তীরন্দাজ রিপোর্ট
সর্বভারতীয় কেন্দ্রীয় বাংলা সাহিত্য অকাদেমি পেলেন কবি শ্যামলকান্তি দাশ এবং তরুণ লেখক হামিরুদ্দিন মিদ্যা পেলেন যুবা সাহিত্য অকাদেমি। কবি সুবোধ সরকারের ফেসবুক পোস্ট থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সুবোধ সরকার জানাচ্ছেন, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি ছিলেন তখন তিনি বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে চালু করেছিলেন যুবা পুরস্কার (পঁয়ত্রিশ বছরের নীচে)। সেদিন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, একজন লেখককে সত্তর-আশি পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষার অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েই তিনি যুবা পুরস্কার প্রবর্তনে ভূমিকা রাখেন। আজ সারা ভারতে যুবা সাহিত্য অকাদেমি অন্য তিনটি পুরস্কারের মতো সমান উজ্জ্বল। তরুণ লেখকেরা সর্বভারতীয় স্তরে একটা পরিসর তৈরি করতে পেরেছেন।
শ্যামলকান্তি দাশ
কবি ও সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৫১ সারের ৩ নভেম্বর মেদেনীপুর জেলার রাধাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে মহিষাদল কলেজ, মেদিনীপুরে ভর্তি হন। তিনি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করতে পারেননি। কলকাতার একটি বিখ্যাত সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানে ২৭ বছর সাংবাদিক হিসাবে কাজ করবার পর স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে এখন সম্পাদনা করছেন মাসিক কবিতাপত্র ‘কবিসম্মেলন’।
শ্যামলকান্তি সত্তর দশকের কবিতাভুবনের এক অন্যতম অনিবার্য ও অগ্রগণ্য নাম। কবিজীবনের শুরু গত শতকের সেই উত্তাল সত্তরের দশকে। গ্রামবাংলা ও শহরের দ্বৈরথ ও সখ্যে গড়ে উঠেছে তাঁর কবিতা। বাংলা কবিতায় এনেছেন এক ভিন্নতর স্বাদ ও অনন্য আবেদন, যা একেবারেই তাঁর নিজস্ব। এক মায়াবী আচ্ছন্নতায় ঘিরে থাকে তাঁর অধিকাংশ কবিতা। ছন্দ তাঁর অনায়াসলব্ধ, ভাষাভঙ্গি একান্তভাবে স্বকীয়। কবিতার বোধ ও প্রকাশ সর্বার্থেই অভূতপূর্ব। সাহিত্যপত্রের সম্পাদক হিসেবেও খ্যাতিমান তিনি।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কাগজকুচি (১৯৭৭)। বড়দের ও ছোটদের মিলিয়ে ৩০টি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা। কবির সম্পাদিত পত্রিকা অন্তত ১২টি | বর্তমানে তিনি কবিতার মাসিকপত্র কবিসম্মেলন”-এর সম্পাদক। কবির কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সম্পাদনা করেছেন অসংখ্য গ্রন্থ।
কবি শ্যামলকান্তি দাশ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার (১৯৭২). কবি জীবনানন্দ দাস পুরস্কার (১৯৭২), প্রতিশ্রুতি পরিষদ পুরস্কার, পত্রভারতী থেকে সাধনা চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার, আনন্দ স্নোসেম পুরস্কার প্রভৃতি। এবার পেলেন সর্বভারতীয় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
হামিরউদ্দিন মিদ্যা
তাঁর জন্ম ১৪ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে, শালি নদী ও দামোদর নদ মধ্যবর্তী বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর প্রত্যন্ত গ্রাম রূপপালে। প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই মাঠঘাট চাষবাসের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে।
লেখালেখির নেশা স্কুলজীবন থেকেই। গ্রামবাংলার সহজ-সরল প্রান্তিক মানুষজনদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে থাকতে তাঁদের কথা জানানোর জন্যেই কলম তুলে নেন। ২০১৬ সালে ‘লগ্নউষা’ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। সেই থেকেই লিখে চলেছেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক অবাণিজ্যিক পত্রপত্রিকায়।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আজরাইলের ডাক (২০১৯) ও মাঠরাখা (২০২২)। ২০১৮ সালে ‘গল্পলোক’ পত্রিকা জেলার প্রতিশ্রুতিমান গল্পকার হিসাবে ‘প্রতিশ্রুতিমান গল্পকার সম্মান’-এ ভূষিত করে। এছাড়াও প্রথম গল্পসংকলন ‘আজরাইলের ডাক’-এর জন্য ২০২১ সালে পেয়েছেন ‘দৃষ্টি সাহিত্য সম্মাননা’। ২০২২ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে পেয়েছেন ‘ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার’। ‘মাঠরাখা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য কৃত্তিবাস পত্রিকা প্রদত্ত ‘সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্মাননা ২০২২’-এ ভূষিত হয়েছেন। তাঁর গল্প ইংরেজি ও হিন্দিতেও অনূদিত হয়েছে। এবার পেলেন সাহিত্য অকাদেমি যুবা পুরস্কার।
হামিরউদ্দিন মিদ্যা তীরন্দাজ-এর নিয়মিত লেখক।
দু’জনকেই তীরন্দাজ-এর পক্ষ থেকে অভিনন্দন।