তীরন্দাজ Blog কথাসাহিত্য ছোটগল্প ‘বলো বাবা!’ | লুৎফি আকালে | জয়িতা বাগচী অনূদিত ছোটগল্প
কথাসাহিত্য ছোটগল্প

‘বলো বাবা!’ | লুৎফি আকালে | জয়িতা বাগচী অনূদিত ছোটগল্প

পড়তে সময় লাগবে ৩ মিনিট

গল্পকার লুৎফি আকালে মরক্কোর লেখক। তাঁর ব্যাঙ্গাত্মক ছোটগল্প সংকলনের নাম ‘স্বাধীনতার রাতগুলি’। ‘জোন আফ্রিক’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন ‘সব ঠিকঠাক চলছে’ নামের একটা কলাম। ‘বলো বাবা’ গল্পটি সেখানেই প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারির সংখ্যায়। আকালে লেখালেখি করেন ফরাসি ভাষায়।

++++

‘ও বাবা মরক্কো কোথায়?’
‘আফ্রিকায়।’
‘ওই যেখানে জিরাফ আর জলহস্তি থাকে?’
‘না, আরও উঁচুতে – উত্তর আফ্রিকায়।’
‘তাহলে মরক্কোতে কারা থাকে?’
‘আরবের লোকেরা।’
‘আমি তো ভাবতাম সব আরবই আরবদেশে থাকে…’
‘আসলে আরবরা সব জায়গায় আছে, এমনকি এই মেট্রেতেও। মরক্কোয় আরবরা বের্বের।’
‘কিন্তু বের্বেররা তো বর্বর, তাই না?’
‘না, না, বর্বররা একদম আলাদা – তারা ছিল অনুপ্রবেশকারীর দল।’
‘হ্যাঁ, কিন্তু গতকাল যে তুমি টিভি দেখতে দেখতে বলছিলে আমাদের সাধের ফ্রান্সে আরবরা অনুপ্রবেশ করছে।’
‘ও হ্যাঁ… কিন্তু সেটা তো এক জিনিস নয়। আরবের অনেক ভালো লোক আছে, যেমন আমাদের প্রতিবেশী মুদি দোকানদার ইব্রাহিম।’
‘কিন্তু পরশুই তো তুমি ওকে চোর বলছিলে, কারণ সে সুযোগ পেলে দাম বাড়িয়ে টাকা রোজগার করে।’
‘আমার রাগ হয়েছিল তাই বলেছিলাম। ব্যাস্।’
‘তুমি মরক্কোর কাউকে চেনো?’
‘না, ঠিক চিনি না, তবে রাস্তায় মাঝে মাঝে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়।’
‘তাদের সঙ্গে কোন ভাষায় কথা বলো?’
‘আমি তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলি না, কারণ আমি তাদের চিনি না।’
‘কিন্তু না চিনলে কী করে বুঝলে তারা মার্কিন নয়, মরক্কোর?’
‘কারণ মার্কিনিরা সাদা।’
‘মাইলস ডেভিস আর কার্ল লু্ইসের মতো?’
‘না, তাঁরা আফ্রিকান।’
‘এবার তো আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। ইব্রাহিম আমার আর তোমার মতোই সাদা; সে কালো নয় আর তবু তুমি বলছো ও আরবের।’
‘তার কারণ আরবীয়দের অনেকে সাদা হয়, কিন্তু মরক্কোর লোকেদের গায়ের রঙ অনেক রকমের হয়। কারুর গায়ের রঙ খুব কালো হয়, আবার কেউ কেউ ওলন্দাজ লোকদের মতো ফরসা হয়, বুঝেছ?’
‘কিন্তু… রোববার আমি টিভিতে ডাচ ফুটবল দলটাকে দেখছিলাম। তাদের দলের অর্ধেক খেলোয়াড়রাই তো কালো!’
‘কিন্তু সেটা এরকম নয়। খেলার জগতে অনেক কালো লোক আছে।’
‘টেনিসে মাত্র একজন আছে। গল্ফ, সাঁতার বা ঘোড়ায় চড়াতে আমি একজনকেও দেখিনি তো!’
‘সেটা আমার দোষ নয়, তাই না? যাও, তোমার মাকে গিয়ে ব্যাখ্যা করতে বলো। আর আমাকে ঘোড়দৌড় সম্পর্কে আমার ভবিষ্যদ্বাবাণী শেষ করতে দাও।’
‘মা-ই তো আমাকে বললো, তোমাকে প্রশ্ন করতে। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত আর খুব রাগ করছে যে তুমি মাকে কখনও সাহায্য করো না। আমার আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আছে। আমার বন্ধু অ্যানাবেল একদম কালো কিন্তু ও শপথ করেই বলে যে ও ফরাসি। ও তাহলে মিথ্যেবাদী, তাই না বাবা?’
‘তোমার এই ছোট্ট বন্ধু তো মার্তিনিকের আর তাতে ওর-তো ফরাসি হবারই কথা।’
‘তার মানে ফরাসি লোকেরা কালো হয় আর মরক্কের লোকেরা সাদা হয়, তাই না?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। এবার চলো আমরা অন্য বিষয়ে কথা বলি।’
‘হ্যাঁ… কিন্তু অ্যানাবেলের চুল খুব কোঁকড়া, জানো, একদম একটা ভেড়ার মতো।’
‘মরক্কোর মানুষদের ও-রকম কোঁকড়ানো চুলও থাকে।’
‘তবে আমার বন্ধু মোমো মরক্কোর, তার চুলটা খুব সুন্দর, সোজা।’
‘কারুর কারুর তাও হয়।’
‘একবার ও আমাকে বলেছিল, আমরা ফরাসিরা নাকি উপনিবেশবাদী। ও যেটা বলেছিল সেটা কি সত্যি?’
‘একদম বাজে কথা।’
‘ও বলছিল অনেকদিন আগে আমরা নাকি আসলে ওদের দেশে অনুপ্রবেশ করেছিলাম আর আমরা ওদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।’
‘আমরা ওদের দেশে গিয়েছিলাম আর ওখানে কিছুকাল বসবাস করেছিলাম ঠিকই, তবে ওই পর্যন্তই।’
‘কিন্তু ওরাও তো তাই করছে। ওরাও আমাদের এখানে এসেছে আর কিছুদিন থাকছে, বাস করছে। কাল আমি মোমোকে বলবো যে ও-ও একজন উপনিবেশবাদী।’
‘না, সেটা আবার আলাদা। আমাদের দেশে আসতে গেলে মরক্কোর লোকদের ঢুকতে ভিসা লাগে।’
‘ও দেশে যেতে আমাদের সেটা লাগেনি?’
‘না। সে-সব দিনে ভিসা ছিল না আর জীবনটা অনেক বেশি সহজ ছিল। আমাদের শুধুমাত্র কিছু অস্ত্র আর কামানওয়ালা একটা যুদ্ধজাহাজ থাকলেই হতো।’

Exit mobile version