তীরন্দাজ Blog গদ্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার পুরস্কার ২০২৩ | আসিফ মাহমুদের প্রতিবেদন
গদ্য সংবাদ

ইন্টারন্যাশনাল বুকার পুরস্কার ২০২৩ | আসিফ মাহমুদের প্রতিবেদন

২৩ শে জুন ঘোষিত আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেলেন যৌথভাবে বুলগেরিয়ার ঔপন্যাসিক জর্জি গোসপোদিনভ এবং অনুবাদক অ্যাঞ্জেলা রোডেল। মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটি দেয়া হয় ইংরেজি ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় লেখা উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদের জন্য। এবার যে উপন্যাসটি পুরস্কার পেল সেই উপন্যাসের নাম ‘টাইম শেল্টার’। বুলগেরীয় ভাষায় লেখা এটি প্রথম উপন্যাস যা বুকার পুরস্কার পেল। পুরস্কারের ৫০ হাজার পাউন্ড (৬২ হাজার ডলার) অর্থমূল্য লেখক এবং অনুবাদক সমানভাবে পাবেন।
আলঝেইমারের চিকিৎসা প্রদান করে এমন একটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। রোগীদের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে এবং বিগত কয়েক দশকের স্মৃতির জগতকে ঘিরে উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে।
ঔপন্যাসিক এবং কবি জর্জি গোসপোদিনভ ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গোসপোদিনভ হলেন আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত আধুনিক বুলগেরীয় লেখক। তার লেখা ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অনুবাদক অ্যাঞ্জেলা রোডেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা তবে বুলগেরিয়াতে থাকেন এবং কাজ করেন। তার কবিতা এবং অনূদিত গদ্য সাহিত্য পত্রিকা এবং সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। বুলগেরীয় সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য তাকে ২০১৪ সালে বুলগেরিয়ার নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।

ঔপন্যাসিক জর্জি গোসপোদিনভ-এর ভাষণ

“এটা আসলেই দারুণ একটা ব্যাপার, সত্যি দারুণ। আমার নার্ভাসনেসের জন্যে ক্ষমা করবেন।

আমি কিছু কথা লিখেছিলাম, ভেবেছিলাম ‘পুরস্কার না-পাওয়া একজনের অব্যক্ত বক্তব্য হিসেবে আমার কাছেই তা থেকে যাবে।’ যাই হোক।

ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা সাহিত্যে বিশ্বাস করেন, কারণ এখানে উপস্থিত সবাই তো সাহিত্যচর্চা করি, সাহিত্যে বিশ্বাস করি। আমি স্থাপত্য এবং সাহিত্য উভয় দিক থেকেই সম্মানিত বোধ করছি।

কথাসাহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান করার জন্য বুকার কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এই সময়ে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। স্মৃতি ও সময়, অতীতের বন্যা এবং নস্টালজিয়াকে অস্ত্র করে তোলার মতো একটি উপন্যাসকে প্রশংসা করার জন্য জুরিদেরকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। মনোনীত প্রত্যেক ঔপন্যাসিককে ধন্যবাদ, আপনাদের বইগুলি দুর্দান্ত, সবার একসাথে থাকাটা একটি সম্মানের বিষয় ছিল। সবাই যেন আমাদের লেখাগুলি পড়তে পারে সেটাই চাই। আমার অনুবাদক অ্যাঞ্জেলা রোডেলকে অনেক ধন্যবাদ, যিনি অতীতের এই ক্লিনিকটি ইংরেজিতে রূপ দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ, অ্যাঞ্জেলা! যারা এই বইটির যাত্রার অংশ হয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমার বুলগেরীয় প্রকাশক জ্যানেটকে (৪৫) ধন্যবাদ, যিনি লকডাউনের প্রথম মাসেই বইটি ছাপানোর সাহস করেছিলেন। আমার যুক্তরাজ্যের প্রকাশক ওয়েডেনফেল্ড এবং নিকলসন আর ফেড আপনাকেও ধন্যবাদ দিচ্ছি। ধন্যবাদ আমার এজেন্ট লুক ইনগ্রাম এবং বুলগেরীয় কালচারাল ইনস্টিটিউট ও দূতাবাসকে।

আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ, যারা এখন দক্ষিণ-পূর্ব বুলগেরিয়ার কোথাও আনন্দ করছেন আর কাঁদছেন। আমার মেয়ে ও স্ত্রী, তারা এখানে আমার সাথে আছে। আমার পাঠকদের ধন্যবাদ। আগামীকাল বুলগেরিয়ার শ্রেষ্ঠ ছুটির দিন, সিরিলিক বর্ণমালার দিন, লেখা এবং ভাষার দিন। ঠিক যে মুহূর্তে অক্ষর ও ভাষার উদযাপন হচ্ছে তখনই এই পুরস্কার পাওয়াটা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার। তো আমি বুলগেরীয় ভাষায় একটি বাক্য বলব, যে ভাষায় উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। “Честит празник! Честито чудо на еза” [“শুভ ছুটির দিন! হ্যাপি মিরাকল অফ ল্যাঙ্গুয়েজ”]।

এই উপন্যাসটি একই সাথে ব্যক্তিক এবং রাজনৈতিক। যুদ্ধের সময়ে যারা আক্রমণের মুখে তাদের বাড়ি তাদের ও আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছে, লেখকদের অবশ্যই তাদের গল্প নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আমি যখন বেড়ে উঠছিলাম, তখন উত্তম পুরুষে লেখা বই লাইব্রেরি থেকে পড়ার জন্য নিয়ে আসতাম, যে বইগুলোতে নায়ক নিজেই সবকিছু বর্ণনা করত। কেন এরকম বই পড়তাম? কিছুদিন পরেই আমি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। কারণটা হলো, আমি চাইনি নায়ক মারা যাক। যতক্ষণ উত্তম পুরুষে কেউ গল্প বলে, ততক্ষণ তো সে মরে না, বেঁচে থাকে। এইকথাটা বলেই শেষ করতে চাই যে, যতদিন আমরা আমাদের গল্প এবং অন্যদের গল্পগুলো বলব, ততদিন আমরা বেঁচে থাকব। আমরা যা বলি তাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে আর উষ্ণ রাখে। আমাদের গল্পগুলি জীবন, সহানুভূতি, মৃত্যু আর অমঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। এটাই সাহিত্যের অভূতপূর্ব ঘটনা।

আপনাদের ধন্যবাদ, এবং আপনারা গল্প বলতে থাকুন!

ঔপন্যাসিক আর অনুবাদকের সংযুক্ত সাক্ষাৎকারটি দেখুন ইউটিউব থেকে। উৎস : বুকার ইন্টারন্যাশনাল-এর ওয়েবসাইট।

Exit mobile version