অনুবাদ উপন্যাস কথাসাহিত্য

হাওয়ার্ড ফাস্ট | মুক্তির পথ [৬] | ভাষান্তর : মোবাশ্বেরা খানম বুশরা | উপন্যাস

পর্ব ৬

উপন্যাসের স্থান : আমেরিকা।
ঘটনাকাল : সিভিল ওয়ার (১৮৬১-১৮৬৫) পরবর্তীকাল
আমেরিকার সবচেয়ে জঘন্য প্রথাটি ছিল দাসপ্রথা। কালোদের ওপর যে নির্য়াতন চালানো হয়েছে, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল সেটি। এই দাসত্বপ্রথা আরও চলবে কি না, সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধটা ছিল তাই নিয়ে। কিন্তু একসময় এই যুদ্ধ শেষ হলো। কালোরা মুক্ত হলো। এরপর কালোরা কীভাবে তাদের অধিকার পেল, এই উপন্যাসের গল্পটি তাই নিয়ে।

ঔপন্যাসিকের উপক্রমণিকা

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ রক্তঝরানো সেই যুদ্ধ। এ্যাতো বড় যুদ্ধ বোধহয় আর দেখে নি পৃথিবীর লোক। সে যুদ্ধ শেষ হলো শেষ পর্যন্ত। নীল পোশাক পরা লোকেরা ফিরে এল ঘরে। ধূসর পোশাক পরা লোকেরা হতবাক দৃষ্টি আর ক্ষরিত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে রইল তাদের বিস্তীর্ণ ভূমির দিকে। দেখল যুদ্ধ কি করতে পারে।
এ্যপোম্যাটোক্স কোর্ট হাউজে জেনারেল লী তার অস্ত্র সমর্পন করলেন আর অবসান হল এই যুদ্ধের। উষ্ণ দক্ষিণ দেশে চব্বিশ লক্ষ কালো মানুষ মুক্ত হল। বড় কষ্টে পাওয়া এই স্বাধীনতা, বড় মূল্যে কেনা। একজন মুক্ত মানুষের কাছে তার গতকাল আর আগামীকাল দুটোই একান্ত নিজের। সে দুটোরই হিসাব রাখে। ক্ষিদেয় পেট জ্বলছে, কিন্তু কোনো প্রভু নেই তোমার মুখে খাবার তুলে দেবার, তবে দ্রুত পা ফেলে হেঁটে গেলেও তো কেউ নেই যে বলবে, আস্তে হাঁটো। এই কালোদের মধ্যে দু’শ হাজার ছিল প্রজাতন্ত্রের সৈন্য। তাই যখন যুদ্ধ শেষ হলো অনেকেই ঘরে ফিরে এল হাতের বন্দুক সাথে নিয়ে।
গিডিয়ন জ্যাকসন ছিল তাদেরই একজন। দীর্ঘ মজবুত দেহে ক্লান্তি, হাতে বন্দুক, গায়ে রংচটা নীল পোশাক, সে ফিরে এল ক্যারোলাইনার মাটিতে, কারওয়েল জমিদারিতে (প্ল্যান্টেশনে)। বিশাল সাদা বাড়িটা যেমন ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে আছে ওর মনে পড়ল। যুদ্ধে তার কিছুই হয় নি। কিন্তু মাঠে আর বাগানে আগাছা, জঙ্গল। কারওয়েলরা চলে গেছে, কেউ জানে না কোথায়। মুক্ত মানুষেরা ফিরে এসে তাদের পুরোনো দাস কোয়ার্টারগুলোতে আবার জীবন শুরু করল, যারা কোথাও যায় নি তাদের সাথে। যতই মাস যেতে লাগল কারওয়েল জমিদারিতে আরও আরও মুক্ত মানুষেরা ফিরে আসতে লাগল, উত্তরের ঠান্ডা ভূমি থেকে, যেখানে তারা স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়েছিল, ইউনিয়ন সেনাবাহিনী থেকে যেখানে তারা লুকিয়ে ছিল, পাইনের বনে অথবা জলাভূমিতে। সব জায়গা থেকে মুক্ত মানুষের দল ফিরতে লাগল। পুরোনো জীবনে ফিরে গভীর বিস্ময়ের সাথে ওরা দেখল যে ওরা এখন স্বাধীন।

পর্ব ৬

তখন শেষ বিকেল, ছায়াটা যখন লম্বা আর ক্লান্ত, গিডিয়ন কারওয়েলে ফিরে এসেছে। সেই বিশাল রাজকীয় প্ল্যান্টেশন বাড়িটার চুড়ো প্রথমে দেখা গেল, সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে, একপাশে সাদা ছায়া অন্য পাশে গোলাপি আর সোনালি। খচ্চরটা ক্লান্ত, ধীরে ধীরে পা ফেলছে। ‘অনেকটা পথ এসেছি,’ বুড়ো লোকটা অনুযোগের সুরে বলল, ’ফিরে যেতে যেতে একদম অন্ধকার হয়ে যাবে।’
সব সময় যা হয়, বাচ্চারাই প্রথমে ছুটে এল গলার জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে। চারদিক থেকে বাচ্চাগুলো বেরিয়ে এল একটা ঝোপের ভেতর থেকে একঝাঁক কোয়েলের মতো। ওদের ভেতরে মার্কাসও ছিল। গিডিয়ন মনে করতে পারে না এত লম্বা ও ছিল নাকি। জেফ একটা পুরুষ মানুষের মতো, ও অনেক পেছনে ছিল, ছুটছিল না, হেঁটেই এল, একটা সম্মানবোধ ছিল সে হাঁটায়। আর শেষ অব্দি র্যা শেলকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে গিডিয়ন, চোখ ভিজে আসছে, বাচ্চাদের সামনে সে জন্যে লজ্জাও লাগছিল।
র্যা শেল ওকে ফিরে পেয়েছে। ওর জন্যেও সময় নমনীয় হয়ে এসেছে যেন একটা রাবারের যন্ত্রের মতো, যেটাকে টেনে আগে পিছে করা যায়, যেটা শিথিল করা যায় আবার ছোট্ট একটা গিটের মতো বেঁধে ফেলা যায়। এই তিনমাস যেন অনন্ত কাল ছিল। আর র্যা শেল ওর নিজের মতো করেই জানত সেই আগের একই গিডিয়ন আর ফিরে আসবে না।
ওর ভয় ছিল অবয়বহীন, বদলে যাওয়া, ছায়ার মতো। ওদের ভেতরটা অজানা, যা দিগন্তে পাহাড়ের কোণা থেকে ছড়িয়ে গিয়ে একেবারে সারা পৃথিবীটাকে ঘিরে নেয়। সব কিছুর শুরু ও শেষ কারওয়েলে, কারণ ওতো আর কোনো জায়গার কথা জানেই না। ওর মাকে একটা বুকের দুধ চোষা বাচ্চাসহ ভার্জিনিয়া থেকে এনে চার্লস্টনের ব্লকে নিলামে তোলা হয়েছিল। বাচ্চাটার জন্যে ওর দাম আরো বিয়াল্লিশ ডলার বেড়েছিল; এই হলো র্যা শেল, যার স্মৃতি শুরু হয় কারওয়েলে যেখানে অন্য কোনো জায়গাই আর নেই। এমনকি যুদ্ধ, যা সারা দক্ষিণে ছড়িয়েছে তাও এই জায়গার ওপরে তেমন ছাপ ফেলতে পারে নি। একবার এক তরুণ, লাল গাল, নীল চোখ সোনালি বাদামি জুলফি ও গোঁফ, কারওয়েলের বাগানের ভেতর দিয়ে ক্লান্ত এক দল নীলরং পোশাক পরা লোককে নিয়ে এসেছিল – সেই ওর প্রথম ইয়াঙ্কি দেখা। সেই লোকটি চেঁচিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘এ্যাই মেয়ে কবে তুমি শেষ বিদ্রোহীকে দেখেছিলে?’ ওর নাঁকিসুরে নিউ ইংল্যান্ডের উচ্চারণের কথা র্যা শেল বুঝতেই পারে নি। মার্কাস ওর স্কার্টের তলায় লুকিয়েছিল, ওর মনে ভীষণ ভয় ধরে গেল বুঝি ওরা মার্কাসকে নিয়ে যাবে, নদীর ধারে বা কোথাও নিয়ে বেচে দেবে। তাই ভয়ে দৌড়ে পালাল। ফিরে এসে ইয়াঙ্কিদের আর দেখে নি, ততক্ষণে ওরা চলে গেছে। এরপর আরো ইয়াঙ্কি এসেছে, বিদ্রোহী সৈন্যরাও, যুদ্ধের স্রোত প্রথমে কারওয়েলের এক পাশ ধুয়ে নিয়ে গেছে, তারপর আরেক পাশ। স্রোতের একটি ধারায় গিডিয়ন, হ্যানিব্যাল ওয়াশিংটন, আর অন্যরা হারিয়ে গেল – গেল বন্দুক তুলে নিয়ে নিজেদের মুক্তির জন্যে লড়াই করতে। বাইরের বিশাল রহস্যময় পৃথিবীর পাকস্থলিটা ওদের গিলে ফেলল। দুই বাচ্চা নিয়ে পড়ে থাকা র্যা শেলকে ওদের ফিরে আসার বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হলো। গিডিয়ন ছিল উদয় হওয়া আর অস্ত যাওয়া সূর্যের মতই বিশাল ও নিশ্চিত। যদি অন্য মহিলারা কান্নাকাটি করত, র্যা শেল বলত, ‘গিডিয়ন বলেছে ও আসবে।’ সেটা হয়ত ওকে বিশ্বাস দিত কিন্তু ওর ভয় তো যেত না। ও যদি গিডিয়নকে হারায় তাহলে সারা পৃথিবীই তো শেষ হয়ে যাবে। অন্য লোকেরা এমন ছিল না। পাপের কথাই ধর, কোনো কোনো মহিলা তাদের শরীরকে পাপের পথে দিতে পারে হয়ত, এমন অবস্থা বুঝে, এমনকি যে যে নিঃসঙ্গতা ও কামনা তাকে তাড়িয়ে নেয় বা নিয়েছিল তার জন্যে। র্যা শেলও কখনো এমন অবস্থা দেখেছে যখন ও হয়ত গিডিয়নের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার কথা ভেবেছে! এসব ভাবনার আবছা অবয়ব ওর মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে। কারণ ও গিডিয়ন গিডিয়নই ও। এমনকি ওদের বিয়েটা যেমন ছিল, গোপন অনুষ্ঠানের জন্য ব্রাদার পিটারের কাছে যাওয়া, যেখানে কত কত নারী পুরুষ একজন আরেকজনকে তাদের শরীর এমনিই দিয়ে দিচ্ছে। ওরা জানে ওদের জন্য বিয়ে হলো একদিন বা এক মাস বা বছরের জন্যে। এটা ঈশ্বরের সামনে কোন বন্ধন নয়, বরং মুহূর্তের জৈবিক সুখে জ্বলে ওঠা আনন্দ, বিক্রি হয়ে যাবার আগে, বেসাতি হওয়ার বা লাম্পট্যে পড়ে যাবার আগে। তবু ও আর গিডিয়ন বিয়ে করেছে দুজন দুজনকে প্রতিজ্ঞা করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ও এমন সুখী যে সেটার একটা প্রকাশ আছে, ‘র্যা শেলের মতো।’
যদি একটি চাতক পাখি ভাল গান গায়, সেটা র্যা শেলের মতো গাইছে। ও ওর লোকটিকে চেনে। যখন ওকে গিডিয়নকে দিচ্ছিলেন ঈশ্বর তখন হাসছিলেন। ও জানে সেটা। গিডিয়ন চলে গেলে দুর্ভোগ বেড়েছিল, তবু সেটাও যেন ওরই একটি অংশ ছিল যেটা ও বুঝত, চিনত। ওর বোঝা গিডিয়নের চেয়ে আলাদা। ছোটবেলায় অন্য বাচ্চাদের মতো ও এই সত্য মেনে নিয়েছিল যে গাছের পাতা নড়ে গিয়ে বাতাস তৈরি হয়। যখন গিডিয়ন বলল ঠিক এর উল্টোটা হয় তখন ও সেটাই মেনে নিল কারণ গিডিয়ন বলেছে। গিডিয়নকে সব সময়েই জানতে হবে কেন কি। ওর কাছে কিছুই কারণ ছাড়া ঘটে না। কিন্তু র্যা শেলের মনের ভেতরে ওর রক্তের উষ্ণতাই কারণ হিসেবে যথেষ্ট। ওর ভেতরের গভীর শক্তিশালী অনুভবটাই অনেককিছু বোঝে জানে। মাঝে মাঝে সেই জানা খুব আশ্চর্যজনক ভাবে ঠিক হয়। ওকে চার্লস্টনের কথা, সম্মেলনের কথা জানতে হয় নি, জানতে হয় নি নতুন যে পৃথিবী তৈরি হচ্ছে তার কথা কিন্তু ও জানত যে লোকটা গেছে আর যে ফিরে আসবে, দুজন এক হবে না। ‘আমার লোকদের যেতে দাও’ মানে ওর কাছে গিডিয়নকে পাওয়া, সব সময়ে ওর বাচ্চাদের কাছে রাখা, তবুও ও যেন টের পাচ্ছিল যে সূর্যালোক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে সেটা ওর স্বামীকেও স্পর্শ করেছে। গিডিয়ন প্রথম যে চিঠি ও লিখেছিল সেটা এসেছিল চার্লস্টন থেকে। শুরুর দিকে ব্রাদার পিটার, জেমস অ্যালেনবিকে দিয়ে চিঠিগুলো পড়িয়ে নিত। এই লজ্জা ওকে পড়তে শেখাল। রাতের বেলায় অন্য নারী পুরুষদের সাথে ছোট্ট একটা ঘরে ভীড় করে বসত, অ্যালেনবি যেভাবে দিনের বেলায় বাচ্চাদের পড়াতেন সেভাবে পড়ত। তবে ও শিখেছে খুব ধীরে। মাথা ব্যথা করত। গিডিয়ন দূরে সরে যাচ্ছিল, আরো দূরে।
তারপর ও ফিরে এল, আবার ওকে হাতের বাঁধনে জড়িয়ে ধরল। ও এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল করে জানে ‘স্বাধীনতা অনেক মূল্যে জিতে নিতে হয়।’
গিডিয়নের ফিরে আসার পরের দিনটি ছিল রোববার। ব্রাদার পিটার সূর্যের আলোয় বাগানে সভা ডাকলেন। ওরা জোর গলায় গাইল,‘প্রভু আমায় হাত ধরে নিয়ে যাও, নিয়ে যাও প্রভু হাত ধরে।’ ব্রাদার পিটার বইটা খুললেন, ‘ইসাইয়াহ্’ থেকে পড়লেন,‘ দেখ, প্রভু ঈশ্বর শক্ত হাতে আসবেন, এবং তাঁর হাতই শাসন করবে। দেখ, তাঁর পুরস্কার তাঁর সাথেই আছে, সামনে তাঁর কাজ। তিনি তাঁর মেষদেরকে রাখালের মতো করে খাওয়াবেন। তাঁর মেষশাবকদেরকে তিনি বুকে করে বইবেন, আর যারা তরুণদের সাথে আছে ধীরস্থিরভাবে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন।’ ‘আমেন,’ মাথা নেড়ে সবাই বলল। বাচ্চারা নড়াচড়া করছে, মোচড়ামুচড়ি করছে, একজন আরেকজনের চুল টানছে, কুকুরগুলোকে ঘেউ ঘেউ করছে। গিডিয়ন র্যা শেলের পাশে বসে আছে, সাথে জেফ, মার্কাস আর জেনি। কিন্তু র্যা শেল ঘাসের ওপর ওকে চার্লস্টনের চমৎকার পোশাকটা পরে বসতে দেবে না বলে একটুকরো কাপড় বিছিয়ে দিল। ওকে দেখতে যেমন লাগছে তাতে ওদের সবার বড্ড গর্ব হচ্ছিল। ‘তোমরা আমেন বল,’ লোকেরা মাথা নাড়ল। জেফের চোখ বার বার ছুটে যাচ্ছিল যেদিকে বুড়ো মিস্টার এ্যালেনবির সাথে অন্ধ মেয়েটি বসে ছিল সেদিকে। সেটা দেখে গিডিয়ন ভুরু কুঁচকাল। ম্যারিয়ন জেফারসনের ছোট্ট মেয়েটা কাঁদতে শুরু করলে ও ওর ওপর ঝুঁকে পড়ল, ‘চুপ চুপ এখন চুপ কর বাবু।’ ‘প্রভু মহান,’ লোকেরা এদিক ওদিক দুলতে দুলতে মাথা নাড়ল। ব্রাদার পিটার বললেন :
‘আজ আমি কোনো ধর্মোপদেশ দেব না। কারণ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ গিডিয়ন ভায়া আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। মনে হয় আমাদেরকে মুক্তি দিয়ে ঈশ্বর সঠিক কাজটিই করেছেন। উনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন। মধু ও দুধের নহর বয়ে যাবার মতো সমৃদ্ধ এই ভূমি আমাদের প্রতি তাঁর আশির্বাদ, যখন অন্য কালো লোকেরা খেতে পাচ্ছে না, মাথা গুঁজবার ঠাঁইটুকুও তাদের নেই। ঈশ্বর আমাদের ভোটের সুযোগ দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি ওর সাথে সেই সুদুর চার্লস্টনে শহরেও ছিলেন। কিভাবে হলো? গিডিয়ন ভাই সম্মেলন হলে বড় বড় লোকের সাথে বসেছেন। সদয় প্রভু তাকে রাজা ডেভিডের উচ্চতায় তুলে দিয়েছেন, সবাই প্রভুর প্রশংসা কর।’
‘আমেন,’ লোকেরা বলল।
‘ ভাই গিডিয়ন বাড়ি ফিরে এসেছে। আজ আমার ধর্মোপদেশের বদলে সে কথা বলবে। সে আমাদেরকে জানাবে কিভাবে কি হলো। উঠে দাঁড়াও ভাই গিডিয়ন। এখানে এসে দাঁড়াও যেন পুরো ধর্মসভা তোমাকে দেখতে পায়।’
অতএব গিডিয়ন তাদেরকে সব বলল। যতটা সহজ সরলভাবে পারল বুঝিয়ে বলল। যা কিছু ঘটেছে তার সব বলল, কিভাবে ও চার্লস্টনে গেল, ওর ভেতরের ভয়, কিভাবে ও খালাসির কাজ করেছে, কিভাবে ও কার্টারদের সাথে থাকতে শুরু করেছিল, এবং শেষ পর্যন্ত কিভাবে ও সম্মেলনে বসেছিল। এই প্রথম ও ওদেরকে বুঝিয়ে বলতে পারল ভোট মানে কি ছিল আসলে। কংগ্রেসের এই পুরো পুনর্গঠনের নীতির পেছনে কি ভাবনা ছিল, কিভাবে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এগোবে, কাজ করবে। এখন তো একটি নতুন রাজ্য সংবিধান তৈরি হয়েছে। এক এক করে সংবিধানে নেয়া পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বলল, সেগুলোকে ব্যাখ্যা করল। তবে এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল যে কত বড় ফারাক আছে লিখিত নিয়ম ও বাস্তবে তার প্রয়োগের মধ্যে। সংবিধান বলছে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা রাজ্যে সার্বজনীন শিক্ষা থাকবে, তবে টাকা যোগাড় করতে হবে, শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, স্কুল ভবন তৈরি করতে হবে – তার আগে পর্যন্ত ওরা যেন যেভাবে সম্ভব লেখাপড়া শিখতে পারে। ও বলল বর্ণবাদ বিলোপ করে একটি আইন করলেই সেটা বিলোপ হবে না। বছরের পর বছর লাগবে সেটা মুছে যেতে।
‘আর আমাদের কি হবে? এখানে আমরা যারা আছি?’ গিডিয়ন বলল। ‘কিভাবে সেই ভবিষ্যতের সাথে আমরা মানিয়ে নেব? হ্যাঁ সেটা ভাবছি। আমি এখানকার চারদিকে দেখেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি, একটা জিনিস দেখেছি। ডাডলি কারওয়েল এ জায়গাটা আরেকটি লোকের কাছে হারিয়েছে, যে সেটা খাজনা না দিতে পেরে হারিয়েছে। তার মানে আজ হোক কাল হোক এটা নিলামের ব্লকে চলে যাবে, আর যে সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে পারবে সেই জায়গাটা পাবে। সেই সময় আসুক, আমরা বাইরে যাই, আমরা কি করতে পারি সেটা আগে দেখি। আমি ঠিক জানি না আমরা কি করতে পারব। আমি এটা নিয়ে ভেবেছি, অনেক ভেবেছি, আর যাই করতে চাই আমাদের টাকা লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাব, সেটা তো জানি না। তবু হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হতাশ হবার কারণ মরে গেছে, চলে গেছে। এখন একটা উজ্জ্বল নতুন সময় আমাদের সামনে দেখতে পাচ্ছি। নতুন সময় আসছে।’

(চলবে)

মোবাশ্বেরা খানম বুশরা
অনুবাদক, গল্পকার ও নাট্যকার।

পূর্ববর্তী পর্বের লিংক (পর্ব ৫)

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field