উপদেশ
দিনের শেষে যেন ভিখিরি, উপদেশ, তোমার মলিন বস্ত্র দেখি, গৃহে ফিরে যায়;
দুপুরে, গনগনে ক্রোধের জন্য এখন দুঃখ হয়; মনে হয় বসি তোমার চুলার পাশে, লকলকে আগুনে ঢেলে দেই প্রেমের শিখা;
ওই হাড়িতে কী ফুটছে? মন ও মনীষা টুকরো-টাকরা হয়ে আছে রাঁধতে কীসের ব্যাঞ্জন?
আর তোমার বেঁচে-যাওয়া জলে ধুয়ে নেই রূঢ় হাতমুখ; আর অন্ন মেখে খাই তোমারই প্লেটে, মুখোমুখি;
ভাবো, তোমার হাড় কিছুটা মাটিতে মিশে গেছে, কিছুটা দগ্ধ; তবু তোমার মুখ দিনের চেয়েও উজ্জ্বল; কখনও আমাকে পেয়ে গেলে পথে, বলবে, ফের বলবে;
তুমি মাছ, জল ছাড়াও বেঁচে থাকো শুখা মাটির মর্মে; তখন হয়ত আমি মাটিতে শয্যা বিছিয়ে চোখের ভেতর জ্বালিয়ে রেখেছি গুড়ো গুড়ো নক্ষত্র; তখনও তুমি বলো, বলো…
কাঠ
তোমাকে কাঠ ভেবে খোঁদাই করেছি সারারাত্রি; এখন যাও, তোমার বুক মেলে ধরো পাখিদের দিকে;
পাবে, পাবে আরো রহস্যের পথ, হারাতেও পারো অরণ্যের জটিলতায়; আর আমি আরেকটি কাঠ নিয়ে ভাবছি, শিল্প কেবলই শিল্পীর অন্তর্দাহ বাড়ায়?
যদি হতই একটি নৌকা, সঙ্গে নিয়ে বিবিধ জলচর, রাত্রি শেষে নিভন্ত আকাশের নিচে শুরু করা যেত সরল আরেকটি দিন;
ঘোড়া
তোমার কথা ভাবতেই, লাফিয়ে ওঠে ঘোড়া, যে ছিল মৃত পায়ের উপর দাঁড়িয়ে; হয়ত ছিল অচিহ্নিত মর্মে কিছুটা হাওয়া, ডেকে ওঠে চিহিহিহি…
আমি তোমার ডাক ভুলিনি, পেশিতেও থই থই সমুদ্র; তুমি তোমার আগুন দৃঢ় করো আর শুয়ে পড়ো, আর বলো, সে যেন অতীত থেকে কেবল তরবারির দ্যুতিই চেয়ে নেয় বানাতে একেকটি মায়া হরিণ;
মর্সিয়া থেকে
দুহাতে জঞ্জাল সরিয়ে তোমাকে পাব, এক দুপুরে;
কোনো ঘুঘু ডেকে ডেকে যদি অবশ করে তোলে আমাদের, তুমি তোমার দুটি ইরেজার ঘসে ঘসে আমাকে জাগিয়ে তোলো মর্সিয়া থেকে;
আমি নোনাধরা দেয়ালের পাশে বেড়ে ওঠা কামরাঙা গাছ; আমার হাতের দশটি আঙুল ছিটকে গেছে মার্বেলের মতো;
আমাকে স্পর্শের সরলতা দিয়ে প্ররোচিত করো সমুদ্র ছিনতাইয়ে;
বিস্কুট
রাখো এইটুকু, শরীর অথবা অংশত কিছু; অনেক ঝড়ের শেষে পাখিও শস্যের মতো বিস্রস্ত;
এখনও পুরনো ছুরিটি বহু রক্তের গাদ মেখে জ্যান্ত; সে যদি নাইতে পারে আগুনে-জলে, আমিও চকচকে, ঝা-যুবক;
তারচেয়ে এসো, কফিশপে বসি অনেক ক্লান্তিতে জমাট বেঁধে; কাচের বাইরে চোখ রেখে পান করি পরস্পরের তেতো;
আর, তারও আগে, ময়দার খামির উপর নাচি নাচি নাচি, আর গনগনে গুহায় সেঁকি অন্তর্গত বিস্কুট;
ওই তো শিশুসদনের ডায়নিংয়ে রাতের নক্ষত্র নামছে;