তীরন্দাজ Blog বিশেষ সংখ্যা তিনটি কবিতা | নাসরীন জাহান | গণঅভ্যুত্থান সংখ্যা
বিশেষ সংখ্যা কবিতা

তিনটি কবিতা | নাসরীন জাহান | গণঅভ্যুত্থান সংখ্যা

গণঅভ্যুত্থান সংখ্যা

লাশের রক্ত থেমে গেছে।
থেমে তো যাবারই কথা
কতক্ষণ রক্তস্রোতের নহর বয় একজন প্রাণের?
পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে সাজিয়ে রাখা মিছিলের মুখগুলি,
দেখে গুমরে উঠেছে আমাদের বাতাস।

ভাষাশহীদ শামসুজ্জোহাকে ডাকতে ডাকতে চলে যাওয়া সাঈদ,
তার শরীরে কীসের তকমা লাগাও?
এই তোমাকেই রাস্তার কুকুরের অসুখে কাঁদতে দেখেছি?
চোখের সামনে যেই একদিন মুরগি জবাই দেখলে,প্রিয় মুরগি আর কোনদিন মুখেই নিলে না?
তুমিই তো?
শত মানুষের হত্যা,ঘরে, ছাদেও অনারিপদ শিশুর বাবার কোলে লুটিয়ে পড়া,
আমি পানি খেতে গেলে মুগ্ধর কন্ঠ শুনি,মুক্তি দাও এ দহন থেকে?
দু বোনের এক ভাই সন্দ্বীপের সৈকত বিদেশ থেকে চলে এসেছিল,
নিহত শুনে সমুদ্র সাঁতরে বাবা
এসে বিমূঢ়!
পোষা বেড়াল কিছুতেই খাবার মুখে নিচ্ছে না।

তাই এদের বিচার না চেয়ে কালো রঙিন সজ্জিত মানুষদের বলি,তোমার
সন্তানকে কেউ অন্যজনদের পানি খাওয়ানোর অপরাধে গুলি করলে
এভাবেই চোখ টান করে বলতে, ঠিক আছে?
বলতে তোমরা কোন দল,
কোন আকাশে ওড়ো?
কেন সূর্যাস্তে হেলান দিয়েছ?
এখানে দেখো অনেক কালো আকাশ,এর নিচেই ক্ষমতা, ঐশ্বর্য,
আলোকজ্জ্বলতা,আরাম বিন্দাস বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা?
কেন লালের নামে রক্তের পথে হাঁটছ?

কোন কাল কোন সময়, অন্যায় কিন্ত ন্যায়ের নাম হতে পারে না।
যখনই বোধের, আত্মার শরীরে আগুন লাগবে আমি কিন্তু ঝাঁপ দেব আগে,
যতবার লাগবে ততোবারই।
স্বাধীন আকাশ থেকে ঝরে পড়তে পারে না বোমা,
রক্তের অদ্ভুত এক শব্দ আছে,
যা আমাদের ঘুমুতে দেয় না,
সেই শব্দ কোনদিন তোমরা পাবে না,
কারণ তোমরা কালো পাহাড়ে হেলান দিয়েছ।
ওখানে যারা যায় তাদের চোখে সীসা আর কানে বধিরের বর্ম লেগে যায়।
গণহত্যা বন্ধ হোক,
এই ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষক আইনজীবী,
তাঁরাও ভুল দাঁড়িয়েছে?
এসব ভুলদৃশ্য!ভুল কথা চালাচালি?
নাকি ট্যাংকের তলায় যেকোন সময় পিষে ফেলার স্বপ্নে মগ্ন আছ?

নাকি বলেই যাবে, এসব কিছুই ঘটেইনি,
গুজবের ফানুস উড়ছে?
আয়েশের জায়গায় দাঁড়িয়ে চলে যাওয়া বন্ধু তুমি একটা হত্যার জন্যও উহ্ করোনি,
মনে থাকবে।
আর এই যে গুম হচ্ছে?
এরা কোন দেশের বাসিন্দা যারা দরজায় দরজায় রোজ সন্তানের খোঁজে মাথা ঠুকছে?
মৃত্যু তোমারও ঘনাবে একদিন,
যাওয়ার আগে ফিরিয়ে দিয়ে যেতে পারবে ওদের? মানুষ জ্যান্ত করার জাদু
শিখিয়ে দিয়ে যেতে পারবে তো প্রত্যেক মা-কে?

যদি কথা না বলতে,ভাবতাম ভাবলেশহীন, শোকে না দাঁড়াতে ভাবতাম,রক্তস্রোতে বিহবল আছ,
লাশের ওপর দিয়ে পাগল নৃত্য করে
শেষ অব্দি রাজার দরজায় ঝান্ডা ওড়ালে?

অনলাইনের পথ রুদ্ধ,কার্ফু, কার্ফু
এইসব নিয়ে চিল্লাও যে মাতারা,
বেকারে বেকারে ভেসে যাচ্ছে দেশ আহাজারি যে ভ্রাতাদের,
সাঈদের লাঠির গোত্তা খেয়ে সব বন্ধ হয়ে আছে?
খুলে দিন না লৌহকপাট,
এত সেনা পাইক পেয়াদা আপনাদের কীসের এত ভয়?
খুলে দিয়ে দেখুন,ড্রামের ভেতর থেকে কত কত লাশ বেরোয়?

এমন শতশত নাম ওড়াওড়ি করে নিঃশ্বাসের সামনে, ঘুমাতে পারি না।

একজন প্রাণ রক্ত ছাড়াই কীভাবে ছড়িয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে জীবিতদের রক্তস্রোতের মধ্যে!
দেশকাল ভেদে রক্তের সম্পর্ক হয়ে উঠছে।
হয়তো ক্রোধ নিভে যাবে সময়ের অন্য এক যুদ্ধের নোনাভাত আনার তাগিদে,
হয়তো নয়,এই স্রোত টেনে নিয়ে যাবে মায়ের শূন্য বুকদের,

কিন্তু মনে থাকবে।
মন থেকে এই মনে ছড়ানো মনে না থাকলে তো আমরা অদেখা মুক্তিযুদ্ধও স্মরণ করতে পারতাম না।

ক্ষোভে উচ্চারিত রাজাকার শব্দ সহ্য হয়নি,আজ তোমরা ঘোষণা দিয়ে নিজেদের দালাল বলছ?
ঘরে ঘরে আর্তনাদের রক্তাক্তে এ কোন সময় এল?কোন আঁধারের প্রচ্ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে সব?
এটা সেই তুমিই তো,
যাকে বিপ্লব বলে মানতাম,এবং
চলতাম কত বিকেলের পথ ধরে ধরে জলের প্রান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে?

যাকে মৃত্যু ছোঁয় না,কান্না ছোঁয় না,
হত্যা যার কাছে বুদবুদ ওড়ানোর খেলা?
জয়বাংলাকে দয়া করে নিজেদের ব্যক্তিগত শব্দ বানিও না,
পতাকা জাতীয় সংগীত নিজেদের বলে আমাদের অপমান নিহতকে বারবার নিহত করো না।

তোমরা সবাই রাজা তোমাদের এই রাজার রাজত্বে ফানুস উড়াও
রঙিন ময়ূর ছেড়ে দাও গালিচা প্রান্তরে,এবং আরও শব্দ করে হাসো,
আরও জোরে হাসো,কারণ আমরা বিপন্নের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।
হাসতে হাসতে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামিয়ে আনো,তাতে মেঘ মেঘ খেলো,
এবং আলো আর রোদ্দুর যেহেতু তোমার সম্পদ,
এতইতো আলো এসেছে, বলে গড়াগড়ি খাও প্রান্তর জুড়ে।

মনে রেখো এ কুপি কিন্তু রক্ত দিয়ে ভরা,আলোর সলতে জ্বলবে,, বিচারহীন দাহে
ঢেকে ফেলবে ওদের,
আলোর উজ্জ্বলনের নোনতা জল, তোমার জিভ স্পর্শ করবে না।

আমাদের মনে থাকবে,
থামাতে থামাতে ওদের চোখে কোন জল ছিল না।
ওদের মা বলেছিল,এখন বিচারে লাভ নেই,আমি এ দেশের এমন সব মায়ের দরজায় যাব,
যারা আর্তনাদ গিলে বজ্রাহত হয়ে আছে।
যাদের বাড়িতে আজীবনের আনন্দ শুকিয়ে গেছে, পাশের বাড়ির হুল্লোড় তাদের মৃত্যুর আগ অব্দি
দহনের লবণ ছিটাবে।
জুলাইয়ের এই ভাসমান রক্ত-কথা পড়তে পড়তে একদিন তোমাদের
শিশুও অজান্তে বেরিয়ে পড়বে পথে, বলবে, ইতিহাস থেকে শিখেছি।

এটাও ভুলবে না,আকাশের ওপর বাজপাখির চক্কর,
আশ্চর্য! দিকভ্রান্ত ওদের
তাই ভেঙেচুরে পড়ে থাকা মেশিনগুলো তোমাদের কাঁদিয়েছিল!

নেই নেই নেই
শুনতে পারিনা আর,
তাই, আছেদের কাছে যাই
আছে আর কাছে হয়না পরস্পর,
আছেদের কাছে ছুটতে ছুটতে
জীবন দীর্ঘশ্বর,
জ্বালা জ্বালা ব্যথা উদাস দুপুর
চাঁদহীন রাত, পাখিহীন ভোর,

আছেদের কাছে ছুটতে ছুটতে
জীবন তেপান্তর,

মুছে যাক এই হতাশ দুপুর,
জীবন যেখানে রক্তে
উপুড়,

রক্তে রক্তে ভাসমান দিন পিশাচি শক্তির হাসিতে রঙিন,

পাখির ঝাঁকে দেশ ছেয়ে গেছে,
গলিতে গলিতে রাজপথে আজ,
তীব্র পাখার পাখিদের আওয়াজ।

রক্ত পাহারায় সমস্ত পাখি,
রক্ত পাহারায় সমস্ত পাখি,

তুমি কে?
তুমি পায়ে নূপুর পরতে না?
না, অন্যকেউ পরত,
তুমি চক্কর খেতে না?
খেতাম,এবং তুমি নুপুর পরতে
না, মল পরতাম, তুমি সুমন গাইতে না?
গলা ভালো ছিল না, রেকর্ড বাজাতাম,
আমার বাড়ির সামনেই তো?

না গলির মুখে,
শব্দ তুমিই বানাতে? যেমন চুলগাছ,মনবৃক্ষ?
হয়তো,
তুমি কী সবুজ শাড়ি পরতে?
না,বহুরঙে সবুজ আমি, বহু বাংলার লাল,
মনে পড়ে গাছ জড়িয়ে কত কথা বলতাম,
মনে পড়ে অন্যকে জড়িয়ে রিকশায় পথ চলেছ?

কত পছন্দ বদলেছে,
সজনে গাছে বাতাস লেগেছে,
বৃষ্টিতে কান্না মরেছে,

ক্রিং ক্রিং
হ্যালো,
তোমার মুখ হঠাৎ বিষাদের
অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠল।
কোথায় ছুটে যাচ্ছ?
বলে যাও
চুপ করো প্রেমবাক্য,
চুপ করো প্রেমকাব্য,

তুমি কে?
যার শরীরে আগুন লেগেছে,,
যার রক্তে আগুন লেগেছে।

Exit mobile version