কবিতা

সুমন সৈকত | কবিতাগুচ্ছ

নষ্টালজিয়া

নিরুদ্দেশ হতে হতে শাদা ফেনায় এঁকেছি
মানুষের ঘর্মাক্ত ললাটের জলছবি। তন্দ্রার ছলে,
আন্দুলিসিয়ার প্রান্তে ফেলে এসেছি
শাদা বাজপাখির ডানা, মৃত ঘোড়ার খুর–
বিপন্ন বসন্ত বিকেল,
আর সাঁওতাল মেয়ের শস্যবিলাস।

নক্ষত্রের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
গাঙচিলের ডানায় উড়ে প্রাগৈতিহাসিক ভোর
নৈঃশব্দ্য অন্ধকারে
মাতৃজরায়ুতে জমাট বাঁধে
আগামীর স্পর্ধা…

আহা! বেদুইন, শূন্য উদ্যানে আজও খিলখিলিয়ে ওঠে
নাবালিকা জৈবিক পারদসন্ধ্যা।


(জললিপি বোঝনা তুমি নোনতা জলের ব্যাকরণ)

নোঙর

তোমার আত্মহননের পাণ্ডুলিপি এইমাত্র শেষ করে ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই দেখি, ঈশ্বরিণীর শাড়ির আঁচলে বাঁধা কিশোরী সন্ধ্যা। চুরুটের গন্ধে মাতাল তখন মেথর সর্দারের উঠোন, আত্মস্থ করতে থাকি নগরের অন্ধগলির মাংশাসি প্রলোভন। নিষিদ্ধ গন্ধমের জল-পিপাসায় কাতর জমজ স্তন। কৃষ্ণাঙ্গ ঠোঁটে, মায়ার কলতান…

দূর গাঙে পড়ে রয়
মাঝির হাহাকার,
ছেঁড়া মাস্তুল
আর
লোনাজলের শীৎকার।

কলম্বাস

ক্ষতের মতো অভিমানগুলো নিয়ে জেগে আছি। দৃষ্টিসীমানায় কি দারুণভাবে খুলে পড়ে বিশ্বাসের পলেস্তারা…
প্লাবিত জোৎস্নার ঘ্রাণে সেদিন তুমি খিলখিলিয়ে বললে, জানো! জানো! আমি রাণী ইসেবেলাকে স্বপ্নে দেখেছি, অমনি ভয় পেয়ে আমার শ্যামলা মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণের প্রজাপতি হয়ে উঠলো,
তুমি বেশ অবাকই হয়ে ছিলে, বললে, এ আর এমন কি? মানুষ স্বপ্নে কত কি দেখে…
আমি কিন্তু সেদিন ঠিকই এক লুণ্ঠনকারী কলম্বাস সোয়ারিকে মস্তিষ্কের ভিতর দৌড়াইতে দেখেছি…

ফটোগ্রাফার

ভূগোল জন্মরহস্যে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে পড়েছে
কালো ঘোড়াটি। সহস্র-কোটি আলোকবর্ষ দূরে গোপন অন্ধকারে ধ্যানমগ্ন কোন এক সৌখিন পুজারি, পাশের জঙ্গলে বৃক্ষরাজির প্রার্থনার ক্যানভাসে কোরাস করে মৃত বালিকার লাশের কৈশোরিক চপলতা।
গন্ধবণিকের সাথে কফিতে চুমুক দেয় ছদ্মবেশধারী হত্যাকারী ফটোগ্রাফার।

দিগন্তে ভেসে বেড়ায় ধূলিঝড়ের দুরন্তপনা। আহারে… কৃষ্ণ-ঘোড়া!
নক্ষত্র-যোজন পথ এখনও বাঁকি;
অথচ
তোর খুঁড়ে রাজ্যের ক্লান্তি…

মানুষ

দাঁড়াশ সাপ তাড়া খেয়ে কও
আচমকা স্বপ্নে ঘুম ভাঙতো প্রাশয়ই,
সাপের ভয় বিস্তর আতঙ্কে কাটতো কাঠুরিয়া বউ
সংসারে উপার্জনক্ষম সোয়ামির যদি কিছু হয়!
ইউসুফ নবীরে স্বপ্নের মাঝে খুঁজে বেড়াতো রোজ
যদি স্বপ্নের ব্যাখা বলে দিতেন, দিতেন বুজ!
বজ্রপাতে আচমকা আগুন
সুখ পোড়ালো কাঠুরিয়া বউ! বিদায় নিলো ফাল্গুন
কাঠপেন্সিলের মতো শুকিয়ে যাওয়া অবয়ব
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে পাহারা দ্যায় মহাকালের উৎসব

ইউসুফ নবীরে কাঠুরিয়া বউ স্বপ্নে করে না আর খোঁজ
মানুষ সাপে বিবর্তিত হচ্ছে যে রোজ।

শীত

ছিন্নমূল মানুষের আয়ুষ্কাল
ঝরে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে
অঝোর ধারায়,
কি!

ভী

হৃদ্যতায়
শান্তাহার জংশনে…

চুম্বন

(তখন অস্তগামী সূর্য নিমগ্ন ছিলো গোধূলির ওষ্ঠে )

অভিলাষের পানপাত্রে চুমু দিয়েই জেনেছি
শীতলক্ষ্যার দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে; সন্ধ্যামেয়ের ঘরে ফেরা।
ধ্রুপদী জোৎস্নায় ভাসবে বলে, হয়তো তুমিও
কেঁদেছিলে সেদিন।
বি

র্ণ হৃ
তা দ
য় য়
যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত তাইগ্রিস স্রোতস্বিনী।
আর মাদক সন্ধ্যায়,
তোমার ঠোঁট প্রকম্পিত তখন
অঙ্ক শেখার ভুল ধারাপাতে…

সুমন সৈকত
যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন নওগা থেকে প্রকাশিত ছোট কাগজ ‘বোল’।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field