আফতাব আহমদ : অসামান্য এক কবি | মাসুদুজ্জামান
গত শতকের আশির দশকের কবি আফতাব আহমদ। খুব কাছের বন্ধুরাই শুধু জানতেন, কতটা প্রাজ্ঞ তিনি, কতটা অনুভূতিপ্রবণ। আমি খুব কাছে থেকে না দেখলেও অনেক দিনের অন্তরঙ্গ সাহচর্য়ে বুঝেছি এই মানুষটি অন্য আর দশজন মানুষের চাইতে আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সূত্রে একধরনের আলো এসে তো কাউকে কাউকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। তীক্ষ্ণ, শান্ত, প্রখর। আফতাবকে ঠিক তেমনটাই দেখেছি। সর্বগ্রাসী পাঠক, সচেতন শিল্পবোদ্ধা – এর ভিতর দিয়েই যাপিত জীবন। কিন্তু এত দ্যুতিময় একটি মানুষও নিজেকে কী করে আড়ালে রাখতে হয়, নিজের ভেতরেই ক্রম-আবর্তিত হতে হতে ছুঁতে হয় শিল্পের চূড়া, আফতাব সেটা জানতেন। কিন্তু প্রকাশে তেমন আগ্রহ ছিল না। অনেক বার তাকে বলেছি লিখতে। কিন্তু প্রতিবারই আত্মকুণ্ঠিত আফতাব আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ তাঁর চেয়ে শতভাগের দশ ভাগ ক্ষমতা নিয়েও আমাদের শিল্পসাহিত্যের ভুবনে কত কত অক্ষম লেখক শুধু প্রকাশের দিক থেকে অকুণ্ঠ হবার কারণে কবি-লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কিন্তু এরকম ভাবনা কখনও আফতাবকে আচ্ছন্ন করেনি। তিনি যেন নীরব কবি। নিজের ভেতরে শিল্পরসের ভিয়েনে নিজেকে অনুভব করে গেছেন। এই যে নিভৃতি, এই যে শিল্পপ্রকাশের ভুবন থেকে দূরে থাকা, আফতাবের স্বভাব ছিল এমনই। ভীষণ আত্মসচেতন, আত্মবিচারকের কাঠগড়ায় নিজেই নিজেকে দাঁড় করিয়ে হয়তো ভেবেছেন, যা আমি লিখছি অথবা ভাবছি, তা কতটা শিল্প হয়ে উঠছে। ফলে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মাত্র দুটি। কিন্তু তাঁর পঠনপাঠনের পরিধি আর বোধের বিস্তৃতি ও গভীরতা এতটাই ছিল যে অনায়াসে তিনি আরও অনেকগুলি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। তবু, তবু যে দুটি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা তিনি তাতেই শিল্পের চূড়া স্পর্শ করেছেন আফতাব। যে শেষ কাব্যগ্রন্থটি আমার সংগ্রহে আছে – যা কিছু স্বর্গীয় ছিল – সেই বইটির কবিতাগুলি পড়লেই বোঝা যায়, কত চমৎকার কবিতা লিখতেন আফতাব।
২
‘যা কিছু স্বর্গীয় ছিল’ চার পর্বে বিভক্ত কাব্যগ্রন্থ – সিসিফাসের স্বপ্ন শেকল পরা; নিয়ন্ত্রিত নই, তবু; সিংহ, সাগর, বালির এ ভুবনে; নিদ্রাহীন শরীর প্রহরী এবং কাঠগড়াতেই আছি বলেই। প্রথম অংশেই যে মিথের পরিচয় পাচ্ছি তাতেই বোঝা যায়, তার ভাবনা কোন দিয়ে গড়িয়ে আসবে, এবং যা অনিঃশেষ। স্বপ্ন আছে, কিন্তু শেকলে বাঁধা। মানুষ হয়তো আপতিকভাবে স্বাধীন, কিন্তু পুরোপুরি স্বাধীন নয়। এ জন্যেই তাকে লিখতে দেখি, ‘নিয়ন্ত্রিত নই, তবু’। মর্ত্যজীবনে মানুষ কখনই এই স্বাধীনতা পায়নি। তবু… এই অব্যয়বাচক শব্দটি বিশেষ ভাবে লক্ষ করা প্রয়োজন। মানুষ নিয়ন্ত্রিত নয়, ‘তবু’, অর্থাৎ তার মুক্তিহীনতা অনিঃশেষ। সেই পাষাণের ভার তাকে নিরন্তর সইতে হবে। তিনি লিখছেন :
তোমরা খুঁজেছো বিন্দু আজীবন বৃত্তের আদলে :
বিন্দুটুকু থাক – আজ সব বৃত্ত তোমাদের নাম।
বৃত্ত আর বিন্দুর দ্বৈরথ। বৃত্ত থেকে মানুষ চলে যায় আরও বৃহত্তর বলয়ে। সিংহ, সাগর, বালির ভুবনে।
জ্বলে ওঠে।
ভেসে যায়,
বৃত্ত থেকে অচেনা বলয়ে।
তবু প্রাচীন নক্ষত্রের অপসৃয়মান আলোছায়া কখনো নেভে না, ‘জেগে থাকে’। জীবন যেন ‘নিদ্রাহীন পরীর প্রহরী’ :
কাকে যে তৃষ্ণা দিলে, কাকে দিলে জল :
এমন সরল
করে এঁকে দিলে প্রেতচিহ্ন বুকে –
ডেকে যায়, আসমুদ্র, ডেকে যায় পাখি।
এইখানে এসেই বোঝা যায়, জীবনাসক্তির আশ্চর্য় দিপ্তী কবিকে কতটা প্রাণিত করেছে। এর সবই তাঁর পুত্রকন্যা ও প্রিয়জনদের ঘিরেই ঘটছে। সেখানে আবছায়া ভাবে প্রেমিকাও স্থান করে নেয়। ‘ব্যালেরিনা’ কবিতাতে লিখছেন :
তোমাকে দেখবে বলে সব পাতা হয়ে ওঠে আজো ব্যালেরিনা;
যা কিছু পুরোনো ছিল, তাও হেসে আনমনে অধীরা নবীনা।
শেষে স্বপ্নেই সমর্পন, পুত্রকে ঘিরেই লিখলেন ‘স্বপ্নে মোড়া স্বল্প সাহস’ কবিতাটি :
নিরেট সোজা শব্দে আমার
সামান্য যে প্রেম…
বুকে তোমায় জড়িয়ে ধরে
সেটুকু রাখলেম।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অনিঃশেষ হলো কুয়াশা :
কাটেনা
কুয়াশ দিন
আজো…
আফতাব আহমদের কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদে যে কথাগুলি উৎকীর্ণ রয়েছে সেই কথাগুলি এখানে আবার উল্লেখ করি :
লোকালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে, আমন্ত্রণহীন হলেও বিন্দু আর বৃত্তের তারতম্যটি তিনি বোঝেন। পতিত মানুষ আর তার স্বর্গাভিমুখী আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে পারেন মৃদু কিন্তু স্পষ্ট স্বরে। অ্যালগোরিদম আর স্বয়ম্প্রভা, ব্যালেরিনা আর বেহুলা পাশাপাশি অবস্থান নেয় সামান্যকে অসামান্যতা দিয়ে। প্রেম আর অপ্রেমের ব্যর্থতা আর উত্তরণের কথা তুলে আনতে পারেন অনিবার্য সরলতায়।
৩
মালার্মেই বলেছিলেন কথাটা, আপন সত্তার গভীরে যে শূন্যতা বিরাজমান তাকেই প্রকাশ করেন শিল্পী। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা বাস্তব আমাদের এই প্রচেষ্টার প্রতিবন্ধক হিসেবেই থেকে যায়। অবাক হইনি, আফতাব এই পাথরপ্রতিমাকেই তাঁর কবিতার সূচিমুখ প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন তিনি, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল গভীর। চর্চাও করেছেন ছন্দোবদ্ধ বিশুদ্ধ নিখুঁত কবিতার। শিল্পের যে তীক্ষ্ণতা, অনুভবের যে তীব্রতা, গহনস্পর্শী গভীরতা, তার সবই আফতাবের কবিতায় খুঁজে পাওয়া যাবে। তিনি যদিও লিখেছেন, “অসাধারণত্বের কোনো দাবি নেই, কিছু শব্দ, দুই সুতো, এ ফোঁড় ও ফোঁড়”; আমাদের স্পর্শের বাইরে এখন এই মানুষটি, কিন্তু তাঁর কবিতার শব্দ ছুঁয়ে ছুঁয়ে অসামান্য এক সংবেদনশীল কবিকে শরীরী অবয়বে যেন ফিরে ফিরে পাচ্ছি।
মানুষের মৃত্যু হলে তবু মানব থেকে যায়।
আফতাব আহমদ | কবিতাগুচ্ছ
‘যা কিছু স্বর্গীয় ছিল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে মাসুদুজ্জামান কর্তৃক নির্বাচিত
মুগ্ধতা
কারো কারো কথা আজো মুগ্ধ হয়ে শুনি।
ভাবি, কি করে পারেন তারা ডামাডোলে
খুঁজে পেতে বীরচিহ্ণ ঘোর রণভূমে –
চোখ বুজে বলে যেতে ঋজু কন্ঠস্বরে
যা কিছু স্বর্গীয় ছিল তার ইতিহাস,
ত্রুটিহীনতার গল্প, সাফল্যের গান । –
কারো আঁকা ছবি আজো মুগ্ধ হয়ে দেখি।
ভাবি, পিতা, এত যে জটিল মেঘরাশি
ভেসে ভেসে নীলাকাশ হেলায় সাজালো,
ভাঙলো পুরোনো বাড়ি নিজের নিয়মে –
তারা পারে, আমি কেন এখনো পারিনা,
জটিল আদলগুলি সরলতা দিয়ে,
কয়েকটি আঁচড়ে তুলে আমার এই
প্রেমশূন্য খাতাকে ভরাতে অনায়াসে?
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
স্বপ্নে মোড়া স্বল্প সাহস
[আবরার আহমদ, সত্তার অধিক তুমি]
আমার নেই বিত্ত বেসাত,
চক-মেলানো বাড়ি;
আমার নেই ব্যাংকে লকার,
নিশান দেয়া গাড়ি।
আমার নেই পিতৃ-তালুক,
সুঠাম দ্রাক্ষা বন;
আমার নেই শিল্পখ্যাতি,
পেটেন্ট আবেদন।
আমার আছে তোমার জন্যে
চোখ গড়ানো জল :
স্বপ্নে মোড়া স্বল্প সাহস,
শব্দের সম্বল।
নিরেট সোজা শব্দে আমার
সামান্য যে প্রেম ……
বুকে তোমায় জড়িয়ে ধরে
সেটুকু রাখলেম।
১৯ মার্চ, ২০১৫
খোঁপাতে তার শালুক দোলে
কথা ছিল এই পাবনে
দেখতে তারে যাবো
কোথাও খুঁজে পাইনা তারে
বৃথাই বিসর্জন।
শোনরে বেলী, শোনরে যুথি,
শোনরে তোরা শোন,
মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে
পাগলপারা কোণ৷
যতই তারে খুঁজিস পথে
অস্ত্র ঢেকে অয়েল ক্লথে
দেয়ালে দিস ধরার নোটিশ
পুলিশি সমন,
সাত রাস্তায় দেখবি হঠাৎ
দাঁড়িয়ে আছেন সাহসিনী
খোঁপাতে তার শালুক দোলে
আঙুলে আই-ফোন।
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
তোমাদের নাম
আমার গোধূলি থেকে সব আলো তোমাকে দিলাম…
শেকড়ের গভীরতা, অন্ধকার, পাথুরে পথের উৎরাই,
দেয়ালে ঝোলানো কাঁথা, জীবনের আঁকিবুকি, ছাই
ওটুকু পেছনে থাক, বাকি সব তোমাদের নাম…
ঋষিমন্ত্রে দীক্ষা ছিল, ছিল ভোরে পাখির সুনাম,
পাঁচটি আগুন ছুঁয়ে কেটে গেছে কত ঋদ্ধকাল;
নির্জ্ঞান দুঃখী নয়, তবু তার কাটেনি আকাল–
নিমন্ত্রিত নই, তবু তোমাদের জানাই প্রণাম।
লাজুক ছায়ার নীচে সারাদিন ছিল জ্যেষ্ঠসাম,
বিন্দু এক, একথা সূর্য জানে, অন্তরীক্ষ জলে
তোমরা খুজেঁছো বিন্দু আজীবন বৃত্তের আদলে :
বিন্দুটুকু থাক আজ সব বৃত্ত তোমাদের নাম।
২ আগস্ট, ২০০৮
গল্প
গল্পটা এরকম ছিল না কখনো…
সবকিছু শুরু থেকে শেষ হয় জানি,
কিছু গল্প শেষ থেকে শুরু হতে পারে।
হয়তো আকাশ ছিঁড়ে বৃষ্টি নামেনি,
হয়তোবা মেঘদূত অপেক্ষায় দূরে
উত্তর নেবে বলে এখনো দাঁড়িয়ে।
মাথা উঁচু সান্তিয়াগো নিঠুর সাগরে
মারলিন গেঁথে আছে অপলক চোখে;
উঠোনে একটি কোণা এখনো ভেজেনি,
নয়নচারার দিকে হাঁটছে কিশোর।
কিছু পাড় ভেঙে গিয়ে হয়তো ওঠেনি,
গানগুলি থেমে গেছে ঠোটের ওপারে।
কিছু স্বপ্ন নিভে গিয়ে হয়তো মরেনি।
গল্পটা এরকম ছিল না মোটেই …
৩০ আগস্ট, ২০১৩
তোমাকে দেখি না
পড়ে জল, নড়ে পাতা
সারা রাত
বেজে যায় বীণা
শত মুখ
দিনমান
ভাসে চারিদিকে
নেচে ফেরে
মাতাল দখিণা
আমি শুধু তোমাকে
দেখি না।
১৪ এপ্রিল, ২০১৫
চলে যাচ্ছি
[শামীম আহমেদ, বন্ধুবরেষু]
১
এমন পথে কখনো হাঁটবো না :
চলে যাচ্ছি, যাচ্ছি চলে দূরে…
২
মেঘ নিয়েছে সারা আকাশ কিনে,
আমার শুধু ভেজার অধিকার।
৩
বন্ধু হবার কথা যাদের ছিল,
সবাইকে কি জানান দিয়ে যাবো?
৪
সিংহ, সাগর, বালির এ ভুবনে
চিরদিনের শত্রু কে আর থাকে।
৫
ইট পাথরের শেকল ছেঁড়া দায়
চলে যাচ্ছি, যাচ্ছি চলে দূরে।
৬
পিচের রাস্তা মরা পাতার মতো
সামনে সবুজ অচেনা পথ খোলা।
৭
আলোর দিকে যাবার কথা ভাবি,
গোলক ধাঁধায় জড়ানো সংসারে।
৮
মর্মরিত সুঠাম স্বপ্নভূমি;
পদধ্বনি এ পাশটাতেই থামে।
৯
যাদের কাছে রাখবে ভেবেছিলে,
তারা এখন কাঠের ফ্রেমে বাঁধা…
১০
শেকড়গুলি উপড়ে ফেলা সোজা,
যেখানটাতে শান্তি, সেটাই ভিটা।
১১
কাউকে ভেবে চোখের কোণা ভারি?
তারো বুকে হয়তো পাথর জমা।
১২
অবশেষে নামবো নীরব জলে :
চলে যাচ্ছি, যাচ্ছি চলে দূরে।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
প্ৰপাত
ঝরা পাতা
অশ্রু আর
অবিরাম ঝরে যাওয়া
এই বৃষ্টিকণা;
ধূমকেতু
প্রাক গোধূলির ছায়া
মরা কটালের হাওয়া
প্রজাপতিদের আনাগোনা;
আমিও তাদের
মতো
ঝরে যাই;
তুমি তা জানোনা।
২ আগস্ট, ২০১৫
ব্যালেরিনা
তোমাকে দেখবে বলে সব পাতা হয়ে ওঠে আজো ব্যালেরিনা;
যা কিছু পুরোনো ছিল, তাও হেসে আনমনে অধীরা নবীনা।
আজীবন ক্ষরা থেকে আলগোছে কিছু গল্প বাঁচিয়ে রেখেছো,
বুক জুড়ে অন্ধকার, ভোরের আলোকে তবু আঙুলে মেখেছো।
আসেনি অনেক চিঠি, পর্যটনে বহু জল গড়িয়েছে দূরে :
আইভি লতারা কেঁপে পাথরকে জড়িয়েছে তৃষ্ণার সুরে।
হারানো পথের খোঁজ করেনি তোমাকে জানি তবু স্বপ্নহীনা;
তোমাকে দেখবে বলে শীতের পাতারা তাই আজো ব্যালেরিনা।
২১ নভেম্বর, ২০০৯
আধোঘুমে, ডিঙিনৌকো
১
বেলা শেষে সব কিছু
ছবি
হয়ে
যায়…
২
আধোঘুমে,
ডিঙিনৌকো,
দিকভ্রান্ত ঘুড়ি,
আজো ডাকে আয়,
কাছে আয়…
৩
যাদুর সিন্দুকে
স্মৃতি,
পাখির পরান…
8
চোখের পাতায় থাক
সব গান,
সব অভিমান…
৫
কাটেনা
কুয়াশা দিন
আজো…
১৪ এপ্রিল, ২০১৫
হু হু এই নীরব আকাল
মেঘেরা স্বপ্ন দেখে :
কালো, নীল, পীতবর্ণ, সবুজ বা লাল।
ডানায় মোহনা নিয়ে
আধো পেটে ফিরে যায় পর্যটক পাখি।
পাড় ভাঙে, জাগে চর
কাদা পথ ভেসে ওঠে জলহীন নদীর ভেতর
বেড়ার ওপার থেকে কিষাণী আকাশে রাখে চোখ :
যদি মেঘ ঘুম ভেঙে আলতো তাকায় এই দিকে
ভুল করে নেমে পড়ে আধমরা এই জনপদে,
যদি মেঘ দয়া করে, নিয়ে যায় হু হু এই নীরব আকাল…
মেঘেরা স্বপ্ন বোনে, বুনে যায় :
ধূসর গোলাপি, সাদা, সবুজ বা লাল।
এখনো সন্ধ্যা নামে। সারাদিন জল খুঁজে
হতাশ গরুর সাথে ফেরে না রাখাল।
১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪
যদি চাও
যেতে চাইলে যাবে।
কারো পথ চেয়ে রং ফিকে হয় নাকি?
কোনো আয়ুষ্মান গাছ
মনে রাখে তার নীচে কারা থেমেছিলো?
আলো সব ছায়া হবে, ছায়াগুলি আলো।
দোয়াতের কালিটুকু
ধুঁকে ধুঁকে অবশেষে হয়তো শুকাবে।
মেঘদূত ভাবে
প্রাপক হারিয়ে গেলে
শেষ চিঠি কার কাছে যাবে?
৬ অক্টোবর, ২০১৫
আফতাব আহমদের প্রকাশিত গ্রন্থ : যা কিছু স্বর্গীয় ছিল (কবিতা, ২০১৬) এবং তুমি নও কখনো আঁধারে (কবিতা, ১৯৯১)
ছবি : আফতাব আহমদ ও গুলতেকিন খানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Leave feedback about this