তীরন্দাজ Blog কবিতা দীর্ঘকবিতা | রিমঝিম আহমেদ | উৎসব সংখ্যা ২০২৪
কবিতা বিশেষ সংখ্যা

দীর্ঘকবিতা | রিমঝিম আহমেদ | উৎসব সংখ্যা ২০২৪

কাউকেও বিশ্বাস না করে দিব্যি বেঁচে থাকা যায়?
মগজভরা ভ্রমণের পোকা ঝরিয়ে দিচ্ছে পাখা
শোকমালা পরে আর কতদিন ঘুরব!
পানিতে মৃত্যুগন্ধী ফেনা
মুখে তুললেই বমনেচ্ছা জাগে
পানিকেও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না

দুপুরের রোদও মার্জনা করেনি
যথেচ্ছা পুড়িয়ে দিচ্ছে ত্বক, জিভ-
আঙুল ছুঁয়ে আত্মা অবধি
গর্ভঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে রাত
কী অদ্ভুত রহস্য নিয়ে ফুটে থাকে ফুল না ঝরা অবধি!
ফুলকেও আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না

চতুর্দিকে লাফাচ্ছে চতুর শেয়াল
মাথাভাঙা গাছের কাছে যেসব দুর্দশার কথা বলেছি-
তা আর ফুল হয়ে ফোটেনি
অসীম ভ্রমের পাশে শুয়ে থেকে থেকে পচে উঠছে রাত
স্বচ্ছতোয়া চাঁদ নষ্ট করে দিচ্ছে ঘুম
চাঁদকেও আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না


কোথা থেকে শুরু করা যায়?
শুরুর পর কোথায় সে বিশ্রামাগার!
কুলায় ফেরে যে পাখি- তারও আছে গান-
ডানার দুলুনি
ঈষৎ সুখের পর মৃত্যুর সন্ত্রাসে কাটা পড়ে ছায়া
মানুষেরই পথ নাই- ঘর নাই

জীবন ও মৃত্যু, মাঝে হাহাকার
রক্তের ভেতর ঘুমায় চণ্ডাল-
বিষাদের ছানাপোনা হল্লা করে বাঁচে
আমার শরীর ঘেঁষে, ঘর-উঠান- আনাচে-কানাচে
গভীর জলতল, রুক্ষ মৃত্তিকার
বৃক্ষের সমীপে লেখে মরে যাওয়া ডাল

মায়ের মুখের মতো কেউ নেই
দরজার পাশে ঝোলে দেহহীন জামা
ছেঁড়াখোঁড়া রাত, তৃতীয় প্রহর
এমন ঈশ্বরও নেই, অরূপ-অতনু
পায়ের কাছে রাখি অশ্রু ও প্রণাম!
কোথা থেকে শুরু করি হাঁটা?
ধু ধু চরাচর…


কিছুই হচ্ছে না। যেমন হয়নি কোনদিন। ঘরের আনাজ ফুরাবার মতো করে আয়ু ফুরিয়ে যাচ্ছে। মাঝে কিছু দৃশ্য জমা করে রাখি। প্রেম-চুম্বন, ঝগড়া-সঙ্গম, পাহাড় ও নদী। নদীর ওপর সাঁকো, দু’পারের মানুষ, সংসার-সন্ততি ইত্যাদি। সুখী হওয়া মানুষের মুখে যেভাবে ঝড়ের দাগ ধীরে ফিকে হয়, তেমন ফিকে হচ্ছে শরীরের বর্ণমালা, যৌবনের বর্ণাঢ্য ভাষা। এইসব দৃশ্যের ভেতর অকালবৃষ্টি হয়। শীতের তীব্রতা বাড়ে। শহরের বিলবোর্ডে ছবি বদল হয়।

তুমিও তেমন দৃশ্য। ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মোমবাতি হয়ে গেছ। তারপর এক রাতে ফুরিয়ে দিয়েছ আয়ু।

আমিও নিজেকে দৃশ্যের অংশ ভাবি। জলরঙে আঁকা। জলার ধারে একা সারস। অবসন্নতায় উড়তে পারছি না।


খুব শান্ত, বাবু হয়ে বসে আছি পথে
নিজেকে পাহারা দিই। অশান্ত বাতাস
দিনলিপি লেখে ধুলা- পাতা ও বাকলে
থেমে গেছে বিচলন, আর কিছু হতে নেই…

যে আলো আকাশ ফেটে পৃথিবীতে এল
তাও বেদখল হয়ে যায়। নাভির ব্যথায়
ঘুমায় না গাছ। পাখির মরণ দেখে পাখি
এই অসুখের দিনে কে কার সুক্ষ্ম চালাকি?

শেষ সম্বল হারিয়ে যা-কিছু আঁকড়ে
ধরা আছে মনুষ্য রীতিতে, তা শূন্যতা।
এখন মূলত অতিক্রান্ত পথে মগ্ন
পাথর ব্যঞ্জনা আঁকে, ধ্যানী নীরবতা

আমার চাওয়া, আমাকে। স্বহস্তমৈথুন
শিখরে উত্থিত জ্যোতি ব্যগ্র পূর্ণরাগে…


প্রেম নয়। একটা অনন্ত ধানখেত মাড়িয়ে যেতে চাই গরম ভাতের দিকে। অন্নই কি প্রকৃত ঈশ্বর নয়! এখনো অ-সুখ নামেনি শরীর থেকে। ছায়াঘোর মনের ভেতর একটা দীঘল বন চুল খুলে দিয়েছে রোদে। পশুদের মাংস খাওয়া শেখার আগে মানুষ পেয়েছিল নিজ মাংসের ধারণা। দুর্দিনের কথা আর বলব না। দুর্দান্ত বৃষ্টি বাসনা ঘুমিয়ে থাক তপস্যালব্ধ চোখে। মণিময় হয়ে উঠুক যা-কিছু ক্ষত। আর কোনো শিশুর দিকে বাড়াব না আদরের ঘুণ। সমস্ত শ্মশান হেঁটে কুড়িয়ে নিয়েছি মানুষের ভস্ম। কোনও এক মেঘময় দিনে কানে নীলফুল গুঁজে মরে যাওয়া ছাড়া অন্তিম বলে আর কিছু নেই। সময়ের রাক্ষস ক্ষুধাপীড়িতের মতো হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। হে বিষাদ, মধুরিমা- যেতে দাও!

Exit mobile version