গদ্য

সৈয়দ কামরুল হাসান | ‘রহু চণ্ডালের হাড়’, অভিজিৎ সেন ও অন্যান্য | নিছক বৈঠকী | গদ্য

পঞ্চদশ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের পশ্চিম পৃথিবী আবিষ্কারের আগে চতুষ্কোণ-তত্ব জারি ছিলো, যার অর্থ, “কেউ যদি বেশি পশ্চিমে জাহাজ নিয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কিনারে গিয়ে পড়ে যাবে। কারণ পৃথিবী চারকোণা একটি স্থলখণ্ড।” কলম্বাসের নয়া ভূখণ্ড আবিষ্কার মুছে দিয়েছিলো সে-তত্ব। অনেকটা এই রকম আবিষ্কারের আনন্দ হতে পারে অভিজিৎ সেন পড়লে। তাঁর রচনা যেন সমকালীন বাংলা গদ্যের এক নতুন বেলাভূমি। তাঁর বহুল পঠিত উপন্যাস ‘রহু চণ্ডালের হাড়’কে বঙ্কিম পুরষ্কার না দিয়ে বুঝি উপায় ছিলো না! প্রান্তিক ও অন্ত্যজ জনগোষ্ঠীর জীবনকে তিনি যে-রকম ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ও জাদুকরী ভাষায় কথাসাহিত্যের মঞ্চে তুলে এনেছেন, তা তাঁকে যে কালজয়ী কথকের মর্যাদা দেবে সে-কথ নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিপুল নয় তাঁর রচনাসম্ভার। কিন্তু ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ তো আছেই; উপন্যাস ‘মৌসুমী সমুদ্রের উপকূল’, ‘অন্ধকারের নদী’ ও পঞ্চাশটি গল্পের সংকলন পড়ার পর আমার মতো আরো অনেকেই যে তাঁর সবক’টি লেখা (যেখানে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে) পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবেন, সে-ব্যাপারেও আমার কোন সন্দেহ নাই।
অভিজিৎ সেন কি কম আলোচিত? সেটাই তো স্বাভাবিক, একে তো তাঁর রচনা, রচনার আখ্যান, যুক্তি ও বিশ্লেষণ একরকম প্রতিষ্ঠানবিরোধী, তিনি নিজেও লিটল ম্যাগাজিন-ঘেঁষা লেখক এবং বরাবর কলকাতার বাইরে তাঁর অবস্থান। আবার লেখক হিসেবে তাঁর নিজের জীবনটাও কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। জন্মেছিলেন বাংলাদেশের বরিশালে দেশবিভাগের আগে। ১৯৫০-এ স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ষাট দশকের মাঝামাঝি কয়েক বছর ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করেন। ১৯৬৯-এ চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম নকশাল আন্দোলনে যোগ দেন। পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাটে দীর্ঘকালীন অবস্থান তাঁর সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৯৬ সালের দিকে তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু লেখক মিহির সেনগুপ্তর লেখায় তাঁর সর্বশেষ পারিবারিক অবস্থাটা যেভাবে ধরা পড়েছে তা এরকম : “সদ্য বইমেলার পর অভিজিৎ বালুরঘাটে ফিরে গেছে। ওর জীবন অবিশ্বাস্য রকমের সংকটাপন্ন। দুটি মেয়ে। বড়টি প্রায় জন্মাবধি রুগ্না। এপিলেপসি এবং আরোগ্যের কোন আশা নেই, এমনকি মোটামুটি কাজ চালানোর মত সুস্থতায়ও থাকে না কখনও। স্ত্রীও নানা রোগে পর্যুদস্ত। চাকরির জন্য আত্মজনদের কাছ থেকে বাধ্য হয়ে দূরে থাকতে হয়। এসব নিয়েই তার সাহিত্যকর্ম, সংসার নির্বাহ। নিজেও নানান রোগের ভাণ্ড।”
অভিজিৎ সেনের রচনা নিয়ে আমাদের অপরিহার্য কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত সাহিত্যকাগজ ‘কোরক’-এ ‘অভিজিৎ সেনের হাড়তরঙ্গ’ শিরোনামে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। জীবদ্দশায় অভিজিৎ সেনের সাথে একবারটি সাক্ষাতের জন্য ইলিয়াস যে কতটা ব্যাকুল ছিলেন তা মিহির সেনগুপ্তর অনবদ্য স্মুতিচারণা “অন্তরঙ্গ ইলিয়াসে” সবিস্তারে ব্যক্ত হয়েছে। বলাবাহুল্য (তৎকালীন) পূর্ববঙ্গের বরিশালে জন্মগ্রহণকারী মিহির সেনগুপ্তর বাংলাদেশে নিয়মিত আসা যাওয়া। একদিকে ইলিয়াস ও অভিজিতের রচনার মুগ্ধ পাঠক, অপরদিকে অভিজিৎ সেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু তিনি। অভিজিতের সঙ্গে ইলিয়াসের একটা সাক্ষাৎকার ঘটিয়ে দেওয়ার ইলিয়াসের তরফের বারংবার তাগিদ কোনওভাবেই মেটানো যাচ্ছিল না, কি কারণে যেন প্রচেষ্টাগুলি ফস্কে যাচ্ছিল। ১৯৯১ সালে অভিজিৎকে নিয়ে তিনি যখন ইলিয়াসের ঢাকাস্থ কেএম দাস লেনের দরজায় হাজির হয়েছিলেন, সে-সময় দেখা হয়নি। ইলিয়াস তখন বগুড়ায় ‘খোয়াবনামা’র মালমশলা জোগাড়ে ব্যস্ত; মিহির সেনগুপ্তকে আক্ষেপ করে তিনি বলেছিলেন : “ইসস, অভিজিৎ এই বাড়ির দরজা থেকে ফিরে গেল, আর আমি কি না পুন্ড্রবর্ধনের বৈরাগীর ভিটায় টহল মারি?” পরে ’৯৬ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত একটি পা কেটে ফেলার পর ইলিয়াস যখন কোলকাতায় নার্সিংহোমে “কেমো” নিচ্ছেন, তখনও দেখা করতে গেলে মিহিরকে আক্ষেপ করে বলছেন তিনি (তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে) : “এবার বল তো তোমার ঐ হাড়চণ্ডালী দাদাটির সঙ্গে আমার আদৌ দেখা হবে কি না। শালা কিছুতেই মোলাকাত হলো না। শালা ভেবেছে কী?” যাহোক, দেখা উভয়ের হয়েছিলো, ওই নার্সিংহোমেই ইলিয়াসের পা কাটার ২৫/২৬ দিন পর – উভয়ের প্রথম কিংবা শেষ দেখা। মিহির সেনগুপ্ত সেই সাক্ষাৎকারের বর্ণনা দিচ্ছেন : “অভিজিৎ এসে ওর খাটের উপরই বসল। দুজনে দুজনার হাত ধরাধরি করে মুখোমুখি। আমার কাজ শেষ। এবার ওরা যা করে করুক। সমবয়স্ক দুজন গভীর মানুষ, মুগ্ধ চোখে, একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। কেউ কাউকে কুশলবার্তা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে পারছে না। ঐ সময়টুকুকে আমার অনন্ত মুহূর্ত বলে মনে হচ্ছিল। আমি লেখক সাহিত্যিক নই, আমার অনুভূতি, বোধ, বিচার সবকিছুই খুব মোটা দাগের, আর দশজন সাধারণের মত। তথাপি ওদের তৎকালিক নিঃশব্দ আনন্দের নিস্তরঙ্গ স্রোত যেন আমাকেও স্পর্শ করছিল। তা এত স্নিগ্ধ ও ক্লান্তিহর যে,মানুষ জীবনে খুব বেশিবার তাতে অবগাহন করতে পারে না এবং অসম্ভব জেনেও কিছু কিছু অনুভবকে শ্বাশ্বত করে রাখতে চায়। তারপর ওরা দুজনে কথা বলতে শুরু করলে আমার মনে হোলো যেন নিস্তরঙ্গ স্রোতে ঢেউ উঠল এবং বুঝলাম আরও বহু বহুদিন আগেই ওদের সাক্ষাৎ হওয়া জরুরী ছিল। অন্তত আমার সঙ্গে প্রায় এক দশকের আলাপ না হয়েও, যদি অভিজিৎ সেই ১৯৯১-এও ওর সঙ্গে সামনা সামনি হতে পারত, তবে সাংস্কৃতিক বিশ্বের ফুল ফল ফসলের রং আরো অনেক বর্ণাঢ্য হতো। কিন্তু এখন যে আর সময় নেই!”

স্মরণরেখায় ‘চারণ সাংবাদিক’ মোনাজাতউদ্দিন

“দূর থেকেই মানুষটাকে আলাদা করা গেছে প্রথমত তাঁর উচ্চতায়, সাধারণের চেয়ে লম্বা, কৃশকায় একটু বা রোগাই। কিন্তু আরো কিছু একটা যেন ছিলো তাঁর মধ্যে, কাছে এসে দেখা গেলো একজোড়া চোখের প্রখর অনুসন্ধিৎসু চাউনি, ভাবলেশহীন মুখে আর কোথাও একপরত আবেগও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই তবে মোনাজাতউদ্দিন! দেখলাম বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের বইমেলায় আলোআঁধারী সন্ধ্যায় কি একটা বই উল্টেপাল্টে দেখছেন তিনি। এগিয়ে গেলাম; যেচেই পরিচিত হলাম। আমাকে দেখে কাঁচাপাকা এলোমেলো চুল হাত দিয়ে মাথার পেছনে সরিয়ে দিয়ে একটু মুচকি হাসলেন। পান চিবুচ্ছিলেন। না, একটুও আড়ষ্টতা নেই কিন্তু আমাকে দেখে মনে হলো একটু যেন খটকা লেগেছে তাঁর! তিনি যেন ঠিক বুঝতে পারছেন না দৈনিক সংবাদের পাতা জুড়ে রাশি রাশি ক্লিষ্ট-খিন্ন মানুষগুলি নিয়ে লেখা তাঁর এইসব লেখার আবার অনুরাগী পাঠকও আছে নাকি। তাঁর অনুসন্ধিৎসু চোখে এবার সন্দেহ বুঝি দানা বাঁধলো। দেখছিলাম পোশাক বলতে একটা হাফহাতা শার্ট গায়ে, পরনে সস্তার পাতলুন, হাল্কা ঠান্ডায়ও স্রেফ একজোড়া চটি পায়ে। এ-কালের ঝাঁ চকচকে বইমেলা হলে কী যে অবস্থা হতো বলা যায় না; সেকালের মেলায় তবু একরকম মানিয়ে নেওয়া গেছে। কথা বলতে বলতে মোনাজাত ভাই আর আমি একাডেমি চত্বর একপাক ঘুরে গেট পেরিয়ে মেলার বাইরে চলে এসেছি। আমি ততক্ষণে তাঁকে বুদ্ধি দিচ্ছি আপনি পত্রিকার এই লেখাগুলোকে একটু মাজাঘষা করে বই করে ফেলুন না কেন, কিংবা কোন চরিত্র অথবা ঘটনাকে আরো খুঁড়ে চাই কি গল্প কিংবা উপন্যাসও করতে পারেন। তিনি মূলত মৃদুভাষী, কিন্তু কথা চালিয়ে গেলেন, কথার পিঠে কথা জুড়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে। ফুটপাত ধরে হাঁটছি আমরা। ফাল্গুনের হঠাৎ হাওয়ায় একটু মিহি শীতের আমেজ। একাডেমির আলো ও কোলাহল পেছনে পড়ে রইলো।” – মোনাজাত ভাইকে নিয়ে আমার নোটখাতায় টুকে রাখা একটুকরো স্মৃতি পাঠকের সামনে তুলে ধরলাম।
চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনকে নিয়ে নতুন করে তেমন কিছু বলার নাই। যমুনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে (২৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৫) ফেরি থেকে পড়ে অকালে তাঁর মৃত্যু হবার পরও; মনে পড়ছে – অনেক দিন তিনি একটানা সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিলেন। অনেকেই লিখেছেন তাঁকে নিয়ে। সাংবাদিকরা তো বটেই; এমনকি দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান, কী যশস্বী কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকও বাদ যাননি। দেশের সব মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার তাঁকে দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে, এমনকি একুশে পদকও। তাঁর রচিত বই হু হু করে বিক্রি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে তাঁর লেখা, অনেকেই তাঁর রচনা নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর নামে প্রবর্তিত হয়েছে স্মৃতি পুরস্কার, গড়ে উঠেছে মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি সংসদ।
সাংবাদিকতার ধারণাটাই বদলে দিয়েছিলেন মোনাজাতউদ্দিন, একইসঙ্গে তার কাঠামো ও প্রকাশভঙ্গি। সেই সঙ্গে ছিলো তাঁর যাদুকরী ভাষা, জনজীবনের অন্তর্লোক পর্যবেক্ষণে তিনি বিশ্লেষণের নিষ্ঠা ও মানবিক দরদের সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়ে সাংবাদিক ও জীবনশিল্পীর ভেদরেখা মুছে দিয়েছিলেন। প্রান্তিক উত্তর জনপদের কালজয়ী কথাকার তিনি। কেবল চারণ সাংবাদিক নন, চারণশিল্পীও তিনি। বলাই বাহুল্য, সহজ ছিলোনা তাঁর এই অর্জন। এ-জন্যে তাঁকে নিজের জীবন পর্যন্ত পথে পথে বিলিয়ে দিতে হয়েছে। রংপুরের কৃতি সন্তান, রংপুরের গর্ব “চারণ সাংবাদিক” মোনাজাতউদ্দিনের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে রংপুরের প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক রংপুর’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের মার্চে স্বাধীন চিন্তা, বিশ্বাস আর আদর্শের ভিত্তিতে প্রকাশ করেন ‘দৈনিক রংপুর’। ১৯৭৬ সালে দৈনিক সংবাদে যোগ দেয়ার পর থেকে তিনি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন পত্রিকাটির সাথে। বিশ বছর একটানা ‘সংবাদ’-এ কাজ করার পরে ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই তিনি কর্মরত ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সন্তোষ গুপ্ত লিখেছেন, “মোনাজাত উদ্দিনের সংবাদ সংগ্রহের স্টাইল ও নিষ্ঠা জড়িয়ে গিয়েছিল; কোথাও ভঙ্গী দিয়ে চোখ ভোলানোর আয়োজন ছিল না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ফলোআপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অনন্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। গ্রামবাংলার জনজীবনের একটা নিখুঁত তথ্যনির্ভর এবং একই সঙ্গে সংবেদনশীল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও চিত্ররূপময় বর্ণনা এবং ছবি তিনি দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন খবরের মাধ্যমে। তাঁকে ‘চারণ সাংবাদিক’ আখ্যা দান যথার্থ। এই একটি অভিধাতেই তাঁর সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য ও অনন্যতা ধরা পড়ে।” এ-মন্তব্যের প্রচুর প্রমাণ বিদ্যমান তার প্রকাশিত পথ থেকে পথে, সংবাদ নেপথ্য, কানসোনার মুখ, পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ, নিজস্ব রিপোর্ট, ছোট ছোট গল্প, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, গ্রামীণ পর্যায় থেকে, চিলমারীর একযুগ, শাহ আলম ও মজিবরের কাহিনী, লক্ষীটারী ও কাগজের মানুষেরা গ্রন্থে।
মোনাজাতউদ্দিন রচনাসমগ্র বাজারে সুলভ; পাঠক তাঁকে পড়ুন,তাঁকে পড়া মানে বাংলাদেশকে ভালোবাসা,দেশের শেকড়ের গভীরে যাওয়া!

সৈয়দ কামরুল হাসান

গল্পকার ও উন্নয়নকর্মী

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    X