গদ্য

শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা | বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় | গদ্য

কবি শ্যামলকান্তি দাশের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে এই লেখা

‘এই আনন্দ দেখব বলেই মরপৃথিবীতে আমরা কত বছর জ্যান্ত হয়ে আছি’
– শ্যামলকান্তি দাশ

কবিতার কারুকৃতি জুড়ে ঘরবাড়ি গড়ে ওঠে শব্দ আর অনুভবের এক মায়াবী স্থাপত্যে। একটার পর একটা লাইন পেরিয়ে আমরা কবির বাড়ির দিকে যাই। যেখানে ছায়া ছায়া ধানখেত, ‘নবীন ধানের গান মেঘে জলে কত কী ফোয়ারা’। স্বপ্নচোর নিশি পাওয়া ভূতের মতন দাঁড়িয়ে থাকে সন্ধ্যায় নদীকূলে। এসব শব্দহীন অথচ নন্দিত ধ্বনি প্রতিধ্বনির ভেতর হাঁটতে হাঁটতে আমরা দেখি জাগতিক এবং স্যুররিয়াল দৃশ্যের শর্তময় ওঠানামা এবং এই দৃশ্যের নিয়তির ভেতর আমরা দেখতে পাই বাড়ি, যেখানে :

বাবাও আমার মতো চুপচাপ, আমিও বাবার মতো স্থির।
দুজনেই ভদ্রলোক, কমবেশি ঢ্যাঙা ও বাঁটুল।
বাবা ও আমার কোনও পাখা নেই, পাখসাট নেই।
অপূর্ব শরৎকাল, গ্রামের নিকষ পথে দুজনেরই সাইকেল
বহুদূর যায়।

(দুজনেই রবিবাবু, দুজনেই অতুলপ্রসাদ)

সাইকেলের শব্দ শুনতে পাই আমরা। কিছুটা প্রত্যক্ষ,কিছুটা অপ্রত্যক্ষ এই চলচল। যাদের অনুশীলন আছে শব্দের ভেতর যারা ভাসিয়ে দিতে পারেন নিজস্ব চোখ,তাঁরা তাঁদের মানসপথে দেখতে পাবেন অক্ষরের ভেতর দিয়ে স্পষ্ট আদল তৈরি হয় এই চলাচলের। কেউ কেউ সেই দৃশ্য দেখতে পান অনায়াসেই। এই যেমন এখন ভেসে উঠছে

একটা ভাঙা নড়বড়ে সেতুর উপর দাঁড়িয়ে আছি।
নীচে জল যাচ্ছে।কানা দামোদর যাচ্ছে।কালের ধ্বনি যাচ্ছে।
আকাশে একটু একটু কালো রঙের চাঁদনি ফুটছে,
আর সেই কখন থেকে নিম গাছের হাওয়া দিচ্ছে। ফুরফুর! ফুরফুর!
কেউ কবিতার মতো বলছে হাওয়া স্পর্শ করো!

(রথের চাকা)

এই হাওয়া স্পর্শ করার ক্ষমতা যাদের আছে তারাই পৌঁছে যেতে পারেন সেই বাড়ির কাছে। দিগন্তের ওপারে সেই বাড়িটি কেমন।এই পৃথিবীর আলো হাওয়ায় কেমন লাগে সেই বাড়ির বস্তুরহস্য। শব্দের ওঠানামায় তার অফুরান স্বাদ লেগে থাকে আমাদের অনুভবে। আমরা দেখি কাকচঞ্চু পুষ্করিণীর গাঁ ছুঁয়ে গাছের বেড়ে ওঠা, তার ডালে অপর্যাপ্ত পাখির সমাবেশ। আমরা সম্মোহনের ভেতর দিয়ে এই কবিতার কাছে আসি। কবি শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা এরকমই স্বতঃস্ফূর্ত কারুকাজে গ্রাম এবং শহরের মাঝখান দিয়ে এক সৃষ্টিছাড়া রাস্তা বানিয়ে নেয়। তাঁর কবিতায় প্রতীকের সম্পন্ন ব্যবহার আমাদের বোধ এবং পাঠাভিজ্ঞতাকে তুমুল উদ্দীপিত করে।

তুমি তো জানো যে পল্লিগ্রাম থেকে বেশ খানিকটা দূরে
এক শহরতলিতে আমার বসবাস।
আমি আর সেখান ছেড়ে কোথাও যাব না।
সেখানে আমি ভিজে মাটিতে গাছ পুঁতেছি।
ডালে পাতায় লাগিয়েছি অপর্যাপ্ত পাখি।
আমার মনের গহনে যে কাকচঞ্চু পুষ্করিণী, সেখানে রাজহাঁসের ডিম
সাদাশুভ্রতায় জল ঝরিয়ে দেয়।

(দিগন্তের ওপারে)

‘বাঘ ও প্রতিভা’ সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ৬৪ পাতা জুড়ে কবিতার যে বিচ্ছুরণ আমরা দেখি দেখি প্রীতি ও সমবেদনার ভেতর থেকে উদ্ভাসিত শব্দের এক অনুপম কুটিরশিল্প। নিজেকে নিংড়ে সেই নির্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে শব্দের শরীর

আমার প্রতিদিনের অপমান
দরজায় আড়ালে আমার চোখের জল
পিঠের লম্বালম্বি কালশিটে
অনেকদূর অব্দি আমার পালিয়ে যাওয়া
সব তুমি একটি একটি করে টুকে রেখেছ।

(দেখা)

শূন্য রাত্রির ভেতর আমরা পড়ি সেই তারানক্ষত্র। পড়ি সেই বনমালীপুর নামের একটি দেশ। ‘জলভরা আনন্দের পাশ দিয়ে’ যেখানে নৌকা ছাড়া আর কিছুই মানায় না। সেখানে দেওয়ালে মুখ চেপে প্রভাকরবাবুকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখি আমরা। তাঁর শান্ত কাদামনের ভেতর থেকে ব্যাঘ্রপ্রতিভার উন্মোচন আমাদের ভাবনাকে দুরপ্রসারী করে তোলে। ব্যক্তিমানুষের ভেতরের যে অবচ্ছায়া, যে ব্যবধান, একক মানুষের অন্তঃস্থলে বিভিন্ন সত্তার যে সমীকরণ, সেই গভীর মর্মলোকের উপর আলোকসম্পাত করে শ্যামলকান্তির কবিতা। শুধু কি ব্যক্তির খণ্ডিত জীবন? শুধু কি ব্যক্তির প্রলম্বিত ব্যবধান? ব্যক্তি ও নিসর্গের আত্মকথনের ভেতর থেকে দূরত্বমোচনের নিরন্তর প্রয়াসই তাঁর কবিতার প্রাণবস্তু। প্রকৃতির ভেতর জড়বস্তুর ভেতর এমনকি দৃশ্যাতীত কল্পনার ভেতর প্রাণের প্রবাহকে লিপিবদ্ধ করেন তিনি :

পাহাড়ের ওপার থেকে মা ডাকছে।
একশো দুশো বছরের পুরনো খনখনে ডাক।
কান্নার ভিতর গলে গেল।
হুড়মুড় করে শৈলচুড়া গড়িয়ে পড়ল।

(ছোট বরফ বড় বরফ)

কবি শ্যামলকান্তি দাশের কবিতার এই সজীব উচ্চারণ কবিতার চারপাশে গড়ে তোলে অপরিহার্য আবহ। তাঁর বাচনিক কৌশল স্পর্শ করে আমাদের চেতনার রন্ধ্রপথ। আমরা দেখি শব্দের ভেতর থেকে কী অনায়াসে তিনি তুলে আনেন কবিতার যৌনশরীর :

তুমি আমাকে শরীর লিখতে বললে – লিখলাম
কাগজ দেহমন্দিরের আকার নিল।
জল লিখতে বললে-দু’চার ফোঁটা লিখলাম।
পদ্মপাতায় টলটল করতে লাগল দিবাবসানের হাসি

(যখন লিখেছিলাম)

পদ্মপাতার উপর এই হাসি যেহেতু অস্থায়ী তাই এত সুন্দর। যা স্বল্পকালীন এবং প্রতিমুহূর্তে যেখানে হারানোর ভয়, অপ্রাপ্তির ভয় তাকেই আঁকড়ে থাকতে চায় মানুষ। রূপকথা যাকে আপাত অলীক মনে হয় আজকের বস্তু পৃথিবীতে, এই মায়া সাম্রাজ্যের শিহরণ কিন্তু বেঁচে থাকে আমাদের মনে, আমাদের সত্তার গভীরে। তাই রূপকথার রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরতে হয় সকলকেই। সেখানে রাক্ষসের সাথে কথা হয়, দস্যুর সাথে কথা হয়। তখন মনে হয় এই রহস্যজগতের ভেতর লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের ঘাম লাগা জীবন :

রাক্ষসের সঙ্গে কথা হয়। দস্যুর সঙ্গে
কথা হয়। এমন কী সংসারে ব্রাহ্মণীর সঙ্গেও।
একবার দুবার অন্ধকারে চোখাচোখি।
শুধু তোমার সঙ্গেই কোন কথা হয় না। কথা বলতে গেলে
কেবলই পিছলে যাও। বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে।

(রাজকন্যা)

এই রাজকন্যা আমাদের রূপকথার জগত আলো করে। বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে। বিদ্যুতের আলো নিভে গেলে যখন আমরা এসে দাঁড়াই সেই পরিচিত নারীটির কাছে :

রাজকন্যা, বুক ঢিপঢিপ করে আমার। আমি অপলকে
তোমার অপূর্ব ভেঙে যাওয়া দেখতে থাকি।

(রাজকন্যা)

এই মায়াজগতের ভেতর থেকে কবি শ্যামলকান্তি দাশ খুঁজে ফেরেন তার জলমাটি, নদীমাতৃক দেশ। চকলালপুরের রাঙা রাস্তা ছুঁয়ে জলপথ পেরিয়ে রূপকথার রাস্তা ধরে তিনি প্রতিদিন হাঁটতে থাকেন। সেই পাখিটিকে দেখতে পান অমল শৈশবের গায়ে যার পালকের বন্ধুতা লেগে আছে :

পাখি বলছে তুমি নেই, তুমি নেই
কৃষ্ণ হয়ে কোথায় পালিয়ে গেছ।
হেমন্তের পাকাধানে গড়াগড়ি খাচ্ছে
তোমার শিখীপাখা
সুদূর ফলসা গাছের ডালে ডালে
দিনভর তোমার ছায়া দুলছে,
গেঁহুখেতের ঘন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে
সোনার আড়বাঁশি।

(অদৃশ্য)

সোনার আড়বাঁশিতে বেজে ওঠে গানের আকুলতা। তাই গভীর সন্তরণের মধ্য দিয়ে উপলব্ধির সার্বিক আয়তনকে তুলে আনবার চেষ্টা করেছেন কবি শ্যামলকান্তি দাশ। তিনি প্রকাশ করেছেন সামগ্রিক জীবন, নিরবচ্ছিন্ন জীবন, যা শুধুমাত্র বর্তমানের ভাসমান সত্তার উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে না। স্মৃতির বিচিত্র কর্ষণ, প্রবাহিত চিন্তাধারার যথার্থ উত্থাপন এবং শব্দের সজীবতায় তা হয়ে ওঠে চিরকালীন। ব্যক্তিগত হয়েও ব্যক্তিনিরপেক্ষ। সত্তার স্বরবর্ণ পেরিয়ে তা অপরতার ব্যঞ্জনবর্ণে রূপান্তরিত হয়। দৃশ্য এবং অদৃশ্য পরিসরের মিথস্ক্রিয়া থেকেই জেগে ওঠে তাঁর মর্মস্পর্শী উচ্চারণ :

মাকে যেদিন শেষ দেখলাম
মা সেদিন খুব কাঁদছে।
চোখের জলে ভারী হয়ে উঠছে কলতলা।
বললাম, মা তোমার কান্না খুব দামি,
যেখানে সেখানে ফেলতে নেই।
গৃহস্থের অকল্যাণ, কান্নারও অপচয়।
ফুলো ফুলো চোখে মা একবার
আকাশভরা চোখে আমার দিকে তাকাল,
তারপর কাঁদতে কাঁদতে এমন একখানা লম্বা হাসি দিল,
মুহূর্তে শূন্য হয়ে গেল পুরো একটা ফুলের বাগান।

(হাসিকান্না)

খুব সহজ উচ্চারণে প্রাণের অন্তর্দেশ থেকে অনুভূতির মণিমুক্তা তুলে আনেন কবি শ্যামলকান্তি দাশ। ‘চোখের জলে ভারী হয়ে উঠছে কলতলা’ কী অপূর্ব শাব্দিক মুন্সিয়ানা। এক চিরকালীন মা এবং কলতলার শাশ্বত ছবি উঠে এসেছে শব্দের অনুষঙ্গে। দুই-ই যেন সমার্থক হয়ে গেছে একবিন্দুতে। জল এখানে জীবন ও বেদনার দ্বিঘাত সমীকরণ, তৃষ্ণা নিবারক এবং সর্বংসহা। অবিকল মায়ের মতো যে তৃষ্ণায় উগরে দেয় বুকের তরল। কবিতা লেখার জন্য জল লাগে। অনুভব নিংড়ে বেরিয়ে আসে লবনাক্ত জল। শূন্যের ভেতর থেকেই হাসিকান্না এবং সৌন্দর্যবোধকে কীভাবে নির্মাণ করতে হয় জলরঙে শ্যামলকান্তির নির্মাণভঙ্গিতে তারই বিনম্র প্রকাশ।


সাজিয়ে দিয়েছি নরম গলা ভাত,
ভাতের মণ্ড ( মা তুমি খাও)


মরে যাওয়ার পর আমাকে একটা
ঠাণ্ডা দিও, আর দিও ঠাণ্ডা ভুলে
যাওয়ার জন্য একটা সহস্রচক্ষু আগুন…
(স্বপ্নসম্ভব)


বাড়ির প্রাকার ঘেঁষে খালবিল
শত শত সওদাগর আসে।
কী বলব তোমাকে মাগো, ছেলের কীর্তির কথা,
স্থলে জলে সব লেখা আছে
(কীর্তি)


স্বপ্নের শেষ রাখতে নেই (স্বপ্নদোষ)

মানুষ জানতে চায় আমাদের জেগে ওঠা,পড়ে যাওয়া, জ্ঞানের খবর
(আমাদের কত বই)

আমাদের জেগে ওঠা আমাদের আত্মসচেতনতা এতটাই প্রকট হয়ে উঠছে যে আমরা ক্রমেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। এই পৃথিবীর ভোগদখলের স্বত্ব নিয়ে অবলুপ্ত করে চলেছি প্রাণী বৈচিত্রের পিরামিড। ইতিহাসের পাতাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে এই মরপৃথিবীতে আমরাই ধ্বংস করে যাচ্ছি আমাদের গৌরবময় অতীত। ছিঁড়ে ফেলছি যাবতীয় ঐতিহ্য। শেকড়চ্যুত সেইসব মানুষের মূলোচ্ছেদের ধারাবাহিক স্পৃহা কীভাবে আমাদের চেতনাকেই ক্ষতবিক্ষত করছে ‘ডাইনোসরের অমর কাহিনি’ তারই কাব্যিক মানচিত্র। কবি যথার্থই বলেছেন :

‘এই আনন্দ দেখব বলেই মরপৃথিবীতে
আমরা কত বছর জ্যান্ত হয়ে আছি

(মানুষ)

আত্মকেন্দ্রিক জীবনের উল্লাস দেখার জন্যই মানুষের সভ্যতা বেঁচে আছে। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ এবং ব্যক্তিমানুষের বিচ্ছিন্নতা ক্রমেই সমার্থক হয়ে পড়ছে। মানুষ যেন সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারই প্রতাপের বিজয়কাহিনি। বহুতল আবাসন মাটি থেকে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করছে আমাদের দৈনিক সংস্পর্শ। অন্য কারোর নয় শুধু সভ্যতাগর্বী মানুষের ভোগবাদী লালসা গ্রাস করে নিচ্ছে আদিগন্ত পৃথিবীর অধিকার। এর ফল স্বরূপ ডাইনোসরের মতন বিলুপ্ত হতে চলেছে দুনিয়ার প্রাণিসম্পদ :

মাটি যেখানে শেষ আমি একটা আবাসন বানালাম।
আবাসনের নাক খানিকটা উঁচু,
মাথা খানিকটা দোলায়মান,
চোখগুলো ঘোলাটে হলে কী হবে,আঁখির মতো আয়ত।
গাছের শেষে আমি আরও একটা গাছ লাগালাম।

(দিনপঞ্জি)

নিজের লিপ্সাকে চরিতার্থ করার জন্য আকাশের নীচে আমরাই বিস্তার করে রেখেছি লালসার জাল। কবি শ্যামলকান্তি দাশ জীবনের নিবিড়তা এবং অস্তিত্বের জিজ্ঞাসাকে যেভাবে প্রণালীবদ্ধ করেছেন তাঁর কাব্যিক বীক্ষণে তা আমাদের সচকিত করে, সতর্ক করে :


আমরা তার অসহনীয় মিলন শুনব বলে
অনেকক্ষণ ধরে আকাশের নীচে জাল ছড়িয়ে রেখেছি
(সে কাঁদছে, সে হাসছে )


এতদিন পর মানুষের এত রহস্য, এত ঘোঁট পাকানো
তার একটুও সহ্য হয় না।
ডাইনোসর আবার জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
(একা একা )


ওগো নগ্নতা, ওগো সত্যিকারের নগ্নতা
তীরধনু নিয়ে মহাসড়কের দিকে
ধেয়ে যাচ্ছি (অতিক্রম )


আমরা তাকে দরজা দিতে পারিনি, জানলা দিতে পারিনি
কিন্তু ভবিষ্যৎ রচনার জন্য
অনেকখানি চাঁদের আলো দিয়েছিলাম।
(একা একা)


তোমার কপালে চাঁদের লেখা,
একলক্ষ বছর পরে দাক্ষিণাত্যের গ্রামে
তুমি অকস্মাৎ বেড়াতে এসেছ ডাইনোসর
(বেড়াতে এসেছে ডাইনোসর)

সভ্যতার এই সংকটই শেষকথা হতে পারে না, বরং তা থেকে পরিত্রাণের পথই হচ্ছে চিরন্তন সত্য। এই জগত আমরাই তৈরি করেছি আমাদের প্রয়োজনের সমবায়িক ভাবনা থেকে। কোন অস্থির ভবিষ্যতের ক্ষমতা নেই আমাদের হাহাকারের মধ্যে নিক্ষেপ করার, সে রাস্তা যত লম্বাই হোক। এক লক্ষ বছরের দীর্ঘ রাস্তা হলেও কপালের চাঁদের লেখা নিয়ে অতীতের দিকে ফিরে তাকাতেই হবে। ডাইনোসর মানে আমাদের ঐতিহ্যচেতনা যা অমর, যার বিনাশ নেই। প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ে লৌহনগরীর মাঝে আত্মঘাতী রাক্ষস দাঁড়িয়ে থাকলেও তার দৃষ্টিতে কোন ক্রুরতা নেই বরং তার চোখ ভর্তি আকাশ, সুন্দরের আবির উড়ছে। তার চোখ ফেরানো রয়েছে শেকড়ের দিকে, বাসভুমির দিকে।

হাহাকারের পথ টানা আর লম্বা,
খেজুরতলার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে
সরু আর দীর্ঘ –
মাঝে মাঝে গোধূলি, সুন্দরের আবির উড়ছে।
লৌহনগরীর এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে রাক্ষস,
তার চোখভর্তি আকাশ,
মাথাভর্তি সূর্যাস্ত,
সে অনেকখানি আনন্দ দিয়ে তোমাকে
আগের মতো দেখছে।

(রাস্তা)

অকাদেমি প্রাপ্তিতে অভিনন্দিত করছি কবি শ্যামলকান্তি দাশকে।

Leave feedback about this

  • Rating

PROS

+
Add Field

CONS

+
Add Field
X