তীরন্দাজ Blog গদ্য নীলাব্জ চক্রবর্তী | অথবা একটা আয়নার জন্মদিন হচ্ছে | মুক্তরচনা
গদ্য

নীলাব্জ চক্রবর্তী | অথবা একটা আয়নার জন্মদিন হচ্ছে | মুক্তরচনা

এই যে নতুন রোদে
মেলে দেওয়া
পুরনো কবিতারা উড়তে উড়তে
কার নামে
তুমি
একটা রাস্তা
সাড়া দিচ্ছ
রূপোলি
ফ্রেম মানে পড়ে যাওয়া ধাতু
অর্ধেক স্মৃতির ভেতর
একটু একটু রিলেট করতে পারছে তখন
ডে ফর নাইট
অর্থাৎ
ধ্বনি ভেবে ফেলে যাওয়া কার দিন
কাটা রেকর্ডের সাথে কেমন ফিরে আসছে…

লেন্সের পর লেন্স পুড়ে যাচ্ছে একটা তীব্র করিডোর ব্যালেন্স করছে স্মৃতির ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া একটা নেভানো সিঁড়ি আকাশ শব্দটায় বেড়ে উঠছে তার ওয়েস্ট স্ল্যাব আর চুন চুন করে হাভেলি পড়ছে রুটিনে স্কোয়্যার ফুট ভাঙছে হে এই দীর্ঘ বাক্যের রোদ পাপ পর্যন্ত আলো আলো করছে এই আমি সহসা দেখেছি যে দেখিয়াছি আমি আর আমার সিনট্যাক্স রাস্তা পার ক্রিয়াপদের ভেতর ধোপদুরস্ত হয়ে একজন অ্যামিকেবল বৃষ্টি ফিরে আসছে পুরনো হয়ে ফাসানা স্বন এইসব স্বাদু শব্দের পাশে এসে বৃহস্পতি হয়েছে এই ঋতু ফ্লো তো নিজেই এক টেক্সচার রূপল শরমিন্দা শব্দের ঢেউ আয়নার ডেরিভেটিভ হয়ে প্রসঙ্গের মধ্যে ফুটে উঠছে পারদ সেসন বাই সেসন ফিকে হয়ে আসছে আমাদের রূপোর মুঠি সোনার মুঠি বাঁকা টুপির ওপর একটা ঘোড়ার প্রতীক হাসছে ভেঙে যাওয়া বাদামি লোকাস হয়ে যে বাক্যটা হারিয়ে গেল রঙ খুলে চলে যাওয়া ঘর ঘরের কন্ট্রোল লজিক বলছে

ইউ আর স্ট্রেঞ্জ

সাদা থকথকে একটা ঘুমের ভেতর বসে
মেট্রোর ভেতর বসে
একটা ফোন করব না কি দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিট
মেট্রোয়
কারা উল্টোদিকে বসে আর প্ল্যান করে
পিকনিকের দিন
আমি দীর্ঘ একটা জুতোর এলিভেশন
দেখতে দেখতে
অল্প আঁচে
সান্দ্র অথচ
একটা ফোন করব না কি ১টা ১৪ মিনিট
বরকত আলির ট্রায়াল রুম পর্যন্ত
কাঁচের ভেতর
দরজাগুলো রাস্তা পার হচ্ছে
সে
তার
গল্প আর সিনট্যাক্স নিয়ে
একটা ফোন করব না কি তোমায়…

আর ক্রমাগত আয়নার ভেতর চলে যাচ্ছে একটি অভেদ্য ঋতুর বর্ণনা অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ

ধলসীন
মীপণ
পুনব
নাভিক
স্বন
পলিসা
চনীর
ক্ষীরাপণ
লুসা
পরাধুতল…

শব্দ
আপনার
আমার শব্দের দিকে ছুটে যাচ্ছে
যে
ভাবনার ভেতর ভাবনা
এবার আরেকটা চরিত্র নিয়ে আসুন
প্লাগড
একটা যথেষ্ট চওড়া বিকেল
স্টেজ নেই
আমি এক মনে
ভেসে ওঠা শব্দ রেখেছি সেখানে
টাহানা… কুম… ফ্লোটা…
কাঠের গুঁড়ো রেখেছি
রালো রালো একটা স্লিপি শব্দফ্রিল
কোথায় যে পড়ছে অবধারিতের মধ্যে বসে থাকা
অস্থির লাইনগুলো
অনুবাদ-অযোগ্য এইসব দিনে
স্নায়ু ভেবে কুয়াশার ধ্বনি কেউ
ফ্রি ফর্মে কেটে ফেলেছে
যখন একটা শব্দ
পেনিট্রেট করতে চাইছে আর একটা শব্দকে…

স্বাদ অনুযায়ী মিশিয়ে নিন আর ভাবুন শব্দের যে মানে হয় না, এই কথাটা নতুন নয় কিন্তু গূঢ় যে বাষ্পের ভেতর একটা শরীর হচ্ছে বরফের দস্তানা থেকে হেঁকে উঠছে কেউ মানুষ হইতে সাবধান ক্লু আর পুনর্নির্মাণের মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন ঈষৎ ভ্লাদিমির পর্যন্ত যাতায়াত ইলিয়ানা করছেন ফ্ল্যাশব্যাক মানে সিপিয়া একটা ভ্রম হয়ে প্রত্যক্ষ হয়ে কাগজের ভেতর আমি খুব সাবানের গন্ধ ভালবাসি ধোঁয়ার গন্ধ দেখতে দেখতে একটা ড্রিম-রিডিং-এর নামে কে কার আঙুল বিনিময় করছে খালি খালি আয়নার জন্মদিনে স্তনের ছায়াও স্তন…

পুরনো আয়নায়
রোদে ভেজা কবিতার কয়েকটা লাইন
ফলো করছি
ধাতব সেই জলপাইরঙা ঘোরে
একটা
একটা
ভেঙে ফেলা ছায়ায়
হরফকে
কখন যে ভাষা বলছি
কন্ট্রোল লজিক বলছি
শরীরের ভেতর চলে যেতে যেতে
সরল যে বক্ররেখাটির সাথে
আঙুলে আঙুল
ফ্লার্ট করা ছোট ছোট দিন
তুমি খুব শ্রেণী হয়ে যাও

ভাঙা একটা দিন ঘন কাঁচের সরণী জুড়ে হ্যালো পড়ে যায় খুব শেড করা এই ভাষা তো ব্যবহার যৌনতার ভেতর ফেলে যাওয়া ছায়া এক জিরাফের ক্ষেত অক্ষরের দ্রুত নীলে আমি তার বাক্যের ভেতর সারাদিন শব্দ হয়ে…

ইশারার যে দিকটি
কিছু খসখসে হয়ে উঠছে
ধুলো-পড়া ভাষায় তার এক ব্যবহার
বালিশের ভেতর রেখে আসা কারখানার শব্দ
অভিপ্রায়
জিভের ওপর
আমি তার ভঙ্গিটুকু
আবার নীল রঙের কথায়
লেবু তো একটা গন্ধের নাম
কমলা মাংসের দিকে
আরও একটা অন্যমনস্ক রঙ
ব্লাশ করছে এভাবে

প্রতিদিনের স্বপ্নগুলো পরপর লিখে রাখলে মনের মতো একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট পেয়ে যেতাম সন্দেহ নেই… কে না জানে স্বপ্নের চেয়ে অত্যাশ্চর্য চলচ্চিত্র আর কীই বা… এই যে তোমায় কতবার বোঝাতে চাইছি… এই ঘোর এই শ্লীল অশ্লীল আচ্ছন্নতা পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও নেশামুক্তি কেন্দ্রের দরজা খুলছে না… অথচ ফ্রি ফল মানে হেমন্ত বিষয়ক সেসব কথোপকথন জানলার হাত ফস্কে পড়ে যেতে যেতে নিছক প্রশ্রয় ছাড়া আর কীই বা চেয়েছিল তখন এই ভ্যালেনটিনা ঋতুর অভ্যাস… দানা দানা রোদ ঝরে ঝরে সবার প্রবেশদ্বারে একটাই ডিজাইন… রঙ-করা ভারী ফেনার ভেতর ভেতর রিয়ালিটি মানে একটা ভার্টিকাল মাদুর কাঁপছে… কোথাও একটা কনফেশন বক্স… কবিতার ছায়াটুকু আঁকছে কেউ… আর

আমাদের নোনতা ছায়া
ধীরে
পেরিয়ে যাচ্ছে
কেমন অসংলগ্ন এইসব পাথরের দিনে
ঘুমের শব্দ দেখতে দেখতে
দুটো অন্যমনস্ক গান স্যুইচ করছে
ওঠার একটা দৃশ্য
বারবার
সম্পর্ক অবধি পড়ে যাচ্ছে
নিবিষ্ট হরফের বিকেল…

আবার কাঁচের গায়ে আটকে যাচ্ছে একটা অস্পষ্ট ফুটো ফুটো দিন। ক্রমশ শরীর হচ্ছে একরকম ব্যবহার। ফল করছে। ভেঙে যাওয়া জলেদের ঘরবাড়ি। কাট। যেসব আশ্চর্য ছুঁয়ে থাকা। বিদ্ধ হয়। রেডিও-তে প্রতিটি এফ.এম. চ্যানেলে একটাই বিজ্ঞাপন বাজতে থাকে। আসুন আসুন… দানা দানা গ্যারাণ্টি পানিফল… শুধু আমাদের প্রচার-গাড়িতেই পাবেন… যেকোনো একটি পুরনো বিকেলের পরিবর্তে নিয়ে যান ৫০০ গ্রাম দানা দানা গ্যারাণ্টি পানিফল… আর ১ কেজি পানিফলের জন্য রেখে যান বাতিল হয়ে যাওয়া যেকোনো দুটি শীতকালীন সম্পর্ক…

পুড়ছে যে অন্ধকার
কার পালকে ভারী হয়ে
আমি তার
পায়ের পাতা অবধি
ঠোঁট নামের রঙ আসছে
ক্যামোফ্লেজ
মাংসের ভেতর
চলে যাওয়া সুর
পুনরাবিষ্কার শব্দটা বরাবর
ধীরে
ওঠানামা করছেন একজন স্মৃতি
দুজন আইসক্রিম
ফোটোশপ বলতে বলতে ছবির দোকান
যে দৃশ্য হেমন্ত
গুঁড়ো করে ফেলল
যাকে লোকে ভাষা বলে ডাকে
আসলে
অর্ধগোলকাকার খাঁজকাটা এক স্ফটিকবিশেষ…

ভ্রমণোত্তর একটা উঁচুনীচু ঋতু। নতুন হতে চাইছে। একে বলো পবিত্রতার কনসেপ্ট। বলো কোকাকোলা কেন আরেকটু শীতল হবে না। সারা ঘরে নড়েচড়ে শব্দরা উঠছে। রাফনেস ইনডেক্স। য-ফলা খেয়ে ফেলছে। টার্ন টু ইয়োর লেফ্ট। লো-অ্যাঙ্গেল থেকে দেখতে পাওয়া এইসব বাদামি উচ্চারণ। ঘ্রাণ হয়। এভাবে ধাতু, পাঠ ও অভ্যাসের পরেও এক রূপমাত্র হয়েই থেকে গেল অথচ

এখন দাঁড়িয়ে থাকার অভিনয় করছি
এখন গান শোনার অভিনয় করছি
এখন বসে থাকার অভিনয় করছি
এখন দুটো ড্রয়িং চেক করার অভিনয় করছি
আর
লক্ষ করছি
রাস্তার একদিকে ছায়া
অন্যদিকে একটা মিনিংফুল পাথর
মিষ্টি মিষ্টি পাঁউরুটি
ছিঁড়ে ছিঁড়ে
মিষ্টি মিষ্টি কবিতা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে
নিজেকে বিরত রাখা
একা একাই একটা স্লোগান
পার হয়ে যাচ্ছে
ফলের মধ্যে ভরে রাখা সমস্ত দুপুর…

আমরা সব বুঝি। ক্রিকেট, ফুটবল, রাজনীতি, সিনেমা, রান্না, বাগান করা, জ্যামিতি, পরিমিতি, দর্শন, ক্যালকুলাস, দাবা, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়রিং, সমাজ, বিপ্লব, মানবাধিকার, ধর্ম, গল্প, উপন্যাস… সব। সঅঅঅঅঅব বুঝি আমরা। সব বোঝা হয়ে গেছে। বোঝার ভারে আর নড়তে পারছি না। সব বোঝা। শুধু, কবিতা বুঝি না আমরা। ভাগ্যিস। বোঝা হয়নি এখনও বলেই ক্ষমা করতে করতে ফিকে হয়ে আসছে পাখিদের মগজ এই ফরেনসিক অরণ্যে কেমন ছায়া পড়ছে ভাষা-কারখানায় এই গাছ এই গাছের আস্তিন ফেলে রেখে যাওয়া ঘন লাল একটা দৃশ্য পড়তে পড়তে অ্যাকশন বলছে সামলে নিচ্ছে আরেকবার ফের আর শরীর একটা ভাল ব্যবহার হয়ে এই যে যতিচিহ্ন হারিয়ে বিভ্রান্ত একটা স্ট্র হাতে নিয়ে মাংসের বাগানে দাঁড়িয়ে আছি হে এই মধ্য ডিসেম্বর হয়ে

কার কথা
মনের ভেতর ভেতর
সত্যি সত্যিই পড়ে পড়ে যাচ্ছে
আর
খুব সিরিয়াসলি
বলে যাচ্ছি
আমায় শুধু লেটুস পাতা আর পেঁয়াজ দেবেন কেমন
আর শসার চাকা
আর মেয়োনিজ
হ্যাঁ এটা ঠিক
এতে কবিতাটার কী হবে জানিনা যদিও
তবে
এভাবে ভাষাটাকে আস্তে আস্তে চিবোতে
কিছুটা ভালো লাগবে আমার

অপেক্ষারা এক একটা গাছ। স্লো মোশান। আলো ঘষা হচ্ছে বিছানায়। ঘড়ির ভেতরে একটা ঘড়ির মতো নিজের বাইরে নিজে যে সময়টা। কাবিল একটা ইন্টারল্যুড। ঢালু স্মৃতি স্থির হয়ে আছে ওখানে। অন্যমনস্ক একটা রঙ। সার্ভিস রোড বরাবর এগিয়ে যাওয়া কবিতাগুলো। ক্রিয়া ভেঙে ভেঙে দিনগুলো সম্পর্ক হয়েছে। এই যে সংখ্যাগুলো ঝরে পড়ছে আর হেঁটে যাচ্ছি তার মধ্যে দিয়ে। একটা লালচে তারিখ। ভাষায় বড়ো বড়ো ঋতু উঠছে দু-একটা

মাংসের ভেতর পুঁতে রাখা গানের টুকরো
কৌতূহলের টুকরো
ঠাণ্ডা একটা অভ্যেসের দিকে
গড়িয়ে
মেলা থেকে একটা বাস মেলার দিকে
বাসের মতো
কবিতার মতো একটা কিছু
দীর্ঘ কথাবার্তায়
আয়নায় জল ফিরে যাচ্ছে
হ্যালো স্তন
ভাষার দিকে চলে যাওয়া একটা লাল গাড়ি
ভাঙা ভাঙা ছায়ার দিকে চলে যাওয়া
চৌকো একটা দিন
এই তো ফ্রেম অর্থে
একটা সরল গাণিতিক প্রস্তাবনা
সরে যাচ্ছে
ভোজসভায় উড়তে থাকা চাদরের সাথে
একটাই সাদা দৃশ্য
টেনে নিয়ে আসছে অক্ষরেখা বরাবর…

Exit mobile version