্তা করছিলেন কিন্তু সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ওই বিষয়ের সমাধানের আশা পরিত্যাগ না করে তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে চিন্তা করতেই থাকেন এবং চিন্তামগ্ন অবস্থায় সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুপুরের দিকে সকলেরই এটা দৃষ্টিগোচর হয় এবং মানুষজনের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সকাল থেকে সক্রেটিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী একটা বিষয় নিয়ে যেন চিন্তা করছেন। শেষে সন্ধ্যায় নৈশভোজের পর কৌতূহলবশত কয়েকজন আইওনিয়বাসী মাদুর নিয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থেকে লক্ষ করতে থাকেন, সত্যিই তিনি সারারাত দাঁড়িয়ে থাকেন কি না। কিন্তু দেখা গেল তিনি ওই একই স্থানে পরদিন সকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং সকালে সূর্য ওঠার পর তিনি সূর্যের নিকট প্রার্থনা করে স্থান ত্যাগ করলেন (সূত্র : ড. প্রদীপ রায় অনূদিত ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস [প্রাচীন ও ক্যাথলিক দর্শন : নির্বাচিত অংশ], অবসর, ঢাকা, ২০০০, পৃ. ৮৮-৮৯)।

আলকিবিয়াডেস নামের এক সহযোদ্ধা সক্রেটিসের আত্মপ্রত্যয় ও সহনশীলতাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন :

এক কথায় তাঁর সহ্যক্ষমতা ছিল বিস্ময়কর। সামরিক সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন আমরা উপবাস করতে বাধ্য হই – যুদ্ধকালে প্রায়ই এরকম ঘটনা ঘটে থাকে – তখন তিনি শুধু আমাকে কেন, সকলকেই সহিষ্ণুতার পরীক্ষায় অতিক্রম করতে সহায়তা করেন। বস্তুত এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন তুলনাহীন একজন মানুষ।… ঠান্ডা সহ্য করবার ক্ষমতাও তাঁর ছিল অসাধারণ। একবার প্রচণ্ড তুষারপাত হয়। শীতের প্রকোপ ছিল সত্যিই মারাত্মক। প্রত্যেকে হয় গৃহবন্দি থাকতেন, না হয় প্রচুর গরম পোশাক পরে বাইরে যেতেন, সেই সঙ্গে আবশ্যিকভাবে প্রত্যেকের পায়ে থাকত জুতা, ফেল্ট আর পশমি কাপড় দিয়ে পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকত। কিন্তু এরকম প্রচণ্ড তুষারপাতের মধ্যেও সক্রেটিস বরফের উপর খালি পায়ে আর সাধারণ পোশাকে জুতা পরা অন্য সৈনিকদের চেয়ে ভালো কুচকাওয়াজ করতে পারতেন। এতে অন্যেরা তাঁকে ঘৃণা ও বিদ্বেষের চোখে দেখতেন। কারণ, তারা মনে করতেন তিনি তাদের অবজ্ঞা করছেন। (পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৯)

প্রদীপ রায়

প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। বার্ট্রান্ড রাসেলের History of Western Philosphy-সহ দর্শনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের অনুবাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    X