গদ্য বিশেষ সংখ্যা

মঈনুসের গল্প | সৈয়দ কামরুল হাসান | আলোচনা |  উৎসব সংখ্যা ২০২৪

তীরন্দাজ উৎসব সংখ্যা ২০২৪ প্রকাশিত মঈনুস সুলতানের গল্পপাহাড়ে তাঁবু ও উবে যাওয়া খাসিয়া পুঞ্জি  নিয়ে সৈয়দ কামরুল হাসানের আলোচনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় মঈনুস সুলতান আমাদের বন্ধু ছিলো, তখন ও মূলত কবিতা লিখতো, ২/১টি গল্পও লিখেছিলো, কিন্তু মোটেও নয় কোন ভ্রমণ বিত্তান্ত! যতদূর মনে পড়ছে ওর আরেকটা সখ ছিলো – তা হলো রাতের পরিষ্কার আকাশে ফুটে থাকা তারকারাজি পর্যবেক্ষণ করা, অনেক নক্ষত্রের নাম ও অবস্থান জানা ছিলো ওর। কখনো আড্ডায় বেমক্কা সে-প্রসঙ্গ তুলে আকাশ-রাজ্যের নতুন নতুন খবর দিয়ে সে বন্ধুদের অবাক করে দিত। একদিন তো ও আর আমি ঠিক করেছিলাম সূর্যসেন হলের ছাদে উঠে সারারাত নভোমণ্ডল বিহার করবো; যদিও পরিকল্পনা মাফিক সে-কর্মসূচি আর বাস্তবায়িত হয়নি; তবে সে-রজনীর আকাশ বিহার যে একেবারে হয়নি সেকথা বলা যাবে না, হয়েছিলো বটে, অন্যভাবে। সেই দিনগুলোতে আমরা ছিলাম যাকে বলে ‘ঝাঁকের কই’। একদঙ্গল বিরক্ত তরুণ – প্রচলিত প্রথা ভেঙে বেরুতে চাইছে, কেউ কবিতা লিখছে, কেউ বা গল্প, নাটক লিখছে কেউ কেউ, কেউ আবার জড়িয়েছে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে।

ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বর ছিলো আমাদের অষ্টপ্রহরের ঠিকানা। সেই ‘ঝাঁকের কই’দের অনেকে ঝাঁকেই মিশে গেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠশেষে স্বৈরাচারী সরকারের কুক্ষীতে দেশ যখন লণ্ডভণ্ড আর চাকুরীর বাজারে অনিশ্চয়তা, তখন জীবিকার টানে কে কোনদিকে ছিটকে পড়েছি! কিন্তু সেদিনের বিরুদ্ধ স্রোত ঠেলে যারা বিশিষ্ট হয়ে উঠেছেন, তাদের একজন বন্ধু মঈনুস – আজকের পাঠকপ্রিয় ও গুণীজন আদৃত ভ্রমণ-কাহিনির লেখক মঈনুস সুলতান !

এতদিন পরও বন্ধুদের সেই দলটিকে হাকিম চত্বরের নিবিড় ছায়ায় আজো যেন স্পষ্টভাবে দেখি। তা, এখন যেন মনে হয় – মঈনুস সেদিনও কি একটু আলাদা ধরনের ছিলো না? সে ছিলো আমাদের সবার চেয়ে মাথায় ছাড়িয়ে, দীর্ঘবাহু, একহারা গড়নের আর ওর জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর আমাদের একলহমায় টেনে নিয়ে যেতো শ্রীহট্ট অঞ্চলে ওদের প্রীতমপাশা এস্টেটের বিলীয়মান জমিদারীর আভিজাত্যে। ওর সে-সময়কার কবিতায়ও উঁকিঝুঁকি মারতো নতুন ধরনের শব্দ কিংবা অনুষঙ্গ, যদিও একেবারে স্বতন্ত্র হয়ে উঠতে ঢের চর্চা তখনো বাকি ওর! মাঝেমধ্যে ওর খবর পেতাম নানান সূত্রে, সিলেটের একটা বেসরকারি সংস্থায় শিক্ষা ও গবেষণায় কাজ করতে করতে দেশের বাইরে গবেষণা ও কনসালটেনসি নিয়ে পাড়ি জমানো – এক বিদেশীনীর পাণিগ্রহণ, কন্যাসন্তান লাভ, প্রবাসে থিতু হওয়া (পিএইচডিও করেছে মঈনুস) – ইত্যাদি সংবাদ ধীরে ধীরে পেলাম। জীবনকে এর অপার , অবারিত, উন্মুক্ত অবয়বে পাওয়ার যে গভীর তৃষ্ণা মঈনুসের ছিল, দেশান্তরে ভ্রমণের পেশা সে-সুযোগ এনে দিয়েছিলো তাকে। তারই খানিকটা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার উদ্যোগ নিতে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে ভ্রমণকাহিনি লিখতে শুরু করে মঈনুস। ঠিক এ-রকম একটা উদ্যোগ নেবার মুখে মঈনুসের সঙ্গে আমার ই-মেইলে যোগাযোগ হলো, মঈনুস তখন পড়বার জন্য বেশ কয়েকটি ভ্রমণগদ্য আমার কাছে পাঠিয়ে দিলো – বললো, আমি কোথাও এগুলোর ধারাবাহিক প্রকাশের ব্যবস্থা করতে পারি কিনা! এসময় আবার কথাসাহিত্যিক হূমায়ুন আহমেদের অনুজ ’উন্মাদ’ পত্রিকার সম্পাদক স্বনামধন্য আহসান হাবীব একটি ভ্রমণ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন – মঈনুসের একটি গদ্য সেখানে ছাপতে দিলাম; প্রকাশও পেলো, কিন্তু চার কালারে ছাপা সেই ভ্রমণ পত্রিকাটি প্রকাশের পরই মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। তবে এর অল্পকালের মধ্যে মঈনুসের ভ্রমণগদ্য লাইমলাইটে চলে এলো ‘প্রথম আলো’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর। আরো পরে প্রথমা থেকে বই প্রকাশের পর পাঠকমহলে মঈনুস সুলতান দেশের একনম্বর ভ্রমণ লেখক হিসেবে স্থান করে নিলো। অচিরে পাঠক চাহিদার শীর্ষে পৌঁছালো ওর ভ্রমণ গদ্যের বই। এককালের কবি ও গল্পকার মঈনুস সুলতান দেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ লেখক হিসেবে পরিবর্তিত হলো !

মঈনুসের প্রধান প্রধান ভ্রমণ কাহিনির বেশিরভাগই আমার পড়া। মঈনুস যে বিপুল শ্রম ও চর্চার মধ্য দিয়ে তার একটা নিজস্ব ভাষা ও শৈলী তৈরি করে নিয়েছে, ওর ভ্রমণ-পুস্তকগুলি এর প্রত্যক্ষ স্মারক। শুধু ভাষা ও শৈলী নয়, এগুলোতে স্বকীয়তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে তার নিজস্ব শব্দভাণ্ডার। দারুণ দক্ষতায় এতে সে মিশিয়েছে ইতিহাসবোধ ও ভ্রমণ স্থানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ওদিকে আবার তার স্বভাবজ ‘উইট’/রসবোধ সেগুলোর পঠনসুখ ধরে রেখেছে। নিজে কবি হওয়ায় অনেক মোক্ষম উপমা ও চিত্রকল্প কাহিাসগুলোকে করে তুলেছে সজীব, চিত্ররূপময় ও সৃষ্টিশীল: বস্তুত ভাষার কারুকাজে সে ছবির পর ছবি এঁকেছে,ছবি আঁকায় সত্যি তার জুড়ি নাই। সন্দেহ নেই, তার রচিত অন্তত ২/১টি রসোত্তীর্ণ ভ্রমণ পুস্তক আমাদের সাহিত্যের সম্পদ হয়ে থাকবে। কে জানে একটু বাড়িয়ে বলা হবে কিনা, কিন্তু আমার তো মনে হয় সাম্প্রতিক কালে আমাদের এখানে ভ্রমণ সাহিত্যকে সাহিত্যের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার কৃতিত্ব অনেকখানি তারই প্রাপ্য।

২.

মঈনুস যে কবিতা ও গল্পও লিখে চলেছে সমানতালে, তার প্রমাণ রয়েছে এখানকার নানান পত্রপত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় এবং বিশেষ করে দেশে ও বিদেশে প্রকাশিত কোন কোন অনলাইনের পাতায় । ইতোমধ্যে তার বেশ কিছু কবিতা আমি পড়েছি, ২/১টি গল্পও পড়া হয়েছে। দু’দিন আগে তীরন্দাজ সম্পাদক কবি ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মাসুদ ভাই (মাসুদুজ্জামান) মঈনুসের সম্প্রতি রচিত একটি গল্প আমাকে পড়তে দিলেন। এই গল্পের নাম : ‘পাহাড়ে তাঁবু ও উপে যাওয়া খাসিয়া পুঞ্জি’। গল্পের প্রেক্ষাপট কুলাউড়ার খাসিয়া অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা। ককো নামে (যার ভালো নাম কৌশিক আহমেদ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী এক ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ তরুণ যার ছোটবেলা কাটে বনবিভাগের কর্মকর্তা বাবার চাকুরীর সুবাদে এই এলাকায়। এক ছুটিতে দেশে এসে একটা মাউন্টেন বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সেই তরুণ, তার সাধ হয়েছে মার্কিন মুল্লুকে যেমন বনে পাহাড়ে ক্যাম্পিং করেছে এখানেও খাসিয়াপুঞ্জির আশেপাশে তাঁবু খাটিয়ে একটা রাত কাটাবে। মটর সাইকেল নিয়ে চা বাগানগুলোতে হন্যে হয়ে তাঁবু খাটানোর জন্য লাগসই জায়গা খুঁজতে খুঁজতে রাত নেমে আসে। শেষে এক চা-বাগানের চৌকিদার তাকে অদূরবর্তী বিস্তীর্ণ এক রাবার বাগানের কথা বলে, যাতে সম্প্রতি আবাদ শুরু হয়েছে, যেখানে তাঁবু ফেলা যেতে পারে। সেদিকে বাইক নিয়ে এগুতে এগুতে শীঘ্রই ককো এক পরিচ্ছন্ন উঠোনে উপনীত হয় – লণ্ঠন নিয়ে বারান্দা থেকে উঠোনে নেমে এসে তাকে স্বাগত জানায় এক রূপসী খাসিয়া তরুণী (লারিসা), লেবুজলের শরবতে ককো আপ্যায়িত হয়, তরুণীর মুখনিঃসৃত বিশুদ্ধ ইংরেজিতে চমৎকৃত হয় ককো, বারান্দায় আধো-অন্ধকারে উপবিষ্ট সেই তরুণীর বৃদ্ধ পিতার সাথেও পরিচয় ঘটে । সেই ঘরের পেছনের উঠোনে তাঁবু ফেলে ককো। এবার বুঝি শুরু হলো তার সাধ মেটানোর পালা! ঘুমের আগে মার্কিন মুল্লুকে ক্যাম্পিং পার্টনার ইলোরার সাথে মধুর সঙ্গমের স্মৃতি কিছুক্ষণ উপভোগ করে সে, প্রতিতুলনায় একটু আগে পরিচিত হওয়া স্মার্ট খাসিয়া তরুণীর ‘গোলগাল রলি-পলি’ দেহটির কথা মনে আসে তার, ভাবে এখানে কদিন থাকা গেলে এ মেয়েটিকে ডেটিংয়ের জন্য ‘নক’ দিয়ে দেখা যেতো ! চমৎকার ঘুমে নির্ভাবনায় পার হয় রাত্রিটা, কিন্তু ঘুম থেকে জেগে অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য তাকে স্তম্ভিত করে – গত রাতের সেই খাসিয়া পল্লী ভোজবাজির মত যেন কোথাও মিলিয়ে গেছে। গত রাতের কিছুই যে নেই! চারদিকে গজিয়ে ওঠা ছোট ছোট রাবার চারার বিশাল বাগানে সে একাকী দাঁড়িয়ে থাকে। খানিক পর মাউন্টেন বাইক চালিয়ে দ্রুত সে রেলস্টেশনে চলে আসে। এখানে এসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই যাত্রায় দেশে-আসা পূর্ব পরিচিতা আরেক অনিন্দ্যসুন্দরী (ইলোরার সম্ভাব্য প্রতিস্থাপন!) যাত্রী টিয়ার সাথে দেখা হওয়ার পর রাতের রহস্যের জট খুলতে থাকে ককোর। উভয়ে সিলেটগামী ট্রেনে চড়ে বসেছে। টিয়া মূলত এক সমাজবিজ্ঞানী, গবেষক, তার গবেষণার বিষয় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর হাতে আদিবাসীদের বাস্তুভিটা উচ্ছেদ, বিতাড়ন, ধর্ষণ-নিপীড়ন, দখল। গত ক’দিন ধরে এখানকার খাসিয়া পল্লী উচ্ছেদের নির্মম কাহিনীর উপর ডাটা সংগ্রহ করেছে টিয়া। তা থেকে জানা গেলো, স্থানীয় মন্ত্রী ও প্রভাবশালীরা এখানকার খাসিয়া বসতি উচ্ছেদ করতে গিয়ে লারিসা, তার পিতা ‘খাসিয়া মন্ত্রী’কে অকথ্য নির্যাতন ও তাদের পুরো পল্লীতে বেড়’ দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে তাদের উচ্ছেদ করেছে । আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে প্রভাবশালীদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে শিলংয়ের মিশনারীতে-পড়া শিক্ষিতা তরুণী লারিসা। প্রাণভয়ে খাসিয়ারা ষাটের গজ পাহাড় ডিঙিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। উচ্ছেদকৃত সেই বসতি এলাকা এখান বিস্তীর্ণ রাবার বাগান। ট্রেন সিলেটের দিকে ধাবমান, ককো বিষণ্ণ হয়ে ওঠে । এরি সাথে গল্পের যবনিকা নামে।

মঈনুসের স্বভাবসুলভ টান টান গতিময় গদ্যে বাঁধা গল্প পাঠককে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আটকে রাখে। শব্দ ও উপমা প্রয়োগে তার পূর্বোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সবক’টি এখানেও উপস্থিত। ছবির পর ছবি এঁকে লেখক গদ্যের যে মোজেইক গড়ে তোলে তাতে তার শিল্পসৌকর্যকে কুর্ণিশ না জানিয়ে উপায় থাকে না। এইসব মন্তব্যের স্বপক্ষে তার গল্প থেকে একগুচ্ছ প্রমাণ হাজির করা সম্ভব। কিন্তু স্থানাভাবে আপাতত তা থেকে বিরত থাকছি ।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই গল্প কি আরেকটি ভ্রমণগদ্য কিনা, অন্তত গল্পের প্রথম অর্ধাংশ পড়ে তো তাই মনে হয়। ককো এক পর্যটক, ওর ক্যাম্পিংয়ের আইডিয়া; যা কিনা মার্কিন মুল্লুকে স্বাভাবিক, তা প্রায় একই ফরম্যাটে (এমনকি ইলোরা/লারিসার মত কোন নারীকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে নিয়ে) বাংলাদেশে বাস্তবায়ন কতটুকু বাস্তবসম্মত! লক্ষণীয় যে, এই আইডিয়ার নিরুপদ্রব বাস্তবায়নের জন্য ককো এখানকার (কুলউড়ার) ঘনসন্নিবিষ্ট বিপুল জনগোষ্ঠীকে এড়িয়ে গেছে। যখন কিনা মোবাইল নেটওয়ার্ক, পল্লী বিদ্যুতায়ন ও রাজনৈতিক দুবৃত্তদের ছত্রছায়ায় নিন্দিত সারা দেশ, সেখানে কোকোর এই বাংলা মুল্লুকে অভিযান পাঠককে থ্রিলার কাহিনির কথা মনে করিয়ে দেয়! এটা খুব আশ্চর্যজনক যে, এই অভিযানে ককোর হাতে অত্যাবশ্যকীয় কোন মোবাইল হ্যান্ডসেট নেই। সুতরাং, কি বাস্তবিক, কি ভারচুয়্যাল কোথাও ককোর কোন ইন্টারঅ্যকশন/জনসম্পৃক্ততা নেই! অন্তত খাসিয়াপল্লির সেই রাবার বাগানে রাত্রিযাপন পর্যন্ত এই গদ্যকে দিব্যি কোনো ভ্রমণগদ্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব, যা কিনা আবার খানিকটা থ্রিলার ধাঁচেরও বটে। থ্রিলার ঘরানার কাহিনির নায়কের মতই যে ককোর আচরণ, হাবভাব, তার সাহস-দৃঢ়তা, নারীসঙ্গলিপ্সা! কেবল শেষ দিকে এসে লেখক যেন হঠাৎ সচেতন হয়ে ওঠেন – তিনি তাঁর নায়ককে ঠেলে দেন বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতার এক গভীর অমীমাংসার মুখে – সংখ্যালঘুরা/আদিবাসীরা সমতলের অধিবাসীদের/প্রভাবশালীদের সেই চিরাচরিত লাঞ্ছনার মুখে; যা কিনা আবার নবীন প্রবীণ সমাজগবেষকদের আজ অবধি নিরাপদ খোরাকও বটে। এই পর্বে এসে মঈনুসের নায়কের আর কিছু করার থাকে না! কি করেই বা থাকে? ককোর যে সম্বল সামান্য শৈশবের স্মৃতি, যার অনেকখানি আবার নস্টালজিয়া আর কাব্যিক আবহে আর্দ্র! আজকের সমাজ আর ইতোমধ্যে বিকশিত জটিল সমাজবাস্তবতা সম্পর্কে তার জ্ঞান তো শুধু ল্যাপটপে সংগৃহীত কতিপয় তথ্য-উপাত্তের মধ্যে! অতঃপর গল্পের শেষে নায়ক যেমন তেমনি লেখকও যেন পথ হারিয়ে ফেলেন। গল্পের নায়ক ককোর সাময়িক বিষণ্ণতা নস্টালজিয়ার আর্দ্রতা ছাপিয়ে ওঠে না। গল্পের যবনিকায় পাঠক লক্ষ করে, সম্ভাব্য সঙ্গিনী টিয়া তাকে পরের দিনের জাফলং ভ্রমণের জন্য চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, ককোর এই দুর্বলতাকে স্বীকার করে নিয়েই যদি লেখক ককোর বিচ্ছিন্নতাবোধকেই গল্পের মূল প্রতিপাদ্য করতে পারতেন তাহলে গল্প অন্য মাত্রা পেত বলে আমার ধারণা!

অবশ্য এমনও হতে পারে এখানকার দৈনন্দিন সামজিক বাস্তবতা থেকে দূরবর্তী বলে সঙ্গত কারণে এবং সচেতনভাবেই লেখক গল্প নির্মাণের সেই ছক এড়িয়ে গেছেন; হয়তো তাঁর মনে হয়েছে মহাশ্বেতা দেবীর মতো লেখিকাদের হাতে সেই ছক চর্চিত হয়ে এখন তা ক্লিশে হয়ে গেছে। একারণেই তিনি অভিনব রীতিতে তাঁর কাহিনি উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছেন।

তবে কি আমাদের বন্ধু মঈনুস একটি পরাবাস্তব গল্প লিখতে চেয়েছে, যেখানে কঠোর বাস্তবতাকে পরাবাস্তবতার আবরনে মুড়িয়ে ফেলার একটা সুযোগ থাকে?

থাক না হয় এইসব তর্ক আর ব্যবচ্ছেদ! পাঠক, তর্ক তুলে রেখে আমাদের বন্ধু মঈনুস সুলতানের গল্পটি পড়ুন, উপভোগ করুন তাঁর গদ্যের কারুকাজ, মনোযোগী পাঠক এতেও খুঁজে পাবেন ওর বলবার একটা নিজস্ব ভঙ্গী আর স্বাতন্ত্র্য

১ এপ্রিল, ঢাকা ২০২৪

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    X