পর্ব ৪
এলা ফোন করে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার মশাই?
গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে সে ভাটাতে চাইছে।
আমি তখনো বাড়ি ফিরিনি। রাসবিহারি মোরে দাঁড়িয়ে। একটাও অটো তারাতলা যেতে চাইছে না। বললাম, আধঘণ্টা ধরে ট্রাই করছি। একটাও অটো পাচ্ছি না।
বেশ। আরও খানিকক্ষণ ট্রাই কর। তবে বাড়ি ফিরে ফোন করিস। একটা দারুণ খবর দেব।
এলার দারুণ খবর সবসময় আমার কাছে নিদারুণভাবে এসেছে।
কিছুদিন আগে জানিয়েছিল, একটা অসাধারণ কাজের সুযোগ এসেছে তোর।
কী?
ধুলাগড়।
মানে?
মানে তুই আমার সঙ্গে ধুলাগড় যাচ্ছিস।
কেন?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে একটা সভা রয়েছে। আমি ওখানে বক্তৃতা দেব।
কিন্তু ধুলাগড় তো এখন শান্ত। খবরেও কিছু বেরোচ্ছে না।
শোন্, খবরের কাগজের উপর এখন বিশ্বাস রাখে শুধু চাড্ডিরাই।
আবার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা লেগেছে নাকি!
ধ্যেৎ বোকা। দাঙ্গা লাগবে কেন? দাঙ্গা লাগেনি। তবে ব্যাপারটা এখন অন্যদিকে ঘুরছে।
কেমন?
এনআরসি, সিএবি… এইসব নিয়ে আবার ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা চলছে। এবার আমাদের অনেক আগে থেকেই তৈরি থাকতে হবে।
আমরা দাঙ্গা থামাব? এটা তুই বিশ্বাস করিস?
এলা হেসে ফেলল, চল না। এমনিতে তো ঘরে বসে ভটরভটর করিস সারাদিন। লিখছিসও না। এই সুযোগে একটা নবেল কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারবি। তাছাড়া একজন শিক্ষিতা সুন্দরী মহিলার পাশে বসে যাবি – তোর তো আপত্তি থাকবার কথা না।
অগত্যা ধুলাগড়!
কথা ছিল ট্রাম কোম্পানির বাসে করে যাব। ধর্মতলায় নামতেই বুঝলাম পেছনের পকেট হাল্কা। অর্থ্যাৎ, মানিব্যাগ ধাঁ। মন খারাপ তো দূরের কথা, এলা বলল, ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্যই করে।
এখন বুঝি শিক্ষিতা মহিলারা ভগবান বিশ্বাস করে?
ভগবান তো আছেই। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নই নেই। তুই দেখিসনি?
না।
ঐ দেখ।
দেখি স্টপেজে বাস দাঁড়িয়ে। লোকজন উঠতে শুরু করেছে। আমরা পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। অবশ্যই এলা জানলার সিটটা নিল।
পকেট খালি মানেই ছোঁকছোকানি বাড়বেই।
বাদামঅলা উঠেছে।
এলাকে বললাম, বাদাম।
দেখলাম।
খাব।
ধামড়া ছেলে বাদাম খাবি তো খা। আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?
এলার কথা শুনে বাদামঅলা করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল।
থাক। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
এলা দশটাকার নোট বের করল, দিন।
সে বাদামের প্যাকেটটা নিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে খেতে থাকল।
ফেসবুকে আমি বিশেষ সচল নই। তবে নিয়মিত কিছু লোকের ছবি আর লেখায় লাইক দিয়ে থাকি। সেগুলো ইতোমধ্যেই সারা হয়ে গিয়েছে। সামনের দিকে চেঁচামিচি হচ্ছিল। সম্ভবত বসার সিট নিয়েই গণ্ডগোল। এলার মুখে রোদ পড়ছে। সে একখানা ম্যাগাজিন বের করে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু বাসের লম্ফঝম্পে ঠিকমতো সামলে উঠতে পারছে না। ওর কষ্ট দেখে বেশ আনন্দই হচ্ছিল।
সে আমাকে তিন-চারটে বাদাম দিল।
বাদাম কটা নিয়ে আমি আগের মতোই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম।
এবার জোরের সঙ্গে বলল, আমার কিন্তু মাইগ্রেন আছে।
জানি তো।
মা ই গ্রে ন!
বললাম তো জানি।
এখুনি মাথা ধরা শুরু হয়ে যাবে।
এসে গেছি প্রায়। নেবে ওষুধ খেয়ে নিস।
আমরা দুজনা দুদিকে তাকিয়ে ধুলাগড়ে নামলাম।
জাঁকজমক বাজার। টোটো, রিক্সা, বাসের টেক্কায় মনে হল ফুটন্ত হাঁড়ি। ভাত ফুটছে।
বললাম, সিগারেট খাব।
এবার আর বাধা দিল না। সিগারেট কিনতে যাচ্ছিলাম। একটা বাইক গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেল।
ধুলাগড়!
এলা মুচকি হেসে বলল, ধুলাগড়!
এবার?
ফোন করে জানতে হবে।
ফোন করে জানা গেল বিদ্যাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ে সভার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চা-দোকান রাস্তা বাতলে দিল। স্কুলটি কাছেই। তাও আমরা টোটো নিলাম।
স্কুল গেটেই আয়োজকরা অপেক্ষা করছিলেন। এলা আমার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিল।
স্থানীয় আশাকর্মীরাই সভার আয়োজন করেছিলেন। আশাকর্মীদের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। এখানে এসে জানতে পারলাম এঁরাই গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা এঁদের মাধ্যমেই গ্রামীণ মানুষদের কাছে পৌঁছয়।
ছোট্ট ক্লাসরুম। জনাতিরিশেক মানুষ জড়ো হয়েছেন। বেশিরভাগই মহিলা।
একজন আশাকর্মী তাঁর নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। কর্মসূত্রে তাঁকে হিন্দু পাড়া আর মুসলমান পাড়া – দু-জায়গাতেই যেতে হয়। তিনি বলছিলেন এনআরসি আর সিএবিকে কেন্দ্র করে কীভাবে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। গ্রামের গরীব মানুষজন, বেশিরভাগের কাছেই কোনো সরকারি পরিচয়পত্র নেই। যাওবা কিছু আছে সেখানে অজস্র ভুল। জমিহীন দরিদ্র মানুষ কীভাবে প্রমাণ করবে তারা দেশের নাগরিক? তিনি আরও জানালেন প্রস্তাবিত নতুন নাগরিকত্ব বিল নিয়ে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে টেনসন বেড়েই চলেছে। যে-কোনো সময়, কোনো ছোটোখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যেতে পারে।
বাচ্চা মেয়েটির নাম জুলাফা। সে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা আবৃত্তি করল।
ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ছিল। রান্নাবান্নার কাজ শেষ করে গৃহবধূরা তাঁদের স্বামী আর বাচ্চাদের সঙ্গে আসছিলেন। পেছনের বেঞ্চে একজন বোরখা পরা মহিলা বসেছিলেন। তিনি হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। বললেন তাঁরও কিছু জানার আছে। তখন বক্তৃতা করছিলেন একজন স্থানীয় ডাক্তার। তিনি কোনোমতে নিজের বক্তব্যটাকে ছোটো করে মহিলাটিকে ডেকে নিলেন।
মহিলাটি নিজের নাম বললেন – আয়েশা বিবি। মাইকে তাঁর গলার স্বর কাঁপছিল। বোঝা যাচ্ছিল এইভাবে সভায় কথা বলার অভ্যাস তাঁর নেই। তিনি বললেন, আমার বিয়ে হয়েছিল ১৬ বছর বয়েসে। কোনো কাগজে সইটই করা হয়নি। মলিসাব বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিল। স্কুল যে সার্টিফিকেট দিয়েছে সেখানে আমার নাম আয়েশা সুলতানা। কিন্তু ভোটার কার্ডে আমার নাম দিয়েছে আয়েশা বিবি। আমার আব্বার নামের বানানও ভুল। সফিকুল আলিকে মফিকুল আলি লিখেছে। এখন ওরা যদি আমার কাছে প্রমাণ চায়, কোথা দিয়ে প্রমাণ দিব? যদি বলে এই দেশের মানুষ না, তালে কি আমাকে ধরে নিয়ে যাবে? ছাড়বে না? ঐ আমার মেয়ে। আয়েশা বিবি পেছনের বেঞ্চের দিকে তাকালেন, ঐ আমার মেয়ের বাপ।
তাঁর কথা তখনো শেষ হয়নি। এলার চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল। আয়েশা বিবির মেয়েটা মায়ের দিকে তাকিয়ে। সারা ক্লাসরুম থমথম করছে। আয়েশা বিরির বর মুখ নীচু করে ছিলেন। হয়ত অস্বস্তি হচ্ছিল তাঁর।
ডাক্তার বাবু এসে আয়েশা বিবিকে আশ্বস্ত করলেন। তখন আয়েশার মুখ লজ্জায় লাল। হয়ত সামনেটা তাঁর কাছে অস্পষ্ট ছিল। মেয়ের কাছে যেতে গিয়ে বেঞ্চের পায়ায় ঠোক্কর খেলেন।
খানিক চা-পানের বিরতি।
আমি চায়ের কাপটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছিলাম। অনেকক্ষণ সিগারেট খাইনি। পেছন পেছন এলা চলে এল। বলল, একটা সিগারেট দে।
এখানে সিগারেট খাবি?
কেন আমি সিগারেট খেলে ধুলাগড়ে দাঙ্গা বেঁধে যাবে? চিন্তা করিস না। বাথরুমে গিয়ে খাব।
স্কুলের বাথরুমে সিগারেট খাবি?
এলাকে চটানোর জন্যই এসব কথা বলা। সে বেশ চটে গেছে। বলল, কানটা কাছে নিয়ে আয়।
আমি ঘাড় নিচু করতেই সে বলল, ফাক্। বলেই সিগারেট আর দেশলাই নিয়ে চলে গেল।
চা বিরতিতে খানিক ঘেঁটে গেছিল। লোকজন কথা বলছে তো বলছেই। একজনের মোবাইল বেজে উঠল। আয়েশা বিবি নেই। তিনি চলে গিয়েছেন। বক্তব্য রাখছিলেন সুপর্ণা মিস্ত্রি – তিনিও আশাকর্মী। তাঁর কথাটি কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনল না।
এবার এলার পালা। সে মাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সে দাঁড়িয়ে রয়েছে অথচ বক্তব্য রাখছে না। ধীরে ধীরে ক্লাসরুমটা পুনরায় শান্ত হয়ে এলে সে শুরু করল। প্রথমেই সংবিধানের ১৪ আর ১৫ নং ধারা কী তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করল। তারপর প্রস্তাবিত নাগরিত্ব বিল নিয়ে বিশদে বলল। এলা নিজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল। শেষে নিজেই বলল, আমি আর আমার বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করব না। আপনাদেরকে একজনের গল্প বলেই শেষ করব। ঘটনাটি ঘটেছে আসামে। মহিলার নাম রশ্মিন আরা বেগম। তাঁকে সন্দেহের বশে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তিনি গর্ভবতী। রশ্মিন আরা বেগম কোনোরকম বেআইনি কাজে যুক্ত ছিলেন না। পুলিশের কাছে তাঁর নামে কোনোরকম অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড নেই। অথচ তাঁকে রাখা হল ক্রিমিনালদের সঙ্গে। তিনি প্রতিনিয়ত ভয় পেতেন। শুধু নিজের জন্য নয়, না-জন্মানো শিশুটির জন্যও। তাঁর সঙ্গে পরিবারের কারোকে দেখা করতে দেওয়া হত না। একটি ছোট্ট শোবার জায়গা। সেখানেই সারাদিন থাকতে বাধ্য হতেন। কোনো দোষ করেননি – তবু বন্দীজীবন। রাষ্ট্র তাঁকে সন্দেহ করছে, সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি দেশের নাগরিক কি না আর এই সন্দেহের বশেই তাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হল ডিটেনশন ক্যাম্পে। বিকেল পাঁচটার মধ্যে রাতের খাবার দিয়ে দেওয়া হত। তখনি খেতে হবে। তখন না খেলে সারারাত খাবার জুটবে না। রশ্মিন আরা বেগম এখন ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তবে তাঁর ভয় এখনো কাটেনি। বন্দীজীবনের কথা বলতে গেলেই তিনি শিউরে ওঠেন। কতো রশ্মিন আরা বেগম যে এখনো ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী তা আমরা জানি না। সেই সংখ্যাটা কয়েক শ’ , কয়েক হাজার, কয়েক লক্ষ হবে আগামীতে। এনআরসি, সিএবি বিরোধী আন্দোলন এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো মানবাধিকার আন্দোলন।
এলা বক্তৃতা শেষ করতে ক’মুহূর্ত সকলে চুপ। একজন আচমকা দাঁড়িয়ে ‘ইনকেলাব’ স্লোগান দিল। সঙ্গে সঙ্গে সে প্রত্যুত্তর পেল – জিন্দাবাদ।
এরপর একজন বয়স্ক কমরেড গণসঙ্গীত পেশ করলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সভার সমাপ্তি হল।
এবার ফেরার পালা।
এলা বলল, অ্যাডভেঞ্চার করবি?
সেতো করছিই।
এইরকম না। সত্যিকারের।
রিয়েলিটি একেক জনের কাছে একেক রকম।
শোন্, এখান থেকে বকূলতলা যাব। সেখান থেকে হেঁটে নাজিরগঞ্জ। আর নাজিরগঞ্জ পেরোলেই মেটিয়াবুরুজ। তোর বাড়ির কাছেই।
তোর ঘরে ফেরার প্লান নেই?
এলা হেসে ফেলল।
বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হল না। সিটও পেয়ে গেলাম।
নভেম্বরের শুরু। সুতরাং হাওয়া দিচ্ছে।
বললাম, এইবার সত্যি কথাটা বলা যাক।
বলে ফেলো।
এই যে এতো লড়াইয়ের বুলি আওরালি। ঘরে ঘরে ব্যারিকেড… এসব সম্ভব?
সম্ভব নয় বলছিস?
কীভাবে? দ্যাখ, আমি পেসিমিস্ট হচ্ছি না, কিন্তু এটা তো মানবি যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে জোরদার আন্দোলন দরকার। সেরকম পলিটিকাল দল কোথায়? কোনো সিভিল মুভমেন্টই হচ্ছে না। ঘরে ঘরে ব্যারিকেডের ব্যাপার তো অলীক কল্পনা।
এলা কিছুক্ষণ ভাবল। টিকিট কাটল। তারপর বলল, সব বড়ো আন্দোলনই প্রথমদিকে কোনো দল বা সংগঠনের হাতে থাকে। পরে প্রচুর মানুষ তাতে যুক্ত হয়। একটু ওয়েট কর।
এসব তো তত্ত্বের কথা। তোর মনে হচ্ছে না আমরা প্রত্যেকেই ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছি। এই সভাটির কথাই যদি বলি, খুব ভালো উদ্যোগ, কিন্তু সাকুল্যে লোক এসেছে ৬০-৭০জন। এই তো হাল।
এলা উত্তর করল না। আমরা বকুলতলায় নেমে পড়লাম। এখান থেকে নাজিরগঞ্জ ১৫ মিনিটের হাঁটা পথ।
বিকেল পেরিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের ভিড়। রোববারের বাজার জমে উঠেছে।
বললাম, এখনো অনেকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
কী?
এতো লোক, এতো দোকানপাট, এতো কালারফুল সন্ধে – এগুলো সব অন্যের হয়ে যেতে পারে।
ভাবছে। লোকজন চিন্তিত।
চিন্তিত বটেই। কিন্তু একা একা চিন্তা করছে। পাশে কারোকে পাচ্ছে না।
না। তা হতে পারে না। নিশ্চয় অনেকে রয়েছে। তুই দেখা পাচ্ছিস না। সাজিদ সিন্ড্রোম। আছে, কিন্তু তোর কাছে গায়েব!
আশ্চর্য।
আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতে পারছিলাম আমি সাজিদের জন্য কিছু সূত্র পেয়ে যাচ্ছি। হয়ত সে আমাদের চারপাশেই রয়েছে। সম্ভবত আমাদের দেখছে। আমাদের অনুসরণ করছে। কিন্তু আমি সাজিদকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।
শনিবার থেকে রবিবারের দুপুর অব্দি হাট চলে মেটিয়াবুরুজে। রবিবারের দুপুরের পর থেকে হাট ভাঙতে শুরু করে। আমরা সন্ধের দিকে পৌঁছনোর কারণে রাস্তাঘাটের ভিড় এড়াতে পেরেছিলাম।
এলা আতর কিনল। বিরিয়ানি খাওয়ার পর ওকে বললাম, নবাবি পান খাবি?
মেটিয়াবুরুজ থানা থেকে সোজা হেঁটে গেলে কাচ্চিসড়ক। সেখানকার বিখ্যাত পানের দোকানটিতে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্-এর ছবি টাঙানো। কথিত আছে নবাবের প্রিয় পান এদের কোনো পূর্বপুরুষই বানাতেন। জর্দার অভ্যেস নেই এলার। বাড় খেয়ে জর্দা খাবার পরই হেঁচকি তুলতে শুরু করে দিল। কাছেই সুরিনাম ঘাট।
নদী বয়ে চলেছে। নির্জন ঘাট। একদা মানুষ পাচার হত এই ঘাট থেকে। এখন নির্জন। হাওয়ায় মাদকতা ছিল। আমরা যেন জাহাজের আওয়াজ পেলাম। জাহাজে মানুষ উঠছে। মানুষ নয়; ক্রীতদাস ওরা। বোবা। চুপ। নগর নির্মাণে চলেছে অন্য মহাদেশে।
এলার মাথা ঘুরছিল।
অন্ধকারে কে যেন ডাকল।
ফিরে দেখি সাজিদ!
সে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিঃশব্দে। জাহাজের আলোয় তার শরীরের আধখানা দেখা যাচ্ছে মাত্র। আকাশের নক্ষত্র আমাদের থেকে অনেক ছোটো। চাঁদ ওঠেনি।
ঘরে ফিরলাম রাত ৯টা নাগাদ। খেয়ে এসেছি। সুতরাং, ঝুটঝামেলা নেই। এলা বাথরুমে ঢুকতে আমি ভদকার বোতলটা বার করলাম। সঙ্গে দুটো গেলাস। বরফ ছিল না।
সে বাথরুম থেকে ফিরল আমার টিশার্ট পরে। চুল থেকে জল পড়ছে। এসে আমার দিকে তাকাল না। বোতল থেকেই ঢকঢক করে ভদকা ঢেলে নিল গলায়। খাটে বসে দু-পা ফাঁক করে বলল, আয়।
শার্টটা কোনোরকমে খুলে তার কাছে যেতে বলল, চুষে দে’।
জিভ ঠেকাতেই বুঝে গিয়েছিলাম ও আগেই ভিজে গিয়েছে। ও আমার মাথাটা টেনে নিল। পা দিয়ে আমাকে পেঁচিয়ে ধরেছে। নোনতা জলের স্বাদ গালে ছড়িয়ে পড়ছিল। ও নিজেই কোমরটা উঁচু করে তুলল। আমি দুহাত দিয়ে ওকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। তারপর আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার মুখের উপর এসে বসল। নিজেই নিজের বুকে হাত দিচ্ছিল। টিপছিল। আমি হাত দিতে গেলে সরিয়ে দিল। বলল, গুদটা চুষে দে’। আরও জোরে।
আমি চোখের উপর শুধুই ওর তলপেটের দেখা পাচ্ছিলাম। গোলাপি-লাল অংশটা আমার নাক আর গাল চেপে ধরছিল। আমাকে কিছুই করতে হচ্ছিল না। কোমর দুলিয়ে ও নিজেই সুখ খুঁজে নিচ্ছিল। স্পষ্ট স্বরে শুধু বলছিল, গুদটা চুষে দে… জিভটা শক্ত কর… ওখানে…
কন্ডোম আনতে উঠেছিলাম। এলা বলল, লাগবে না। আয়।
দু-ঢোক ভদকা গলায় ঢেলে চলে এসেছিলাম। কিন্তু প্রবেশের পরেই বুঝে গেলাম বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারব না। দু-বার চাপ দিতেই পড়ে গেল।
পাশে শুয়ে সিলিংফ্যানের দিকে চেয়েছিলাম। এলাকে ‘সরি’ বলতে সে হেসে উঠল। একটা পা আমার গায়ের উপর রেখেছে। থুতুতে আঙুল ভিজিয়ে নিজেই আরাম নিচ্ছিল। চোখ বন্ধ। সেসময় আমি যেন অনুপস্থিত। ওদিকে আমি আবার সাজিদের উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। সে এলার আঙুল দুটো সরিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছিল। এলা কুঁকড়ে উঠছিল। সাজিদের আঙুল ভিজে। সে ভেজা আঙুলগুলো মুখে পুরে রস খাচ্ছিল। আবার তার গোলাপি-লাল গহ্বরে চালনা করছিল।
তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে আমি আবার রেডি হয়ে গিয়েছিলাম।
এলার ভেতর প্রবেশ করতে সে বলল, প্রথমে আস্তে আস্তে কর। এবার আর তাড়াতাড়ি ফেলবি না।
আমি কথামতো কাজ করতে পারছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম এবারও একই পরিণতি হতে চলেছে।
এলা বলল, আমার কথা ভাবিস না। অন্য কথা ভাব।
আমি আয়েশা বিবির কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করছিলাম। কল্পনা করছিলাম ওঁকে ডিটেনশান ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক সিনেমার মতো। ওর বাচ্চা মেয়েটা কাঁদছে। পুলিশের জিপ। আয়েশা বিবি মেয়ে আর বরের দিকে তাকিয়ে। জিপটা ছেড়ে দিল।
এলা বলল, আমার হয়ে গিয়েছে।
আমি তখনো শেষ করিনি। আরও কিছুক্ষণ চালাতে পেরেছিলাম।
তারপর আমরা সেইভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সাজিদ দরজাটা কখন ভেতর থেকে লক করে দিয়েছিল।
(চলবে)