পড়তে সময় লাগবে ৩ মিনিট
আলো টিপে টিপে
খুব নিশ্চয়ই
শেয়ালের ডাক থেকে বহুদূর উঠে আসে
বহুবার বহুদূর আগেও হেঁটে এসেছে একা।
আজও এসেছে। এবার
তোমার ভেসে ওঠা মুখ সাথে করে।
রদ্যাঁর মতো কেউ ব্রোঞ্জ গালিয়ে সূর্য গড়েছিল?
হতে পারে আজ মেঘের বিস্কুট ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো।
এবং কাঁদার মতো টিপে টিপে আলো
তোমাকেই গড়ছি আবার। কিন্তু বারবার ভেঙে যাচ্ছ। ফলে বহুদূরের কাছ থেকেই তোমার ভেসে ওঠা মুখ চেয়ে নিচ্ছি এবার
কে যে কোথায় চা খেয়ে
কে যে কোথায় চা খেয়ে চলে গেছে
অথচ কাপদুটো ধরেই আছে দূরত্ব, ছাড়ছে না
কিন্তু দূরত্বেরও বাড়ি আছে তো
আজ খুব মনে পড়ছে জানলাসমান আলো
এখনো রোজ বাড়ি ফিরি আমি
বাল্বটার প্রায় গা ঘেঁষে একফোঁটা জল পড়ে গেল
জলও রোজ বাড়ি ফেরে, এখন ফিরছে…
কে যে কোথায় লিখে চলে গেছে
“I’M NOT A TOY”
আর লেখাও তো ছেড়ে যাচ্ছে দেয়াল
বাড়ি ফিরছে চোখ ঘেঁষে…
আর পায়ের নিচে কতকিছু গুঁড়িয়ে যাচ্ছে
অথচ শব্দ নেই…
শূন্যতার প্রকার
একা একা বেঞ্চি খুব ভালো আছে এখন। একা একা আমাদের মানুষও ভালো থাকে অনেকদিন। কিন্তু খুব বেশি দিন একা একা ভালো থাকে না বেঞ্চি মনে হয়। যখন হঠাৎ মানুষ, খড়কুটো কিংবা পাতা এসে বসে বেঞ্চির ভালো লাগে। একরকম পূর্ণতা আসে বেঞ্চির। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে থেকে আবার উঠে গেলে একপ্রকার শূন্যতা বেঞ্চে বসে আছে দেখা যায় অর্থাৎ মানুষ, খড়কুটো কিংবা পাতার আকারের শূন্যতা। এবং ক্রমশ বড় হতে থাকে সেই পরিমাণ শূন্যতা আর বড় হতে হতে খুব স্পষ্টভাবে পাশে থাকা বৃহৎ শূন্যতার সাথে মিশে যায়…
এনিবডি?
ঘষা খেয়ে মরে যাওয়া পিঁপড়া।
কেউ কি অপেক্ষায় আছ…
এনিবডি…?
তার অপেক্ষার পাশে দাঁড়াবো না কোনোদিন
না নেই
এখন ভালোই হচ্ছে মেঘের আবাদ
আমি মুখ উল্টে পাতা
শুয়ে বসে আছি
মেঘবীজ কুড়াবো বলে।
এখানে পাদদেশ পড়ে আছে গালে হাত
বাতাসের পাহাড়ে প্রচুর উঁচু
চূড়ায় চূড়ায় নীল
কোনো আঙুলের মুখে না নেই
আমরা অনেকেই ঘাস ভালোবাসি
ঘাস ভালোবেসে অনেকেই আমরা ঘাসের পোশাক
যেরকম দুপুর
এই দুপুর আমার ব্যক্তিগত
এই দুপুর তোমার ব্যক্তিগত
এই দুপুর আমাদের ব্যক্তিগত
এই দুপুর দুপুরের ব্যক্তিগত
তবু সব ব্যক্তিগত’র আড়ালে আরও কিছু ব্যক্তিগত থেকে যায়
ততটুকুই অচেনা
ততটুকুই বুদ্বুদ
ততটুকুর হঠাৎ জন্ম হয়
ততটুকুর হঠাৎ মৃত্যু হয়
যেমন ফুরোয় এক একটা শব্দ
এই ফ্যানের ঘর্ঘর আর গাড়ির শব্দের ধারাবাহিকতার ভেতর…
কেউতো গাছ নই
তবু আমাদের ভেতর থেকে পাতা ঝরে কিছু…
কোনো নড়াচড়া নেই
যেন বাতাস শক্ত করে বাঁধা
আমরাও বাতাসে বাঁধা শক্ত করে।
গাছ নই
কেউতো গাছ নই আমরা
গাছ হয়ে নেই কেউ
তবু আমাদের ভেতর থেকে পাতা ঝরে কিছু…
পাতা ঝরে… পাতা ঝরে…
যেন আমাদের ভেতরেই থেকে গেছে একরকম গাছ
শাদা পাতা থেকে
আমার মেয়ে
শাদা পাতায় ছবি আঁকে
ছবি আঁকে আর ঘষে ঘষে তুলে ফ্যালে
অঙ্কিত ছবি।
আমি এই দৃশ্যটি দেখি…
প্রায়শ এরকম দেখে দেখে ভাবি এই দৃশ্যটিকেও কেউ ঘষে ঘষে তুলে ফেলছে
বাতাসের শাদা পাতা থেকে।
মেয়ের কাছে বসে থেকে থেকে আমি এরকম ঘষে ঘষে ছবি আর দৃশ্যের মুছে ফেলা দেখি
উঁকি আঁকছি
একটা অজস্র পাতার গাছ
কোনো বিশেষ পাতার মুখ
আমার চেনা হলো না কোনোদিন
তাই কোনো পাতার মুখোমুখি হলে
তাকে আলাদা করে দেখেছি বলে মনে হয় না
ফলে যে-কোনো পাতাই মূলত অপরিচিত
সেহেতু সকল পাতার পাশ ঘেঁষে চলে যেতে পারি…
যেহেতু সকল পাড়ের পাশ ঘেঁষে নদী…
এখন র্যা দায় ঘষছে কেউ মরচে-আকাশ
জল-কাঁটা-জানালায় উঁকি মারছে মাছ
আমাদের তুলি উপচে উঁকি…
আমরা আঁকছি উঁকি…
আমি আর অজস্র পাতার গাছ
পরিধির দিকে
আমি দেখি কীরকম মাছের ঝাঁক ঘোরে পুকুরে।মাছের ঝাঁকে অনেক মাছ থাকে। অনেক মাছ নিয়েই এক-একটি ঝাঁক হয়তো মাছের। মাছের ঝাঁকে মাছগুলো ঘুরে বেড়ায়।খুব স্বতঃস্ফূর্ত ঘুরে বেড়ায় মাছগুলো। জলের উপর একটি খুব স্পষ্ট আকার ঝাঁকের পরিধির দিকে দেখা যেতে থাকে। ফলে মনে হয় এক-একটি মাছ নয় আর, বিস্তীর্ণ জলে কাটছে কেবল আকারটির জীবন…
ফেরদৌস হৃদয়
কবি। কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।