অনুবাদ অনুবাদ কবিতা কবিতা

লুলজেটা লেশানাকু | আলবেনিয়ার কবিতাগুচ্ছ | ভাষান্তর মঈনুস সুলতান

Luljeta Lleshanaku
ভূমিকা ও কবি পরিচিতি

আলবেনিয়ান ভাষাভাষী জনগোষ্টির বাসস্থানের পরিধি

হালজামানার আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র ছাড়াও ছড়িয়ে ছটিয়ে আছে সমগ্র বলকান অঞ্চল তথা কসোবো, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ায়। পনেরো শতক থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক অব্দি পুরো বলকান এলাকা ছিল তুরষ্কের অটোমান সালতানাতের অন্তর্গত। ওই সময়কালে ঔপনিবেশিক শাসনপ্রক্রিয়ার কঠোর নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে আলবেনিয় ভাষায় লিখিতভাবে সাহিত্যের বিকাশ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে উঠেছিল। তাই উক্ত ভাষায় মুদ্রিত সাহিত্যকীর্তির তেমন কোন নিদর্শন উনিশ শতকের মাঝামাঝি অব্দি বিরল। যদিও ত্রয়োদশ শতক থেকে অটোমান শাসন জারি হওয়া অব্দি সময়কালে রচিত বেশ কিছু ধর্মীয় বিষয়ভিত্তিক পাণ্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যায়; এবং ইতালির সিসিলিতে নির্বাসিত কয়েকজন আলবেনিয় লেখকের যৎসামান্য রচনাও এই ধারার অন্তর্গত।

হালজামানায় আলবেনিয় ভাষায় সহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বলকান অঞ্চলে তুরষ্কের আধিপত্যের সমাপ্তির পর, যা নিয়ন্ত্রিত পরিসরে বিকশিত হয় মূলত সমাজতান্ত্রিক সময়কালে। এ বিকাশ প্রক্রিয়ায় জোয়ার আসে নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমগ্র পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিলোপ সাধিত হলে। সামাজিক ক্রান্তিকালে আলবেনিয়ান সাহিত্যের বিষয়বস্তুতে সাহসী উচ্চারণ উচ্চকিত হয়ে ওঠে দ্রুত; এবং সহস্রাব্দের সন্ধিক্ষণ থেকে কবিতার প্রকরণেও ব্যাপক বিবর্তন লক্ষ করা যায়।

এখানে ভাষান্তরে উপস্থাপিত কবিতাগুলোর রচয়িতা হচ্ছেন কবি লুলজেটা লেশানাকু। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন এ কবির জন্ম হয় ১৯৬৮ সালে,সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে আলবেনিয়ার এলবাস এলাকায়। তাঁর পরিবারের কমিউনিস্ট-বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য বছরের পর বছর তাঁদের নিজ গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় বসবাস করতে হয়েছিল। তারুণ্যে কবির উচ্চশিক্ষা লাভের আকাঙ্ক্ষাও রুদ্ধ হয়েছিল সরকারি অনুমোদনের অভাবে।

তবে নয়ের দশকের সূচনায় সামাজিক পরিবর্তনের পর লুলজেটা লেশানাকু রাজধানীর তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়শোনার সুযোগ পান। ১৯৯৯ সালে কবি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভারসিটি অব আয়োয়াতে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনেল রাইটার্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন; এবং ওয়ারেন উইলসন কলেজ থেকে মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস্ ডিগ্রিও অর্জন করেন।

অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা লুলজেটা লেশানাকুর চারটি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এছাড়া ফরাসি ও জার্মান ভাষায় তাঁর কিছু কবিতা ভাষান্তরিত হয়েছে। কবি ইউরোপের ক্রিস্টাল ভিলেনসিয়া পুরস্কারে সম্প্রতি সন্মানিত হয়েছেন।

আলবেনিয় কবিতার বোদ্ধা পাঠকরা তাঁকে অগ্রগণ্য একজন কবি মনে করে থাকেন। একজন কাব্য-ক্রিটিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে, ‘লুলজেটা লেশানাকু কথা বলেন সম্পূর্ণ স্বতস্ত্র এক ভাষায়। তাঁর বাকপ্রতিমা সব সময় অপ্রত্যাশিত ও উদ্ভাবনী সুধায় সঞ্জীবিত।’

বর্তমানে কবি আলবেনিয়ার রজধানী তিরানা শহরে ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজ অব কমিউনিস্ট জেনোসাইড নামক একটি সংস্থার পরিচালক হিসাবে কর্মরত।

কবিতাগুলো এবং ভূমিকাসংক্রান্ত তথ্য ও কবির বায়ো-বিষয়ক উপাত্ত নেওয়া হয়েছে অন্তর্জালের একাধিক উৎস থেকে। ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত কবিতাগুলোতে ইংরেজি অনুবাদকের নাম মূল রচয়িতার নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

কবিতাগুচ্ছ

>> আকুপাংচার

চীনদেশে— ২১০০ বছরের পুরানো এক সমাধির অভ্যন্তরে
আবিষ্কৃত অসংখ্য দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে
পূরাতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন—
ব্যক্তিগত ব্যবহারের উপযোগী আকুপাংচারের নয়টি সুঁচ,
এগুলোর মধ্যে চারটি স্বর্ণ ও পাঁচটি রৌপ্যে নির্মিত।
নির্দিষ্টভাবে কারণ জানারও অনেক অনেক আগে
চীনদেশের ভিষকরা জানাতেন যে—
বেদনাকে প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন বেদনা সৃষ্টির।

বিষয়টি— বলা চলে মোটিামুটি সরল :
হৃৎপিণ্ড ও যকৃতকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হলে
বাহুতে ফুটাতে হরে সারিবদ্ধভাবে সুঁচ।
অনিদ্রা ও দুশ্চিন্তা দূরীকরণে পায়ের পাতায়
এবং বন্ধ্যাত্ব গোছাতে দুচোখের মধ্যিখানেও বিঁধতে হবে সুঁচ।

সামান্য বেদনা যদি সৃষ্টি করা যায় এখানে,
তাহলে এর প্রভাব অনভূত হবে অন্যতর;
একদা, অভিযাত্রীকদের একটি দল উত্তর মেরুতে
পুঁতেছিল একটি পতাকা,
জনবিরল বিরান এক হিমবাহের মাঝখানে,
ভূমণ্ডলের গোড়ালিতে বিদ্ধ করা হয়েছিল একটি সুঁচ,
অভিযান সমাপ্ত হওয়ার আগেই নতুন করে বেধে গিয়েছিল যুদ্ধ।
ওই সুঁচ বিদ্ধের ঘটনার প্রভাব অনুভূত হয়েছিল বিশ্বমস্তিষ্কের
যে কোষটিতে সংরক্ষিত থাকে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি—
ঠিক ওই জায়গায়।

যখন রুশ দেশ আদর্শকে আকুপাংচারের প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে
উরাল পর্বতমালার কন্দরে বিদ্ধ করে সুঁচ—
এর প্রভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে রক্তধারায় শর্করা প্রবাহ;
হুইস্কির সরবরাহ নিষিদ্ধ হলে আমেরিকার নাগরিকদের ব্যয়
বেড়ে গিয়েছিল দশ গুণ,
ডাকঘরে জেমস জয়েসের অমর গ্রন্থ ‘ইউলিসিস’-এর
অনুলিপিগুলো জড়ো করা হয়েছিল পুড়িয়ে ফেলার জন্য।

বিশ্বকে যখন বিবেচনা করা হয় শুধু একটি দেহ হিসাবে,
কেবলমাত্র তখনই তা হয় যথাযথভাবে কার্যকর।
অন্ধকারের লোমশ এক বোর্ডে নক্ষত্রগুলোকে দেখা যায়
সারি দিয়ে লাগানো সুঁচের মতো।
তাদের প্রভাব পড়ে পরিপাক প্রণালীতে, বহতা দিনের প্রতিটি হয়ে
ওঠে নিত্যনতুন,
শুরু হয় প্রতিটি তৎপরতা সম্পূর্ণ নতুনভাবে।
বিগত দিনের আমিষ রক্তধারায় দ্রবিভূত না হওয়া অব্দি কীভাবে
শুরু করা যায় নতুন একটি দিন?
শিশুকালে— আমার প্রথম শিক্ষক যখন আমার নামের পদবিটি
দু’বার ভুলভাবে উচ্চারণ করেন,
তার বাচনভঙ্গী আমাকে সুঁচের মতো বিদ্ধ করেছিল।
কানের লতিতে ছোট্ট একটি সুঁচ বেঁধামাত্র হঠাৎ করে
খুলে গিয়েছিল আমার দৃষ্টি,
তাতে ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কবিতার প্রতিমাকে
স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলাম।

[আলবেনিয় থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর : এনি জিকা]

>> কারাবন্দিগণ

কারাবন্দিগণ
অপরাধী কিংবা নির্দোষ
যখন মুক্তি পায় সর্বদা তাদের দেখায়
যেন ক্ষমতাচ্যুত গোত্রপতি।

আকারে সুদীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও
মানুষটি যখন মাথা নিচু করে অতিক্রম করে কারাগারের তোরণ
তার ভাবভঙ্গিকে দেখায় বেদুঈনের মতো
যে মরুচারী সারা দিনমান পিঠে করে বয়ে এনেছে তাঁবু
তা খাঁটিয়ে এখন প্রবেশ করছে অভ্যন্তরে।

সুতিবস্ত্রের মলিন পর্দা, পাথরের প্রাচীর ও পোড়া লেবুর গন্ধ
তাকে টেনে নিয়ে যায় এমন এক মুহূর্তে
যখন সমাপ্ত হয়েছিল ঠান্ডা লড়াই।

অন্য একদিন — বিয়ের রাতে রক্তচিহ্ণে রাঙানো কাপড়ের মতো
তার বিছানার চাদরটি ঝুলছিল — আঙিনার দড়িতে।

তাকে ঘিরে ধরে রোদে পোড়ে মলিন হওয়া মুখগুলো
প্রতিটি চোখ ও কান — যেন নীরবে জানতে চাচ্ছে
“কী ধরনের স্বপ্ন দেখেছো তুমি কাল রাতে?”
একজন কারাবন্দীর স্বপ্নরাজি হচ্ছে
চমড়ায় লেখা পান্ডুলিপির মতো
কালের করাল গ্রাসে কিছু অনুচ্ছেদ মুছে গিয়ে গ্রন্থটিকে করে
তুলেছে পবিত্র।

তার বোন এখনো খুঁজে বের করে তার পুরানো অভ্যাসগুলো :
সে প্যান্টের পকেটে খুঁজে পায় লুকানো রুটির টুকরা
আর বিছানার তলায় সারাক্ষণ চলে
আসন্ন শীতঋতুর প্রতীক্ষায় কুঠারে কাঠ কাটা।

কেন এ অহেতুক আতঙ্ক?
কারাগারে বন্দি জীবনের চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে?

নিজ পছন্দের অনেক কিছুই সে বেছে নিতে পারে
কিন্তু সে যে ইতিমধ্যে অপারগ হয়ে পড়েছে নির্বাচনে।

[আলবেনিয় থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর: হেনরি ইসরায়েলি ও শাপরেসা ক্বাটিপি]

>> রাজনীতির পথপরিক্রমা

বেড়ে উঠেছি আমি বিরাট একটি বসতবাড়িতে
যেখানে দুর্বলতাকে মনে করা হতো নিন্দনীয়
আর নিখাদ উল্লাসের অভিব্যক্তিও হয়ে উঠতো শাস্তিযোগ্য
অপরাধ।

বিগত দিনের ঐতিহ্যে ভারাক্রান্ত
যে নীতিআদর্শের আবহে আমি বড় হয়েছি,
ফিরে তাকালে মনে হয়—
উত্তরমেরুর আকাশে জমে উঠছে কালিমালিপ্ত গাঢ় কুয়াশা।
জ্বলে উঠছি আমি।
আমার লেখাজোকার খাতা, আমার চুল, আমার হৃদয় মলিন হয়ে
উঠছে ঘন ধোঁয়াশায়।

যখন আমরা পরষ্পরকে দেখতে পেয়েছি স্পষ্টভাবে।
অথবা — যে বিষয়টি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
ধারালো ব্লেডের কাটাকুটিতে অকেজো হওয়া লাটারি টিকিটের
নাম্বারগুলোর মতো।

আমাদের মধ্যে ব্যবধান কতটা?

যাদের মুখমণ্ডলের আকৃতি গোলাকার
মনে হয়েছিল শুধু তারাই ন্যায়নিষ্ঠ;
আর সরু মুখের অধিকারীরা বোধ করি ছিল সাবধান।

একজন সঙ্গোপনে শুনেন পুচিনির ধ্রূপদী সংগীত,
অন্যজনের আগ্রহ মৌনতায় — সংগীতের অন্তর্গত সংগীত।
সব চেয়ে বয়ষ্ক যে জন তিনি নিজেই নির্মাণ করেছেন
নিজের জন্য দশ ফুটের মতো একটি কুঠুরি—
ওখানে সারাক্ষণ নিমগ্ন থাকেন স্বগত সংলাপে।

আর সবচেয়ে রহস্যময় যিনি
ভুগছেন তিনি বহুমূত্র রোগে।

কিন্তু মারাত্মক পরিস্থিতিতে আমরা কী একে অপরের অনুরূপ নই!

ছুঁড়ে দেয়া ছোট্ট একটি ঢিলে ম্যাগপাই পাখির ঝাঁকের মতো
আশঙ্কায় সতর্ক হয়ে উড়ে যাই আকাশে
উড়তে উড়েতে ঢুকে পড়ি নীলিমার গভীর গহ্বরে।

ওখানে একটা ব্যাপার পরিস্কার হয়ে ওঠে—
আমাদের সকলের সংকুলানের মতো যথেষ্ট পরিসর কিন্তু নেই।
বিচ্ছিন্ন হই আমরা।
কেউ কেউ যেভাবে দিনযাপন করছে এবং যা জেনেছে, কিংবা
সাক্ষী হয়েছে যে ঘটনার — তা আক্ষরিকভাবে বলে যায়,
এভাবে তাদের বিবরণে তৈরি তাদের নিজস্ব কালিমা।
আর অন্যরা অতিক্রম করে যায় সমুদ্র।

আর বিশেষভাবে যারা চলে গেছে দূর থেকে বহুদূরে,
তারা কিন্তু কখনো কায়ক্লেশে অত্যন্ত বাজেভাবে বেঁচে থাকার
বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করে না,
বরং তারা চেষ্টা করে — নেতিবাচক এ বিবরণটি
তাদের দিনযাপনের অন্ধকার ফাটলে সমাহিত করতে।
দুর্ভাগ্যক্রমে, অনেকটা আতরের মতো,
সৌরভ কিন্তু ছড়িয়ে থাকে বাতাবরণে — অনেকক্ষণ।

[আলবেনিয় থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর : এনি জিকা]

>> পুরানো দিনের সংবাদ

দুটি পাহাড়ের মাঝামাঝি উপত্যকায় আছে যে গ্রামগুলো
ওখানে — হরহামেশা সংবাদ পৌঁছায়
ঘটনা ঘটে যাওয়ার মাস খানেক পর,
নানা ঘাট পাড়ি দিতে গিয়ে ততদিনে তথ্যের কিছু হেরফের হয়
অতিরঞ্জনে কখনো হয়ে দাঁড়ায় রীতিমতো সাতকাহন,
শেষ পর্যন্ত ঘটনায় নিহত হয়েছেন যিনি—
সংবাদটি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই তিনি স্বর্গারোহণে থিতু হতে থাকেন,
আর যদি-বা রাজধানীতে সামরিক অভ্যুত্থানের মতো কিছু ঘটে
তা বাতচিতে উল্লেখিত হতে থাকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা’ হিসাবে।

বসন্তে তিরোহিত হয় নির্জনতা… কল্পনার যে সঞ্জীবনী সুরা
প্রতিষেধকের মতো সুরক্ষা করে শরীরকে — শুকিয়ে আসে তা,
জেগে ওঠে চেস্টনাট প্রজাতির সুঠাম বৃক্ষরাজি,
নেশাগ্রস্ত মানুষজন দেয়ালে তাদের শীতল পিঠ ঠেকিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।

এখানকার মেয়েগুলো হামেশা বাইরের কোন পুরুষকে বিয়ে করে
নীরবে ত্যাগ করে পিতৃগৃহ—
পেছনে পড়ে থাকে তাদের স্মৃতিময় অনাঘ্রাতা পঞ্চদশী প্রতিমা।

তবে ছেলেগুলো দূরের কোন গ্রামে বিয়ে সম্পন্ন করে
ঘরে এনে তোলে কনেবউ,
যে বধুরা বছর ফিরতে অন্তসত্তা হয় — অতঃপর বিয়োয়
গোলাঘরের খড়বিচালির গাদায় শিশু-পয়গম্বরদের।
ক্ষমা করুন,
আমি আসলে বলতে চাচ্ছি,‘এদের মধ্যে শুধু একটি শিশু হবে পয়গম্বর’,
বাকিগুলো পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে কাটিয়ে দেবে তাদের জিন্দেগি।
(এ বিষয়টাও দৈব ভবিষ্যদ্বাণীর অংশবিশেষ।)

আজকের মতো শরতকালে কোন এক দুপুরবেলা
রক্তের গন্ধে অপঘাতে মৃত কাকটির পাশে এসে জড়ো-হওয়া
একদল কাকের মতো ছেলেরা—
ধাওয়া দেবে গ্রামের কঙ্কালকৃশ ডাকপিয়নকে,
ডাকবিভাগের চিঠিপত্র ডেলিভারি দেয়া গাড়িটি
ধুলোর ধোঁয়া উড়িয়ে পড়িমড়ি করে ছুটে পালাবে।

কলঙ্কিনী নারীটির আঙিনায় ঢুকে পড়ে অতঃপর
তারা নির্দ্বিধায় পেড়ে খাবে আধপাকা নাসপাতি,
বলে কয়েও তাদের বিরত করা যাবে না— ছিঁচকে ছিনতাই থেকে…
আর মোদ্দা কথা হচ্ছে—
নারীটি সম্প্রতি শুয়েছে আধচেনা দুটি পুরুষের সঙ্গে
সুতরাং… বলা চলে… এ ধরনের ব্যবহার তার প্রাপ্য!

একটি বালকের স্কুলব্যাগে চুরি করা নাশপাতির পাশে
পড়ে থাকবে আনা কারেনিনা গ্রন্থটি,
কোন এক সুযোগ ছেলেটি অস্থিরভাবে পাতা ওল্টাবে—
শেষপৃষ্ঠা থেকে শুরু দিকের প্রথম পর্ব অব্দি
তারিয়ে তারিয়ে স্বাদ নেবে বর্ণনার…
অনেক দিনের কোন পুরানো পত্রিকার পাতায়
চমকপ্রদ কোন সংবাদ পাঠের মতো।

[ইংরেজিতে অনুবাদ : হেনরী ইস্রায়েল]

>> একটি কবিতার জন্য অপেক্ষা

প্রতীক্ষা করছি আমি একটি কবিতার জন্য,
পঙক্তিগুলো হবে না খুব একটা বিস্তারিত কিংবা নিয়ন্ত্রণহীন,
চাচ্ছি কিছু একটা — মসৃণ নয় বরং খানিকটা কর্কশ—
অভিশাপে অবিচলিত, অন্ধকারের গহ্বর থেকে
ছাড়া পাওয়া শ্বেতকায় দাঁড়কাক।

কোন অভিষ্টের নিশানা ছাড়া,
শব্দগুলো উৎসারিত হবে সহজাতভাবে—
লক্ষ্যহীন একটি বুলেট,
সদ্য দখলকৃত ভূমি কম্পমান হবে
সতর্কতাসূচক গুলিবর্ষণের আওয়াজে।

একটি কবিতা — যা জমে জমে বিষ্ফোরিত হতে চাচ্ছে এ বুকে
তা বেরিয়ে না আসা অব্দি
আমি শুনে যাব—
আমার শিশুরা ঝগড়া করছে পাশের কামরায়
নিরিখ করে তাকাবো দুধের খালি গেলাসটির দিকে
যার কানায় লেগে আছে সাদা দাগ
রূপায় মোড়া আমার কণ্ঠনালি
ন্যাপকিনের আংটায় গুছিয়ে রাখা ন্যাপকিন
অপেক্ষা করছি — আসরের শেষ অতিথিদের আসার…

[আলবেনিয়ান থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর : হেনরি ইসরায়েলি ও শাপরেসা ক্বাটিপি]

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    X