পড়তে সময় লাগবে ৫ মিনিট
সমতল ছেড়ে এবার পাহাড়ের শীর্ষে উঠে ভ্রমণ শুরু করেছেন ভ্রামণিক মঈনুস সুলতান। সঙ্গী, বান্ধবী স্কারলেট। যে পাহাড়ে উঠছেন সেই পাহাড়ের নাম মাউন্ট রেনেয়া। কিন্তু পাহাড় ঘিরে আছে মানুষের বসবাস। আছে জলাধার, অর্থাৎ হ্রদ। এই পাহাড়. জনমানুষ, বান্ধবীর সঙ্গে কাটানো সময়ের গল্পই শোনাচ্ছেন মঈনুস সুলতান তার চিত্তাকর্ষক গদ্যে।
পায়ে চলা ট্রেইলটি ছেড়ে আমরা বেরিয়ে আসি খোলামেলা অপেনিংয়ে। এখানে ছোটখাট একটি প্রান্তর খানিক গড়িয়ে ধাপে ধাপে উঠে গেছে – তেমন উঁচু নয় এরকম একটি পাহাড়ে। দীর্ঘ ঘাসের জমিন মাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের চোখেমুখে এসে লাগে আলাভোলা হাওয়ার উষ্ণ ঝাপটা। আমাদের পদশব্দে ঘাসের শিষ-খোঁটা কিছু পাখি উড়াউড়ি করে। এদের সংখ্যা প্রচুর, একসাথে উড়লে ধূসরে শূভ্রতা ছড়ানো পালকে রোদ পড়ে সৃষ্টি হয় এক ধরনের দৃষ্টিবিভ্রম।
স্কারলেট কপালে হাত রেখে ভাসমান মেঘমালার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘হিয়ার ইট ইজ, আওয়ার গুড ওল্ড মাউন্ট রেনেয়ার.. লুক হাউ হি ইজ প্লেইং হাইড এন্ড সিক উইথ দ্য ক্লাউড।’
চলার গতি শ্লো করে আমি পাহাড়ের উপরে বিস্তৃত দিগন্তের দিকে তাকাই। ওখানে চোখে পড়ে কেবলই মেঘের লীলাবৈভব, হরেক আকারের গম্বুজ, খিলান ও মিনারে বিস্তৃত পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ যেন তৈরি করে নিয়েছে প্রসাদোপম স্থাপত্য। আমি মাউন্ট রেনেয়ারকে আলাদাভাবে ঠিক শনাক্ত করতে পারি না।
আমরা হেঁটে চলে আসি পাহাড়টির নিচের ধাপে। ঠিক তখন চলমান ট্রেনের জানালায় দেখা নিসর্গপটের মতো মেঘের অলিন্দ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে তুষার মোড়া পর্বতটি ফের চলে যায় দ্রুত ভাসমান মেঘমালার অন্তরালে। আমরা সাবধানে বেশ বড় বড় বোল্ডার ডিঙিয়ে উঠে আসি মাঝামাঝি একটি ধাপে। দম ফেরাতে দাঁড়িয়ে পড়ে স্কারলেট ডায়েট পেপসির ক্যান ওপেন করে। খানিকটা গলায় ঢেলে আমার দিকে ক্যানটি বাড়িয়ে দিয়ে জানতে চায়, ‘হেই, ডিড আই টেল ইউ দ্য স্টোরি অব দি ব্ল্যাক সোয়ান?’
ঠিক বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করি, ‘হোয়াট আবাউট দ্য ব্ল্যাক সোয়ান? টেল মি।’ কুচকুচে কালো একটি সোয়ান প্রজাতির বিরাট রাজহাঁস নিয়ে গল্প করতে করতে আমরা ফের উপরে উঠতে থাকি।
কালো সোয়ানের কাহিনিটি স্কারলেট একটু আগে ক্যাফেতে আসা একজন খনিজ-ধাতু খোঁড়া সিজনড্ মাইনারের কাছ থেকে শুনেছে। মাইনার ভদ্রলোক গেল পুরো দশক ধরে অনেক বার ইয়াকিমা ভ্যালিতে এসে তাঁবু খাঁটিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করছেন। প্রতি বছরই আসছেন, এদিককার একটি হ্রদে তিনি সাঁতার কাটাও খুব এনজয় করেন। বছর সাতেক আগে, সরোবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে তার নজরে পড়ে জলে ভাসমান একজোড়া কালো সুদর্শন সোয়ান। সোয়ানদের আদি হাবিটাট অস্ট্রেলিয়ায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে কোন কোন সরোবরে মাঝেসাঝে একটি দুটি কালো সোয়ানের সন্ধান পাওয়া যায়। মূলত হ্রদের অলংকার হিসাবে এদের পোষা হয়েছে। এরা পছন্দ করে বছরে একবার অরণ্যের নির্জন জলাশয়ে উড়ে গিয়ে ব্রিডিং করতে। তো মাইনারের ভাষ্যমতে সোয়ান জোড়া ফি বছর এ হৃদে ব্রিড করতে আসতো। তারপর খোকাখুকু একটু বড় হলে তাদের উড়িয়ে নিয়ে ফিরে যেত। বছর চারেক আগে, সম্ভবত কোন শিকারীর ভুলক্রমে ছোঁড়া তীরের আঘাতে মৃত্যু হয় মর্দা সোয়ানের। সোয়ানরা সংসার জীবনে মনোগোমাস বা এক-দ্বারবর্তী। তারা সচরাচর দ্বিতীয়বার দোসর খুঁজে ঘর বাঁধে না। তো মর্দা সোয়ানটির মৃত্যুর পরও নাকি মাদি সোয়ান এ হ্রদে ফিরে এসেছে একাকী প্রতি বছর। এবারও সে এসেছে। তার সাইটিংয়ের সংবাদ ইয়াকিমা ভ্যালির স্থানীয় পত্রিকাতে ছেপেছে। তো মোদ্দা কথা হচ্ছে, স্কারলেট সরোবরে গিয়ে ব্ল্যাক সোয়ানটিকে চাক্ষুষ করতে চায়। আমি সোয়ান প্রজাতির বিরাট আকারের হাঁসদের শুধু ছবি দেখেছি, এবার সামনা সামনি দেখতে পাবো, এ সম্ভাবনা আমাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে।
পাহাড়ের চাঁদিতে এসে স্কারলেট সামিট-রক বেয়ে উপরে উঠে যায়। মাউন্টেন বাইক হাঁকানোর জন্য সে চক্রাবক্রা ডিজাইনের টাইটস্ পরে আছে, রকে বাঁকা হয়ে উঠে যাওয়ার সময় জেগে ওঠা চরের মতো পোশাক ভেদ করে ফুটে ওঠে শরীরের অনেকগুলো অর্ধচন্দ্রাকৃতি কার্ভ। আমিও সামিট রকে উঠে তার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আলতো করে খোলা-কাঁধ স্পর্শ করি। ঘুরে তাকিয়ে সে স্মিত হেসে বলে, ‘ম্যান. নট নাউ, লুক হোয়াট আই ডিসকভারড্।’
তার হাতের ইশারা অনুসরণ করে আমি দিগন্তের দিকে তাকাই। হাল্কা বনানীর ফাঁকফোকর দিয়ে আয়নার ভাঙাচোরা টুকরা-টাকরার মতো দৃশ্যমান হচ্ছে হ্রদের রূপালি জলরেখা। আমার হাত চেপে দিয়ে সে বলে, ‘উই হ্যাভ আবাউট আ মাইল টু গো।’ তারপর চোখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে বলে, ‘হ্রদে কালো সোয়ানটির সাক্ষাৎ পেলে… আই উইল ব্লেস ইউ উইথ অল দ্য কিসেস্ ইউ ওয়ান্ট।’
আমি সামিট রক থেকে নামার পথে ভারসাম্য রক্ষা করতে তাকে সাহায্য করি। সে দাঁড়িয়ে পড়লে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে জানতে চাই, ‘ইজ দ্যাট অল আই অ্যাম গোনা গেট?’ পাহাড়ের ফ্ল্যাট সারফেসে নেমে এসে সে ফের লাইট হার্টেডভাবে জানতে চায়, ‘হোয়াট এলজ্ ডু ইউ ওয়ান্ট?’
আমি জবাবে কিছু বলি না, তবে তার চোখে আমার দৃষ্টি লক হয়ে যায়। সে ফিক করে হেসে পাহাড় থেকে নামতে নামতে বলে, ‘অলরাইট, লেকের কাছে প্রথমে পৌঁছি, তারপর… আই উইল থিং আবাউট…।’
বুনোফুল মাড়িয়ে হাল্কা অরণ্যানীর কাছে আমরা চলে আসি আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কম সময়ে। বনতলের ঝরাপাতা মাড়িয়ে কদম কয়েক সামনে বাড়তেই হ্রদের সর্পিল জলরেখা দেখতে পাই। সরোবর দেখতে পেয়েই ‘হিয়ার ইট ইজ, উই অ্যারাইভড্ , দিস ইজ কুল’ বলে স্কারলেট উল্লাস ছড়ায়। তাকে কেন জানি একটু ইমোশন্যালও দেখায়। সে আমার কব্জি চেপে দিয়ে বলে, ‘দেয়ার ইজ নো ওয়ে আই উড হ্যাভ কাম হিয়ার অল এলোন, ট্রেইলে অন্য কোন হাইকার নেই, জংলা মতো জায়গায় একটি মেয়ে একাকী অফ দ্য ট্রেইল হাইক করছে, দিস ইজ সিম্পলি নট সেফ… ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দিস।’
আমি তার মন্তব্যকে বোঝার চেষ্টা করি। সে আরো নিবিড় হয়ে কাছে এসে বলে, ‘থ্যাংক ইউ ফর হাইকিং উইথ মি… তুমি কাছে কাছে হাঁটলে আমি কীরকম যেন সেফ ফিল করি।’ তার কথা শুনে আমি মনে মনে ভাবি, হাইকিং ট্রেইলগুলোতে মেয়েরা সেফ বলে যে কথাবার্তা শুনি, এ ধারণা কী আদৌ সত্য নয়?
হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রসারিত জলের রূপালি শরীরের দিকে তাকাই, সাথে সাথে প্রাণ তর হয়ে যায়। দেখি, খানিক দূরে সাদা পশমের তুলতুলে একটি কুকুর ঘাসে বসে চিন্তামগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে থির জলের দিকে। জংলা জায়গায় ‘ট্রিকসি, কামঅন বেইবি,’ বলে আওয়াজ হয়। কুকুরটির কান খাড়া হয়ে ওঠে, কিন্তু সে নড়ে না। ফের ঝরাপাতায় ছরছর শব্দের সাথে ভেসে আসে,‘ট্রিকসি, সুইট বেইবি, কাম টু মামি।’ কুকুরটি ঘুরে তাকায়। ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে লাঠি ভর দিয়ে বেরিয়ে আসেন এক বৃদ্ধা। মাথায় স্কার্ফ বাঁধা এ মহিলা কায়ক্লেশে কুকুরটির দিকে আগ বড়ান, তাঁর বাম হাতে ধরা রাবারের একটি রিং। ট্রিকসি নামক কুকুরটি কাছে গিয়ে লেজ নেড়ে তাঁকে শোঁকে।
সবুজাভ তরলে পূর্ণ প্লাস্টিকের স্বচ্ছ ডাঁটিঅলা জার হাতে একটি কিশোরী ঝোপের আবডাল থেকে বেরিয়ে এসে যোগ দেয় বৃদ্ধার সঙ্গে। বালিকাটির বয়স তেরো কিংবা চৌদ্দ, তার বাড়ন্ত শরীরে নারীত্বের নওল কুঁড়ি কেবলমাত্র কলি হয়ে ফুটছে। সে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে হ্যালো বলে।
বৃদ্ধা ট্রিকসিকে টেনে সামান্য দূরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। সারমেয়টি অনিচ্ছায় এক-পা দু-পা করে আগ বাড়ছে। তাকে সামলাতে গিয়ে মহিলার মাথায় পরা স্কার্ফটি খুলে পড়ে। কিশোরী মেয়েটি জার মাটিতে রেখে ছুটে যায় অই দিকে। কিন্তু বৃদ্ধা তার সাহায্য নেন না। তিনি ট্রিকসিকে ‘সিট ডাউন’ বলে কাঁপা হাতে স্কার্ফটি বাঁধার চেষ্টা করেন। মেয়েটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকাও বোধ করি তার পছন্দ হয় না। তিনি তার দিকে তাকিয়ে খিটমিটিয়ে বলে ওঠেন, ‘জেসিকা, গো এন্ড ট্রাই টু সেল ইয়োর লেমোনেড, আই ক্যান টেক কেয়ার অব অব মাইসেল্ফ।’
বৃদ্ধাকে ছেড়ে খানিক দূরে হেঁটে গিয়ে জেসিকা একটি বোল্ডারের উপর লেমোনেডের জারটি রেখে আমাদের দিকে তাকায়, সে অসহায় ভঙ্গিতে হাসে। বৃদ্ধা ট্রিকসিকে টেনে ঠিরঠিরিয়ে আরো খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে কী একটা হিসাব করে জলে ছুঁড়ে দেন রিংটি। ট্রিকসি লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে যাচ্ছে ওই দিকে।
বৃদ্ধা জলে রিং ছুড়তে ছুড়তে হ্রদের পাড় ধরে লাঠি ভর দিয়ে হিলহিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। জেসিকা আমাদের দিকে তাকিয়ে, ‘হেই ইউ টু, ওয়ানা বাই সাম ফ্রেশ লেমোনেড ফ্রম মি?’
এ প্রশ্নে সাড়া দিয়ে আমরা হেঁটে যাই তার কাছে। জেসিকার হাসিখুশি শিশুর মতো সরল মুখটি আমার ভালো লাগে। সে কোয়ার্টার বা সিকির বিনিময়ে বিক্রি করছে কাগজের পেয়ালায় লেমোনেড। আমরা তা কিনি, এক ডলারের ভাংতি না থাকলে স্কারলেট তাকে চেঞ্জ রেখে দিতে বলে। জেসিকা খুশি হয়ে হেসে মিনমিনিয়ে উচ্চারণ করে, ‘থ্যাংক ইউ সো মাচ গাইজ।’ তারপর লাজুক হেসে ফের জানায়, ‘আই অ্যাম সো পুওর, আজকে এক গ্লাসও লেমোনেড বিক্রি করতে পারিনি।’ স্কারলেট স্নেহভরে তার কাঁধে হাত রেখে কথাবার্তা বলতে শুরু করে। লেবুর তাজা সৌরভ ছড়ানো সবুজাভ রঙের পানীয়টি স্বাদে চমৎকার। তো আমি কাগজের কাপ হাতে একটু দূরে ঘাস ধামসে পড়ে থাকা একটি গাছের কাণ্ডের ওপর বসি।
জেসিকা মনে হয় শরীরে যতটা বেড়েছে, সে অনুপাতে তার মন পরিণত হয়নি। বালিকাটির অত্যন্ত ফ্র্যাংক কথাবার্তা আমাকে অবাক করে! বৃদ্ধা সম্পর্কে তার মাতামহী। কিছুদিন আগে ক্যান্সার-সংক্রান্ত সার্জারি থেকে রিকভার করেছেন। কিমো থেরাপির প্রতিক্রিয়ায় উনার তাবৎ চুল পড়ে গেছে। রোগমুক্তির পর একা একটি বাড়িতে বসবাস করছিলেন, তখন তিনি আক্রান্ত হন ডিপ্রেশনে। তো জেসিকার মা তাকে নিয়ে এসেছেন তাদের সংসারে। মহিলা আজকাল রেগুলার মেজাজ প্রসন্ন করার পিল নিচ্ছেন। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। তিনি সারাক্ষণ খিটিমিটি করেন, রেগে যান কোন কারণ ছাড়া।
স্কারলেটের সঙ্গে কথাবার্তায় জেসিকা তার নানীর পেশা সম্পর্কে একটি ইন্টারেস্টিং তথ্য দেয়। তিনি নাকি তারুণ্যে ছিলেন পেশাদার ডগ ট্রেইনার। একসময় নিজে ব্রিড করে বিক্রি করতেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর-ছানা। তো নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য জেসিকার মা তাকে ট্রিকসি নামক এই বাচ্চা কুকুরটি কিনে দিয়েছেন। মহিলা এ মুহূর্তে ট্রিকসিকে সাঁতরে রিংটি মুখে নিয়ে পাড়ে ফেরার ডগ-ট্রিক শেখাচ্ছেন। তিনি খুবই ইনডিপেনডেন্ট মাইন্ডেড মহিলা, নিজ হাতে সব কাজ সম্পন্ন করা পছন্দ করেন, জেসিকা তাকে হেল্প করতে গেলে বাঁধে বেজায় খিটিমিটি।
এ পর্যন্ত জেসিকার কাহিনি শুনে স্কারলেট প্রশ্ন করে, ‘হোয়ার ইজ ইয়োর মাদার নাউ?’ মেয়েটি সরোবরের মাঝামাঝি ভেসে থাকা একটি ছোট্টমোট্ট দ্বীপাণুর দিকে ইশারা করে জানায়, মায়ের নতুন বয়ফ্রেন্ড কায়াক জাতীয় নৌকায় মাকে তুলে নিয়ে গেছে ওই গাছপালায় নিবিড় ভাসমান ডাঙায়। জেসিকার বাবার সাথে মায়ের ডিভোর্স হয়েছে বছর চারেক আগে। তার বাবা আলাস্কার একটি মিলিটারি বেইসে কাজ করছেন। তিনি জেসিকাকে শুধু জন্মদিনে একবার টেলিফোন করেন। গেল চার বছরে মায়ের জুটেছে পর পর তিনজন বয়ফ্রেন্ড। এদের মধ্যে বর্তমানটি মারকুটে ধরনের। মায়ের এই পুরুষ-বন্ধুটি সম্পর্কে জেসিকা – ‘আই সিম্পলি হেইট হিম’ বলে নেতিবাচক মন্তব্য করে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায়। কী যেন ভেবে সে অতঃপর গলার স্বর নামিয়ে স্কারলেটকে বলে, ‘দিস গাই ইজ আ হর্নি টাইপ, আই স হিম হ্যাভিং সেক্স উইথ মাই মাম অন দি কিচেন ফ্লোর…। উইকয়েন্ডে মা আমার সাথে একটু সময় কাটাক, এটা সে পছন্দ করে না, কোন না কোন অজুহাতে মাকে সে ডেকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকিয়ে ডোর লক করে দেয়।’
কথা বলতে বলতে কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জেসিকা আর্তস্বরে বলে ওঠে, ‘অহ্ মাই গাড, গ্র্যান্ডমাকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় পেরিয়ে গেছে।’ সে ব্যাকপ্যাক থেকে জলের বোতল ও ঔষধের স্ট্রিপটি হাতে ছুটে যায় তার নানীর দিকে। আমি ও স্কারলেট ফের সরোবরের পাড় ধরে হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে স্কারলেট জেসিকাকে নিয়ে সংবেদনশীলভাবে কথা বলে। সংসারে বাবা অনুপস্থিত, মা খুঁজে বেড়াচ্ছে সঠিক পুরুষ-সাথী, এ পরিস্থিতিতে ডেভেলপমেন্টালি চ্যালেঞ্জড্ একটি টিনএজারের বেড়া ওঠার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলতে তার কন্ঠস্বর আবেগের কুয়াশায় বুঝে আসে।
সে অজানা একটি মেয়েকে নিয়ে এতো ইমোশন্যাল হচ্ছে কেন? বিষয়টা আমাকে অবাক করে! স্কারলেটের পরিবার, তার মা-বাবার সম্পর্ক নিয়ে আমি শুনেছি খানিকটা, বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে তার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে একটি ভাবনা ভেসে ওঠা পাঁকাল মাছের মতো ছলবল করে ওঠে, তবে কী মা-বাবার ডিভোর্সের অভিজ্ঞতা স্কারলেটেরও আছে? কিন্তু এ নিয়ে ফ্র্যাংকলি প্রশ্ন করতেও বাঁধো বাঁধো ঠেকে। সরোবরের বঙ্কিম বাঁকটিতে এসে সে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, ‘ইউ নো, আই হ্যাভ সো মাচ অ্যাডমায়ারেশন ফর দ্য ক্যান্সার সারভাইভার এল্ডারলি ওয়োম্যান। কী সুন্দর বেচারি একা একা মারাত্মক রোগজীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে চলছেন, মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছেও হাল ছেড়ে দেননি।’ স্কারলেট চোখ মুছে, ঠিক বুঝতে পারি না, সে হঠাৎ করে এতো ইমোশন্যাল হচ্ছে কেন?
লেকের পাথুরে পাড়ে দুজনে বসার উপযোগী একটি ক্যানু জাতীয় নৌকা দেখতে পেয়ে স্কারলেট তা খুঁটিয়ে দেখার জন্য এগিয়ে যায়। পাশাপাশি গাছের কাণ্ডে আটকানো জং-ধরা একটি ফলকও আমরা আগ্রহের সাথে পড়ি। বোটটি হ্রদের জল উপভোগ করতে আসা মানুষজনদের সেবার জন্য স্মিথ দম্পতি দান করেছেন। এ সরোবরে কোন লাইফ গার্ড নেই, সাঁতার কাটতে হয় নিজের দ্বায়িত্বে। তো তিন বছর আগে সাঁতার শেখার সময় দুর্ঘটনায় জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাদের পাঁচ বছর বয়সের শিশুপুত্রের। বালকটি ভালোবাসতো ক্যানু-বোটে চড়ে ভেসে বেড়াতে। তো স্মিথ-দম্পতি বাচ্চাটির স্মৃতিতে ক্যানুটি উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তাদের অনুরোধ হচ্ছে, কেউ বোটখানা ভাসিয়ে উপভোগ করতে চাইলে নৌকা বাওয়া যেন ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন।
আমরা উৎসাহের সাথে ঠেলা-ধাক্কা করে বোটটিকে জলে নামিয়ে হাল ধরে বৈঠা ফেলি। পাড় ঘেঁষে ভেসে যাওয়ার সময় জলমগ্ন কাদায় পা চুবিয়ে বসে থাকা সারস ও হিরণ পাখিগুলো উড়ে যায়। তাই স্কারলেট জোরেশোরে বৈঠা মেরে বোটখানিকে নিয়ে আসে সরোবরের মাঝামাঝি। এ দিককার জল এতো স্বচ্ছ যে, নিচে কাদায় পুঁতে থাকা লতাগুল্মের শিকড় ঘিরে ঘুরপাক করা মাছগুলোকে পরিষ্কার দেখা যায়। স্কারলেট বৈঠা বাওয়া বন্ধ করে চুপচাপ ছানাপোনাসহ ভেসে যাওয়া একটি মা-মাছকে অবলোকন করে। তারপর চোখ মুছে প্রশ্ন করে, ‘ডু ইউ এভার কেইম অ্যাক্রস আ নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স?’
আমি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার মতো আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাবি। সে ফের কথা বলে, ‘ডু ইউ প্রেফার নট টু শেয়ার দিস?’ তার চোখে চোখ রেখে আমি এ অব্দি যা কাউকে বলিনি, তা অকপটে ব্যাখ্যা করি, ‘ইয়েস, আই ওয়াজ ক্লোজ টু ডেথ, ইউ ওয়াজ ড্রাগ অভারডোজ। ঢাকা শহরে মেকি ব্রাউন সুগার চালু হয়েছিলো, আমি আনকোরা ড্রাগটি টেস্ট করতে গিয়ে ঠিক কী হয়েছিল সঠিকভাবে বলতে পারবো না। পরে নার্সের কাছ থেকে শুনেছি, সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট অবস্থায় কারা নাকি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইউনিটে আমাকে নিয়ে এসেছিল।’
আমার অভিজ্ঞতা বিস্তারিত শুনে তেমন একটা অবাক হয় না স্কারলেট, বরং কৌতূহল নিয়ে জানতে চায়, ‘ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা কী তুমি একা বলেছিলে, না তোমার সাথে কোন বন্ধু বা আত্মীয় উপস্থিত ছিলো?’
আমি দ্রুত জবাব দেই, ‘না, ডাক্তারের সঙ্গে কথাবার্তা আমাকে একাই বলতে হয়েছিল, বন্ধু-বান্ধব বলতে আমার তো কখনোই তেমন কেউ ছিল না, আর যে সময়ের কথা বলছি, আমার অপ্রথাগত লাইফ স্টাইলের কারণে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকেও আমি ছিলাম বিচ্ছিন্ন।’
আমার মুখের কথা লুফে নিয়ে সে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, ‘দিস সাউন্ডস্ সো মাচ লাইক মাই এক্সপিরিয়েন্স। আমাকে প্রতিবছর ডাক্তারের কাছে একাই যেতে হয়। আই ডোন্ট হ্যাভ আ রিয়েল ক্লোজ ফ্রেন্ড দ্যাট আই কুড শেয়ার দিস পার্সন্যাল পেইন। আর পরিবারে মা-বাবার মধ্যে যে রকম ভাংচুর পরিস্থিতি চলছে, আমার কষ্টের কথা তাদের বলতেও ইচ্ছা হয় না।’
আমি বৈঠার মৃদু ঠেলায় হাল্কাভাবে বোটটি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে যেতে তার বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনি। কথা বলা থামিয়ে সে চোখের ভেজা পাপড়ি তুলে তাকালেÑ জানতে চাই, ‘তোমাকে কেন প্রতি বছর ডাক্তারের কাছে একা যেতে হয়, স্কারলেট? আমাকে বিশ্বাস করে বিষয়টা বলা যায়?’
ছোট্টমোট্ট ভাসমান দ্বীপাণুটির ওপাশে পায়ে পানি কেটে কেটে ডানা ঝটপটিয়ে ছুটে যায় বিরাট আকারের প্রসারিত কালো ডানার একটি পাখি। স্কারলেট বোটের নিশানা ওই দিকে ফিরিয়ে জবাব দেয়, ‘ফর সাম রিজন আই ফিল লাইক টু টেল ইউ, চার বছর আগে আমার শরীরের ধরা পড়ে ক্যান্সারের গ্রোথ। আমি ড্যান্সার হিসাবে ঘর ছেড়েছি বছর সাতেকের মতো। তবে মা-বাবার সঙ্গে খানিকটা যোগাযোগ ছিল। কিন্তু আমার ডায়াগনোসিসের মাস দুয়েক আগে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়। এ ঘটনায় দুজনে এতো ডিপ্রেসড্ হয়ে পড়ে যে, তারা আমার টেলিফোন পর্যন্ত তুলছে না। মেডিকেল ইন্সুরেন্স কেনার মতো টাকা-পয়সা আমার ছিল না। তো আমি কানাডাতে গিয়ে ফ্রি ট্রিটমেন্ট নেই, সার্জারির পর ভালোভাবে রিকভারও করি। কিন্তু এ ধরনের ক্যান্সার শরীরে ফিরে আসার সম্ভাবনা চল্লিশ শতাংশ। তো প্রতি বছর একবার ফিরে যাই মনট্রিলে, পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাই, ডাক্তার ক্লিয়ারেন্স দিলে ফিরে আসি।’
দ্বীপাণুর ভাসমান ডাঙাকে একপাশে রেখে সে বৈঠা মেরে বাঁক নিয়ে ফের বলে, ‘ওয়ান থিং আই মাস্ট টেল ইউ, টেস্টের রেজাল্ট শোনার জন্য ডাক্তারের ওয়েটিং লাউঞ্জে একা বসে থাকা, আই জাস্ট হেইট দিস, আই উইশ আ, হ্যাভ সামওয়ান উইথ মি দ্যাট আই কুড শেয়ার মাই এগনি।’
আমি এবার জানতে চাই, ‘স্কারলেট, এ বছর কবে তুমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছো?’ সে বৈঠা গুটিয়ে পাটাতনে রেখে জবাব দেয়, ‘আরো মাস তিনেক পরে – নভেম্বরের পনেরো তারিখে মন্ট্রিল যাবো।’ সে কী যেন ভাবে, তারপর ‘দ্যাটস্ আবাউট ইট’ বলে চোখ তুলে তাকায়, আমি নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু নিজের অজান্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, ‘ইউ আর নট গোয়িং টু সি দ্য ডক্টর এলোন ইন নভেম্বর, ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড আই উইল বি উইথ ইউ… সিটিং রাইট নেক্সট টু ইউ ইন ডক্টরস্ ওয়েটিং লাউঞ্জ।’
মাথা হেলিয়ে মনযোগ দিয়ে সে আমার কথা শুনে জানতে চায়, ‘ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড. ইউ আর মেকিং আ কমিটমেন্ট?’
আমি জোরেশোরে জবাব দেই, ‘ইয়েস, আই ডু, এন্ড আই অ্যাম শিওর আবাউট দিস, তোমার সাথে মন্ট্রিলে যাওয়া আই থিং, আই অ্যাম গোয়িং টু এনজয় দিস।’
আমার কথা শুনে স্কারলেট কেমন যেন মৌন হয়ে যায়। চোখ নামিয়ে কিছু একটা ভাবে। বোট দ্বীপাণুর পাড় ঘেঁষে ড্রিফ্ট করে করে ভাসছে। চকিতে দেখতে পাই, জংলা ডাঙায় ঘাসে ফোমের ম্যাট পেতে শুয়ে আছে বিকিনি পরা এক নারী, শিথানে হাঁটু গেড়ে বসে এক পুরুষ ব্রাশ করে দিচ্ছে তার লালচে আভা ছড়ানো গুচ্ছ গুচ্ছ স্ট্রবেরি-ব্লন্ড চুল। আমি বৈঠা মেরে বোটটিকে সারিয়ে নিয়ে আসি হ্রদের শৈবালদাম জড়ানো জলজগুল্মের পরিসরে। মনে জেসিকার ইমেজ ফিরে আসে, বালিকাটি বোধ করি লেমোনেডের জার নিয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে একা।
কিছু না বলে স্কাররেট হাঁটুতে ভর দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আসে। আমাদের নীরব অন্তরঙ্গতায় বোটখানা বেমক্কাভাবে দুলে ওঠে। আমি মুখে কপট সিরিয়াসনেস ফুটিয়ে তুলে জানতে চাই, ‘ইজ দিস অল দ্য ব্লেসিং দ্যাট ইউ প্রমিজড্।’
চোখের উপর থেকে অলকগুচ্ছ সরিয়ে সে বলে, ‘দেয়ার মাইট বি আ লিটল মোর, সময় হলে তুমি তা জানতে পারবে।’
বৈঠা বেয়ে আমরা আরো খানিকটা ভেসে যাই। স্কারলেটের অস্ফুট আওয়াজে আমি চমকে ওঠি। সে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘লুক, হোয়াট আ স্টানিং ব্ল্যাক সোয়ান!’
আমি ঘাড় ফেরাই, ‘কুচকুচে কালো পালকের বিরাট একটি রাজহাঁস জলে তার ডানার তাড়নে সৃষ্ট বৃত্তের দিকে দিশা ধরে তাকিয়ে আছে। স্কারলেট স্বগোক্তির মতো ফের বলে, ‘সো গ্ল্যাড দ্যাট আই অ্যাম এবোল টু সি দিস গ্রেইসফুল সোয়ান।’
তার প্রতিক্রিয়ায় অব্যক্ত কী একটা আছে যা আমি ঠিক ধরতে পারি না, তাই ভেসে যেতে যেতে প্রশ্ন করি, ‘দিস সোয়ান ইজ রিমার্কয়েবলি বিউটিফুল… কিন্তু একে একনজর দেখা তোমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন, স্কারলেট?’
চোখ তুলে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়, ‘ক্যান্সার সারভাইভার হলে দিনযাপনের হিসাব-নিকাশে মৃত্যুর বিষয়টা বার বার ফিরে ফিরে আসে, ডাক্তার খোলাখুলি সম্ভাব্য মৃত্যুর ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়, পরামর্শ দেয় মনে মনে প্রস্তুত থাকার জন্য।’
তার মন্তব্য নিয়ে নীরবে প্রতিফলন করতে চাই, কিন্তু মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,‘ আই থিংক আই আন্ডারস্ট্যান্ড দিস… কিন্তু গর্জিয়াস এ কালো সোয়ানকে পর্যবেক্ষণের সাথে তুমি তোমার সম্পর্কে যা বললে তার কানেকশনটা কোথায়, স্কারলেট।’
খুব ম্লান হেসে সে জাবাব দেয়, ‘আমি চলে যাওয়ার পর আমার পুরুষসঙ্গী বাকি জীবন একাকী কাটাবে, এটা অবাস্তব প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে আমি খুবই সচেতন, কিন্তু রাইট অফটার মাই ডেথ কিছু দিন হলেও কেউ আমাকে মনে রাখছে, এটা ভাবতে ভালো লাগে।’
‘লেটস্ নট টক আবাউট দিস এনিমোর’, বলে স্কারলেট ফেরার জন্য বোটখানি বাঁকিয়ে ঘোরাতে মন দেয়। আমরা অন্য দিকের পাড় ঘেঁষে খানিকক্ষণ চুপচাপ ভাসি। জলের উপর কাঠেগড়া একটি ভিউয়িং প্ল্যাটফর্মের কাছে এসে স্কারলেট হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, ‘হোয়াট আ লাভলি লিটিল টয় সেইলবোট।’
কাঠের পাটাতনে অপরাহ্ণের প্রসন্ন আলোয় সেইলবোটের ছোট্টমোট্ট মলেডখানি আমার মধ্যে কাগজের নৌকা ভাসানোর উদ্দীপনা তৈরি করে। উৎসাহের সাথে বলে উঠি, ‘আই ওয়ান্ট ওয়ান অব দিস।’
বৈঠা বাইতে বাইতে স্কারলেট মন্তব্য করে, ‘তোমার জন্মদিন অব্দি তুমি যদি আমার সাথে থাকো, পারহেপ্স আই উইল বাই আ মডেল সেইলবোট অ্যাজ আ বার্থডে গিফ্ট।’
প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু বলি না, তবে মনকে মৃত্যুসংক্রান্ত ভাবনা থেকে বিযুক্ত করার জন্য একটি মডেল সেইলবোট উপহার পাওয়ার সম্ভাবনাকে কল্পনা করি। এ ধরনের একখানা শিশুতোষ নৌকার মডেল নিয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে পারলে – কল্পনা করি, চাঁদনী রাতে আমাদের বসতবাড়ির বাইরের দিঘিতে তা ভাসানো যায়।
জল থেকে বোটখানা টেনে তুলে স্কারলেট প্রশ্ন করে, ‘আর ইউ স্টিকিং আরাউন্ড উইথ মি টিল ইয়োর বার্থডে?’
আমি জবাব দেই, ‘ইয়েস, আই উড লাইক টু রিসিভ মাই ফার্স্ট মডেল সেইলবোট।’
সে ‘ও-কে, দ্যাটস্ আ ডিল,’ বলে আমার দিকে তাকায়। তখনই অনুভব করি, আমার স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ফের দূরে সরে গেল।
(চলবে)
মঈনুস সুলতান
গল্পকার, কবি, অনুবাদক ও ভ্রমণলেখক। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০।