পর্ব ৫
উপন্যাসের স্থান : আমেরিকা।
ঘটনাকাল : সিভিল ওয়ার (১৮৬১-১৮৬৫) পরবর্তীকাল
আমেরিকার সবচেয়ে জঘন্য প্রথাটি ছিল দাসপ্রথা। কালোদের ওপর যে নির্য়াতন চালানো হয়েছে, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল সেটি। এই দাসত্বপ্রথা আরও চলবে কি না, সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধটা ছিল তাই নিয়ে। কিন্তু একসময় এই যুদ্ধ শেষ হলো। কালোরা মুক্ত হলো। এরপর কালোরা কীভাবে তাদের অধিকার পেল, এই উপন্যাসের গল্পটি তাই নিয়ে।
ঔপন্যাসিকের উপক্রমণিকা
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ রক্তঝরানো সেই যুদ্ধ। এ্যাতো বড় যুদ্ধ বোধহয় আর দেখে নি পৃথিবীর লোক। সে যুদ্ধ শেষ হলো শেষ পর্যন্ত। নীল পোশাক পরা লোকেরা ফিরে এল ঘরে। ধূসর পোশাক পরা লোকেরা হতবাক দৃষ্টি আর ক্ষরিত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে রইল তাদের বিস্তীর্ণ ভূমির দিকে। দেখল যুদ্ধ কি করতে পারে।
এ্যপোম্যাটোক্স কোর্ট হাউজে জেনারেল লী তার অস্ত্র সমর্পন করলেন আর অবসান হল এই যুদ্ধের। উষ্ণ দক্ষিণ দেশে চব্বিশ লক্ষ কালো মানুষ মুক্ত হল। বড় কষ্টে পাওয়া এই স্বাধীনতা, বড় মূল্যে কেনা। একজন মুক্ত মানুষের কাছে তার গতকাল আর আগামীকাল দুটোই একান্ত নিজের। সে দুটোরই হিসাব রাখে। ক্ষিদেয় পেট জ্বলছে, কিন্তু কোনো প্রভু নেই তোমার মুখে খাবার তুলে দেবার, তবে দ্রুত পা ফেলে হেঁটে গেলেও তো কেউ নেই যে বলবে, আস্তে হাঁটো। এই কালোদের মধ্যে দু’শ হাজার ছিল প্রজাতন্ত্রের সৈন্য। তাই যখন যুদ্ধ শেষ হলো অনেকেই ঘরে ফিরে এল হাতের বন্দুক সাথে নিয়ে।
গিডিয়ন জ্যাকসন ছিল তাদেরই একজন। দীর্ঘ মজবুত দেহে ক্লান্তি, হাতে বন্দুক, গায়ে রংচটা নীল পোশাক, সে ফিরে এল ক্যারোলাইনার মাটিতে, কারওয়েল জমিদারিতে (প্ল্যান্টেশনে)। বিশাল সাদা বাড়িটা যেমন ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে আছে ওর মনে পড়ল। যুদ্ধে তার কিছুই হয় নি। কিন্তু মাঠে আর বাগানে আগাছা, জঙ্গল। কারওয়েলরা চলে গেছে, কেউ জানে না কোথায়। মুক্ত মানুষেরা ফিরে এসে তাদের পুরোনো দাস কোয়ার্টারগুলোতে আবার জীবন শুরু করল, যারা কোথাও যায় নি তাদের সাথে। যতই মাস যেতে লাগল কারওয়েল জমিদারিতে আরও আরও মুক্ত মানুষেরা ফিরে আসতে লাগল, উত্তরের ঠান্ডা ভূমি থেকে, যেখানে তারা স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়েছিল, ইউনিয়ন সেনাবাহিনী থেকে যেখানে তারা লুকিয়ে ছিল, পাইনের বনে অথবা জলাভূমিতে। সব জায়গা থেকে মুক্ত মানুষের দল ফিরতে লাগল। পুরোনো জীবনে ফিরে গভীর বিস্ময়ের সাথে ওরা দেখল যে ওরা এখন স্বাধীন।
পর্ব ৫
কিভাবে গিডিয়ন জ্যাকসন তার নিজের লোকেদের কাছে ফিরে এল শেষ অব্দি কাজটি শেষ হয়েছে, সংবিধান রচনার কাজটি। এখন এর আলোকে একটির পর একটি আইন প্রণয়ন হচ্ছে। এই ইউনিয়নের, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে লোকেদের ভাবনাগুলো কি, কিভাবে তারা স্বাধীনতা, জীবন, মুক্তি ও সুখের অন্বেষণকে সংজ্ঞায়িত করেছে এইসব নির্ধারণ করা হয়েছে এখানে। ১৮৬৮ সালের বসন্ত কাল, উজ্জ্বল সজীব নতুন একটি বছর। একটি নতুন যুগ, যেমনটি যাজক বললেন,
‘দয়ালু ঈশ্বর, যিনি বোঝেন ও ক্ষমাশীল, প্রভু, আমরা আমাদের সকল কর্মে তোমার আশির্বাদ চাই। আমরা ইচ্ছে করে ভুল করি নি, আমরা তো মরণশীল জীব, অশুভের প্রতি দুর্বল; পাপ, যে পাপসীমা অতিক্রম করে যায় সব মরণশীল মানুষেরা..।’
এরপর পুরো সম্মেলন দাঁড়িয়ে গেল এবং গান গাইল, তাদের গর্বিত মধুর কণ্ঠ,‘আমার দেশ, আমরা তোমার গান গাই, মিষ্টি মুক্ত দেশ, আমি তোমার গান গাই।’
‘তোমার পরিকল্পনা কি?’ কারডোজো গিডিয়নকে প্রশ্ন করল।
‘দেশে ফিরে যাবার।’
‘অনে..ক..দিন তো হয়ে গেল, তাই না?’
‘অনেকদিন,’ গিডিয়ন হাসল। ‘ফ্রান্সিস, কালো লোকেদের ব্যাপারে একটা মজার বিষয় হলো ওদের মনটা খুব ঘরকাতুরে। পুরোনো সেই খারাপ দিনগুলোতে, নদীর তীরে নিগারদের বিক্রি করা হতো। ওটা কিন্তু ওদেরকে মেরে ফেলার চেয়েও খারাপ। আমার এখন ঘরে ফিরে যাবার প্রচন্ড খিদে।’
‘কিন্তু তারপর?’
‘সেটাই ভাবছি,’ চিন্তান্বিত সুরে বলল গিডিয়ন। ‘আমার লোকেরা মাটি চেনে, কি করে তাকে পটিয়ে একটু তুলো তোলা যায়, একটু ভুট্টা, খুব বেশি না, এটুকুই। এখন ওরা যেখানে আছে সেটা পুরোনো কারওয়েল প্ল্যান্টেশন, কিন্তু সেটা তো সব সময় থাকবে না। আমি ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম জমিটার খোঁজ খবর করতে। কারওয়েল ওটা দেনার দায়ে হারিয়েছে আর দেনাদাররা খাজনা দিতে পারে নি বলে হারিয়েছে। এই সুসময়ে ওটাকে নীলামে তুলে দেয়া হবে। তখন আমার লোকেরা কোথায় যাবে?’
‘এত এত ভূমিহীন, কালো লোক, পায়ে জুতো নেই, পেটে খাবার নেই। সেটা একটা সমস্যা আর এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটার মুখোমখি এখন আমরা হচ্ছি গিডিয়ন।’
‘দেখি হয়ত আমি কিছু করতে পারি এ ব্যাপারে। বেশি কিছু নয়, তবু অন্তত আমার লোকদের দেখাতে পারি কিভাবে তারা একটু জমি কিনতে পারে। তবে সে ব্যাপারেও খুব নিশ্চিত নই। কোনো রাস্তা পেয়েও যেতে পারি, আবার নাও পেতে পারি। জানি না, অন্তত বাড়ি গিয়ে চেষ্টা করে তো দেখি।’
‘সেটা অল্প ক’জনকে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু সমস্যার বাস্তব সমাধান তো হবে না এভাবে।’
’আমি জানি।’
‘গিডিয়ন তুমি কি কখনো রাজনীতির কথা চিন্তা করেছ?’
‘সেটা কি?’
কারডোজো, একটু হেসে গিডিয়নের দিকে তাকিয়ে মনে করিয়ে দিল ওদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটিকে। ‘তখনি আমি বুঝতে পেরেছিলাম,’ বলল, ‘যে, আমাকে তোমার মত লোকদেরকে আস্থায় নিতে হবে।’
‘কেন আমার মত লোকদেরকে কেন?’
‘কারণ এই পুরো রাজ্য, আসলে পুরো দক্ষিণ ভূমিরই, আমাদের অল্প ক’জন বিরোধী ছাড়া, একটিই ভবিষ্যত আছে, তা হল নিজে নিজেই যেভাবে হোক দাঁড়ানো। সেটা তুমি করেছ, এরকম আরো শ’ শ’ লোক করেছে। আমরা একমত হই না গিডিয়ন, অনেক বিষয়ে আমাদের মাঝে সমুদ্র সমান ফারাক। তুমি আগ্রাসী লোক, তোমার সমস্ত নম্রতা ও ভদ্রতা নিয়েও। আমি সেভাবে চিন্তা করি না। কিন্তু তোমার ভেতরে অনেক কিছু আছে যা আমার নেই, বিশাল শক্তির অনেকটা, অনেক বড় মূল্যবোধ, কিভাবে তুমি সেটা ব্যবহার করবে?’
‘যদি সেটা থাকে,’ গিডিয়ন হাসল, ‘থাকতে পারে, আবার না ও থাকতে পারে। আমি খুবই নিশ্চিত যে আমি জানি না। এসব নিয়ে আমি ভাবতে চাই, আমি শিখতে চাই। দেখ ফ্রান্সিস আমি একজন মূর্খ লোক, যদি তিন মাস আগেও আমি জানতাম আমি কতটা মূর্খ আমি হয়ত তখনি হাল ছেড়ে দিতাম।’
‘গিডিয়ন, ফিরে যাবার আগে তুমি আরো একবার ভাব। শুধু অল্প একটু ভাব। অল্প ক’দিনের মধ্যেই এই রাজ্যের রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা একটি সভায় বসবে। আমি তাদের একজন। গিডিয়ন একবার ভাব, অ্যাব লিংকনের দল এখানে আসবে, তারাই রাজ্য চালাবে। এটা আমরা জানি, সম্মেলনের ভোটের ফল আমরা দেখেছি। এর মানে একটি রাজ্য আইনসভা, একটি পুরো প্রশাসনিক স্থাপনা, কংগ্রেস সদস্য, সিনেটর সব কিছু নীচ থেকে গড়ে তুলতে হবে। তুমি এর শুরুতে ছিলে গিডিয়ন। যত ছোটই হোক না কেন আমাদের সংবিধানের একটি অংশ তোমার হাত থেকে এসেছে। হ্যাঁ এখন তোমার সুযোগ হবে সেটাকে অনুসরণ করার, আইনগুলো প্রয়োগ করার।’
‘কিভাবে?’
‘আমরা কেউ কেউ চাইছি তুমি রাজ্য সিনেটে বস, একজন প্রার্থী হও।’
গিডিয়ন মাথা নাড়ল।
‘না কেন?’
‘এতে কাজ হবে না,’ গিডিয়ন বলল।
‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ?’
‘আমি আর ভয় পাই না,’ গিডিয়ন হাসল। ‘এতে কাজ হবে না এই আর কি। আমি তো জানি, আমি কি। হয়ত বছর খানেক বা পাঁচ বছর পর হতে পারে, কিন্তু এখন নয়। আমি ঠিক যোগ্য নই ফ্রান্সিস।’
‘যারা সেখানে যাবে তাদের অনেকের চেয়েই তুমি যোগ্য।’
‘হতে পারে,’ গিডিয়ন কাঁধ ঝাঁকাল।
‘এ ব্যাপারে ভাববে তো?’
‘না আমি বাড়ি যাব।’
‘যদি বলি তুমি ভুল করছ, গিডিয়ন?’
‘যেটা আমার কাছে সবচেয়ে ভাল মনে হয় সেটাই করব।’
‘তোমার সাথে তর্ক করে লাভ নেই তাই ত?’
‘আমারো সেটাই মনে হয় লাভ নেই।’
‘আমি দুঃখিত,’ কারডোজো বুঝতে পারল।
ও আর গিডিয়ন হাত মেলাল, একটু পরে বলল, ‘তোমাকে জানতে পেরে আমার জন্যে ভাল হয়েছে।’
‘কিভাবে তা হল?’
‘হয়ত আমিও একদিন বাড়ি যেতে পারব।’
যখন গিডিয়নের বাড়ি যাবার সময় হল মিসেস কার্টার লজ্জা না করে আন্তরিকভাবেই কাঁদলেন, ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন, মুখে চুমু খেলেন। ‘তুমি যদি কখনো চার্লস্টনে আমাদের সাথেই থাকবে।’ ওঁরা খুবই বাড়াবাড়ি করলেন, একটা ঝুড়িতে অনেক খাবার দিলেন। কার্টার র্যা শেলের জন্যে একজোড়া জুতো বানিয়েছেন, কালো জুতো, উঁচু ও বোতাম দেয়া। গিডিয়ন ওঁকে দাম দিতে চাইল। ‘এতো ছোট্ট একটি উপহার বাছা।’ আরেকটি উপহার ছিল, বাইবেল। ‘মনের শান্তির জন্যে। তুমি খুব ভাল ছেলে গিডিয়ন, কিন্তু ঈশ্বরের দিকে মুখ করে থেকো।’ গিডিয়ন আঁচ করতে পারছিল ও চলে গেলে ওঁরা কেমন একা বোধ করবেন। ওঁরা খুব ভালো উৎসবের মত ভোজের ব্যবস্থা করেছিল, ভাজা মুরগি, ভাজা বড় চিংড়ি, গরম গরম ভুট্টার রুটি, বাটি ভর্তি শাকসব্জি। তাদের প্রতিবেশি বন্ধুরা আসতে লাগল যতক্ষণ না ছোট্ট বাড়িটা ভরে গেল। গিডিয়ন ভাবতেই পারে নি এমন হবে। সবাই ওর সাথে হাত মেলাতে চাইছিল, আর মৃত্যুশোকের চেয়েও বেশি কান্নাকাটি হল। গিডিয়নের জন্যে এক অর্থে সম্মেলন ও সংবিধান ছিল নিতান্তই বিচ্ছিন্ন, একা, সেখানে মানুষ কান্না হাসি গর্ব।
এ্যন্ডারসন ক্লের সাথে ঘণ্টাখানেক কাটাল, যে ওকে বলল, ‘গিডিয়ন আমি তাদের মত নই যারা আনন্দে আর ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতায় দিশেহারা হয়ে যায়। এটা একটা শুরু। ধর এটা ভেঙে গেল, আমরা আবার শুরু করব। আমরা কেউনা কেউ তো সবসময়েই এদিক ওদিক থাকব; একজন আরেকজনকে জানব।’
‘আমরা একজন আরেকজনকে জানব,’ গিডিয়ন মাথা নাড়ল, লম্বা পাতলা লালমুখ মানুষটার হাত ধরে।
কিন্তু এর মধ্যেই ওর পাশ দিয়ে বা ওর জানার বাইরে দিয়ে অনেক কিছু চলে যাচ্ছিল। এখন ও বাইরে পা রাখছে, কিন্তু গত পনের সপ্তাহ যে ছোট্ট জগতটির ভেতরে ও ছিল সেটি ছিল পরিবর্তন ও উত্তেজনাময় একটি স্রোত। নিজের লোকেদের দেখার প্রচণ্ড অধীরতায় যখন ও বই গুছাচ্ছিল খুব তখন একা লাগছিল। একটা ছোট্ট একটা কার্পেটব্যাগে ভরার সময় দেখল এতদিনে বইয়ের বেশ বড় একটি স্তূপই হয়ে গেছে। এরই মধে হাতে রেলের টিকেটও এসে গেছে। না এবার আর ও হেঁটে কারওয়েলে ফিরে যাচ্ছে না। ও যেন সেই লম্বা লম্বা পা ফেলা কালো লোকটিকে এক রকম ঈর্ষাই করছে, যে কিনা সেই দূরের গ্রাম থেকে একশ মাইলেরও বেশি রাস্তা হেঁটে হেঁটে চার্লস্টনে এসেছিল।
আচ্ছা কারওয়েলেও কি কিছুই বদলায় নি? বুড়ো যে কালো লোকটা ওকে খচ্চরটানা পুরোনো একটি গাড়িতে করে কুড়ি মাইল নিয়ে এল সে সম্মেলনের কিছুই জানে না, চার্লস্টনে যে মাটি কেঁপে উঠেছে, অত্ত বড় বড় ঘটনা যেগুলোর গিডিয়ন একটি অংশ ছিল সে সবের কিছুই জানে না।। ‘সম্মেলন! নাতো শুনি নি তো…’ ও গ্রামের যে সব গপ্প বলে গেল সবই সেই চিরকালীন খবর, জন্ম, মৃত্যু, গেঁয়ো সব শান্তি অথবা ভয়ংকর সংঘর্ষের খবর যেগুলো হঠাৎ হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে বেড়িয়ে আসে লুকিয়ে থাকা ভলকানোর ভেতর থেকে। ‘মিসি বুলারের ছেলে শহরে ঘোরাঘুরি করছিল, শুধুই ঘোরাঘুরি, পাঁচটা সাদা লোক ওকে ধরে লাঠি দিয়ে মেরে ঝুলিয়ে রাখল তুলোকাঠের গাছে।’ ‘ও কি করেছিল?’ ‘আমি যদ্দুর জানি কিছুই করে নি। শুধু একটু ঘোরাঘুরি করছিল।’ বুড়ো লোকটা ওকে জানাল একটা রেললাইন আসছে, বড় জলাভূমিটা পেরিয়ে, সেখান দিয়ে বড় উঁচু একটা পথ তৈরি হবে জলভূমিটার ভেতর দিয়ে। ‘ওরা লোক নিচ্ছে, দিনে এক ডলার।’ ‘কালোদেরকেও দিনে এক ডলার দেবে?’ গিডিয়ন জানতে চাইল। ‘দিনে এক ডলার, ইয়াঙ্কিরা এখানে রাস্তা বানাচ্ছে।’ আর কারওয়েলের কি অবস্থা গিডিয়ন জানতে চাইল। ও বলল কারওয়েলের খবর অত জানে না, গত একবছরের খবর। ‘কিছু শোনো নি?’ ‘কি হবে বল তো বাপু?’ বুড়ো একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোমরা এত অস্থির কেন? শুধু অপেক্ষা কর আর দেখ। তোমাকে বলে রাখি এমন কোনো রাজত্ব এসে যাবে না। বুড়ো গরুর বাছুর হয়, সোমত্ত কালো মেয়ের পেট হয়। আর কি চাও?’ অতএব গিডিয়ন নিজের ভেতরে সেঁধিয়ে গেল, পরে জানতে পেল আবহাওয়াটা কেমন। ছ সপ্তাহ আগে কেমন ছিল, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এখন তো বসন্ত কাল, কি সুন্দর সবকিছু, মাঠে ফসল। কা কা করে কাকেরা উড়ে গেল যেমন সব সময় যায়। ঐ দেখা যায় একটা লোক শিকারে বেরিয়েছে, হাতের ভাঁজে ওর বন্দুকটা, ওর শিকারি কুকুরটা ঝোপঝাড় পেরিয়ে ছপ ছপ করে ঘাসের ওপর দিয়ে সামনে সামনে যাচ্ছে।
(চলবে)
মোবাশ্বেরা খানম বুশরা
অনুবাদক, গল্পকার ও নাট্যকার। প্রকাশিত গ্রন্থ : মার্ক টোয়েনের আত্মজীবনী (মূল : মার্ক টোয়েন), নারীর ভাগ্য জয়ের অধিকার (মূল : ম্যারি উলস্টোনক্রাফট), নারী এবং ক্রমবিবর্তিত সভ্যতা (মূল : উইনিফ্রেড হন্টবি), শৈশব, কৈশোর ও যৌবন (মূল : লিও তলস্তয়), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি (মূল : এ জি স্টক)। স্মৃতিচারণ : পাতার কুটির।
Leave feedback about this