ভাস্কর্যগাছ
যতটা দূর বললে দূরত্ব বোঝায় ততটা বিলাসিতা মাথায়
নেমে আসে বাজপাখি, ধমনী-শিরায় উড্ডয়নশীল রোদ।
ঘোড়সওয়ার মেঘের থেকে পরিমাণ মতো বজ্রপাত লুঠে
শূন্যতার মাঝে কালো হয়ে থাকে তিনটে ভাস্কর্য…
১. বিতাড়িত শোক নিয়ে বসে থাকা জ্যোৎস্নাপোড়া তক্ষক।
আধবোজা তার শান্তমুখ। ঘন নীল হৃৎপিণ্ড।
২. একবিদ্যুৎ রাত্রির আলোচ্ছ্বাসে পাতা জীবনফাঁদ। হাতের
নীচে টাঙিয়ে রাখা মৃত্যু, অক্সিজেন, নিউক্লিক অ্যাসিড।
৩. গোড়ায় পুরনো ধ্বংসস্তূপ ও আইবুড়ো বীণাগাছ। বুকের
ওপর হস্তধৃত অ্যালয়। গাছের ঘিলু। রিডছেঁড়া সংগীত।
ব্যাস! এবার শেখাও – কয়েক ছটাক মসৃণ হাহাকার
শুকনো গাছের ডাল, রুগ্ন জলের ছোপ;
মাটিতে গিঁথে দাও পুরুষাঙ্গের ভিড় আর মুখোশ
অথবা জাপটে ধরো আমার স্কেলিটন
দুমড়েমুচড়ে যাক সমস্ত ঋজুতা, সকল বৈয়াকরণ –
অকুস্থল এই ভোর
অচেনা নিশ্বাসে শুয়ে থাকি রোজ – আলো, আলো হবে।
কাত হয়ে যাই জন্মদিনের ধানে, দূর্বায়, পরমান্নে…
মাঠে মাঠে আলোকবর্তিকার উপহার ফুটে ওঠে।
পুনরায় চোখা ভোর প্রীতি হাতপাখা নাড়তে নাড়তে
আমাদের কবরের পাশে হেঁচে ওঠে একবার… দু-বার…
ধীর পায়ে মাকড়সার জাল দুহাতে ঠেলে
আমি ফিরে আসি গন্তব্যে, অপেক্ষার চোরাপাথর খেলি
গতিহীন আলোয় ভরা এই হাঁটে বেমানান রক্তের ছোটো জমায়েত হবে আজ
এই ভোর আমাদের ভালো কিছু দেবার আশা
এই ভোর সূর্যকে আটকে রাখবে আরো কিছুক্ষণ
এই ভোর পাখির ডাক বলা যায় তারপরও
এই ভোর এমন রং সরাসরি আত্মাশ্রয়… আত্মখনন!
সন্ন্যাসী ও পুরনো মদ
আখক্ষেতের নীচ দিয়ে মূলাধার, সরু আলপথ
সেই বরাবর নিতান্ত একলা হেঁটে চলেছি –
এখন বর্ষাকালীয় হাঁটার চেয়ে কঠিন কিছু নেই আমার
অথচ চেয়েছিলাম দুজনে মিলে দোয়াব তৈরি করবো
তুমি আগ্রা আমি এলাহাবাদ। সত্যি কথা বলতে
এরপর গ্রিন-সিটি প্রকল্পের বাঁধানো ঘাটে বসে
বিশ্রামরত উন্নয়নের সাথে আলোচনা আমাকে মানায় না ব্যক্তিগতভাবে বৃষ্টিপাত হলে আমি তুমুল হয়ে উঠি
ঘাসের রক্তের গন্ধ আমাকে বেসামাল করে রাখে ভোর
তুমি তখন ফেরিওয়ালার কঙ্কাল ছুঁয়ে দেখো, শুনতে পাবে
ষোড়শ মহাজনপদের ইতিকথা, পরিত্যক্ত ছায়ায়
চিনে নিতে পারবে গতরাতের ময়ূর-ধ্যাবড়ানো কাজল!
ভিন্ন রঙের মুখের মলাটে তীব্র দূষিত শহরতলির ঝড়
হুড-খোলা হৃৎপিণ্ডের প্রতি প্রকোষ্ঠে উথালপাথাল করে
থিকথিক করে পুরুষ শ্বাসের কার্বন…
তার উচ্চতা ও প্রশস্ততা খুব তীর কবিতার কথা বলে…
সৌরভ বর্ধন
পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলা নিবাসী। মূলত ভাট কবিতার লেখক। কবিতা বিষয়ক মুক্তগদ্যও লেখেন। গতবছরই প্রকাশিত হয়েছে তার ‘কবির জখম ও অন্যান্য মিথ্যাচার’ নামে প্রথম মুক্তগদ্যের বই। ২০২০ সালে ‘প্রসূতিকালীন পাঠ’ এবং ২০২৩ এ ‘চিঁহিঁফেকশন’ নামে কাব্যগ্রন্থ।
Leave feedback about this