গদ্য চলচ্চিত্র শিল্পকলা

সৈয়দ কামরুল হাসান | ‘দেবদাস’ : চলচ্চিত্রায়নের ইতিবৃত্ত এবং দিলিপ কুমার-সুচিত্রা সেনের ‘দেবদাস’ | চলচ্চিত্র

ক্লাসিক উপন্যাস ‘দেবদাস’


অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই। তাঁর রচিত ক্লাসিক – ট্র্যাজেডি ‘দেবদাস’ সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে এযাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। বইটি উপমহাদেশের প্রতিটি ভাষায় তো বটেই, বিশ্বের নানা ভাষায় অনূদিত হয়ে পাঠকদের কাছে আদৃত হয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার প্রেক্ষাপটে সামন্ত জমিদার ব্যবস্থায় আবর্তিত দুই নারী ও এক পুরুষের মন দেয়া নেয়া ও পরস্পরকে না পাওয়ার ট্র্যাজিক উপাখ্যান ‘দেবদাস’। বইটি প্রকাশনার একশো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে আরো চার বছর আগে। এই এক শতাব্দী জুড়ে মানব সভ্যতা যুগ থেকে যুগান্তরে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়েছে, মানুষের মনন, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি ও পছন্দ-অপছন্দে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন । আমরা আজ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি , কিন্তু ফেলে-আসা সময়ে যা কিছু ছিলো বিশ্বজুড়ে নন্দিত ও আদৃত অন্তত শিল্প-সাহিত্য-নন্দনকলায় সেগুলির আবেদন কি আজও অটুট আছে, ভবিষ্যতেও কি থাকবে? কিংবা আরো মৌলিক যে প্রশ্ন : ক্ল্যাসিক বা সর্বজনীন বলে আদৌ কি কিছু আছে, এও কি আপেক্ষিক নয় বহমান সময়ের নিরিখে? ‘দেবদাস’-এর স্রষ্টা বোহেমিয়ান শরৎবাবুর সেকথা জানবার কথা নয়। দেবদাস তাঁর একেবারে প্রথমদিককার রচনা, মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি যখন বিহারে ভাগলপুরে মামাদের আশ্রয়ে থাকতেন, সে-সময় তিনি লুকিয়ে উপন্যাসটি লিখতে শুরু করেছিলেন। বইয়ের নারী চরিত্রদ্বয় পার্বতী ও চন্দ্রমুখী তাঁর চেনা চরিত্র। তাঁর জীবনীকার বলেন, পারু তাঁরই স্কুল জীবনের সহপাঠী (ধীরু) যাঁকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। অপরদিকে চন্দ্রমুখী চরিত্রটি কালিদাসী নামে তাঁর চেনা এক নর্তকীর আদলে গড়া। আবার পার্বতী নামে নাকি সত্যি সত্যি একজন ছিলেন যিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালনার হাতীপোতা গ্রামের জমিদার ভূবনমোহিনী চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী। শরৎচন্দ্র হাতিপোতায় এসে শুনেছিলেন দেবদাস-পার্বতীর কাহিনি। তবে দেবদাস চরিত্রটি খানিকটা যে লেখকের নিজের যৌবনকালের ছায়ায় গড়া তা সহজে অনুমান করা চলে। জানা যায়, বইটি লিখে লেখক অতৃপ্তি বোধ করেছিলেন এবং এটিকে অত্যন্ত অপরিপক্ক ও অতিনাটুকে ভেবে প্রকাশ না করে ফেলে রেখেছিলেন আরও অনেকদিন। বইটি সম্পর্কে ১৯১৩ সালের ১৩ জুলাই বন্ধু প্রমথনাথ ভট্টাচার্যকে লেখা এক চিঠিতে তিনি মন্তব্য করেছিলেন : “ওই বইটা একেবারে মাতাল হইয়া বোতল খাইয়া লেখা”। (সূত্র : শরৎচন্দ্র, গোপালচন্দ্র রায়)। যাহোক অবশেষে বন্ধুদের চাপাচাপিতে তৎকালীন ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় লেখাটি ধারাবাহিকভাবে পত্রস্থ হয় এবং একই গোষ্ঠীর মালিকানাধীন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স থেকে ১৯১৭ সালের ৩০ জুন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরই উপন্যাসটি পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং কালপরিক্রমায় দেবদাস, পারু ও চন্দ্রমুখী গোটা উপমহাদেশীয় জনমানসে কিংবদন্তী চরিত্রের মর্যাদা লাভ করে। দেবদাস প্রকাশনার ১০০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার প্রাক্কালে দৈনিক প্রথম আলোয় ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর আমাদের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই তাঁর ‘শতবর্ষে দেবদাস’ নিবন্ধে দেবদাস যেভাবে ও যে-কারণে সময়ের প্রভাব তুচ্ছ করে অবলীলায় পাড়ি দিয়েছে এক শতাব্দী এবং কথাসাহিত্যের ইতিহাসে ধ্রুপদী উপন্যাসের মর্যাদা লাভ করেছে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। এই ক্ষুদ্রায়তন ও বিয়োগান্তক কালজয়ী উপন্যাসটি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন, “আধুনিক বাংলা সাহিত্যে দেবদাসই প্রথম উপন্যাস, যেখানে ট্র্যাজেডিই প্রধান উপজীব্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শরৎচন্দ্রের অতুলনীয় লিখনীভঙ্গি । ফলে দেবদাস-এর ধ্রুপদী মর্যাদা লাভ ছিল অবধারিত । ”


চলচ্চিত্রে ‘দেবদাস’


দেবদাসের কাহিনী ও চরিত্র সর্বোপরি এর নাট্যগুণ খুব দ্রুত চলচ্চিত্রকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আলোচকদের তথ্য বলছে – রামায়ন, মহাভারতের মতো উপাখ্যানধর্মী রচনা বাদ দিলে দেবদাসই সাহিত্যের একমাত্র কাহিনি যা সবচেয়ে বেশী চলচ্চিত্রের পর্দায় রূপায়িত হয়েছে। চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগে এর চিত্রায়ন শুরু; ১৯২৮ সালে কোলকাতার ইষ্টার্ণ ফিল্ম সিন্ডিকেটের ব্যানারে নরেশ মিত্রের পরিচালনায় এটি প্রথম সেলুলয়েডে উঠে আসে। ভারতে সবাক চলচ্চিত্রের শুরুটা হয়েছিলো ১৯৩১ সালে আর এর চার বছরের মাথায় ১৯৩৫ সালে দেবদাস সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মিত হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আসামের গৌরীপুরের মহারাজপুত্র বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব প্রমথেশ বরুয়া (পিসি বরুয়া) এর তিনটি সংস্করণ নির্মাণ করেন। তাঁর পরিচালনায় দেবদাস ১৯৩৫ সালে বাংলা, ১৯৩৬ সালে হিন্দি ও ১৯৩৭ সালে অসমীয় ভাষায় নির্মিত হয়ে মুক্তিলাভ করে। হিন্দি সংস্করণে দেবদাস চরিত্রে রূপ দেন কিংবদন্তি গায়ক কেএল সায়গলের সংগীতায়োজনে ছিলেন আরেক কিংবদন্তি – তিমিরবরণ। ১৯২৮-২০১৮ পযন্ত দেবদাসের ১৮টি ভার্সনের খোঁজ পাওয়া যায়। বাংলা, হিন্দি, অসমীয় ছাড়াও ভিন্নভিন্ন সময়ে দেবদাস নিয়ে তেলেগু, তামিল, মালায়লাম ও উর্দু ভাষায় চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে; এমনকি ভোজপুরি ভাষায়ও রয়েছে এর একটি ভার্সন। প্রমথেশ বরুয়ার পর কোলকাতায় (টালিউডে) দেবদাস নিয়ে আরো দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, একটি ১৯৭৯ সালে দিলীপ রায়ের পরিচালনায় – যাতে দেবদাস চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছিলেন স্বনামধন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, একই ছবিতে চুনিলাল চরিত্রে আবির্ভূত হন। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক উত্তমকুমার। ২০০২ সালে পরিচালক শক্তি সামন্ত আবার বাংলায় এর চলচ্চিত্ররূপ দেন – এতে নামভূমিকায় ছিলেন জনপ্রিয় শক্তিমান অভিনেতা প্রসেনজিৎ চ্যাটাজি। আমাদের এখানে, বাংলাদেশেও দেবদাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে; চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায়; দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রয়াত নায়ক বুলবুল আহমেদ, তাঁর বিপরীতে (পারুর ভ’মিকায়) ছিলেন কবরী সারোয়ার। একই পরিচালক ছবিটির আরো একটি রিমেক করেন ২০১৩ সালে, যার শিল্পী-তালিকায় ছিলেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও মৌসুমী। কেএল সায়গল, সৌমিত্র, প্রসেনজিৎ, বুলবুল আহমেদ ও শাকিব খান ছাড়াও দেবদাস চরিত্রে দিলীপ কুমার ও শাহরুখ খানের মতো দর্শক-মাতানো শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। পারু চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন : যমুনা বরুয়া, সাবিত্রী, সুচিত্রা সেন, শামীম আরা, কবরী, অর্পিতা পাল, ঐশ্বরিয়া রাই ও অপু বিশ্বাস। অন্যদিকে চন্দ্রমুখী চরিত্রে আলোচিত নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন : বৈজয়ন্তী মালা, সুপ্রিয়া চৌধুরী, আনোয়ারা, ইন্দ্রানী হালদার, মাধুরী দীক্ষিত ও বাংলাদেশের মৌসুমী।
প্রমথেশ বরুয়ার নির্মিত দেবদাস ছবিটি শরৎচন্দ্রের দেখার সুযোগ হয়েছিলো। বাংলায় নির্মিত ছবিটিতে দেবদাস–এর ভূমিকায় ছিলেন পরিচালক নিজে। [এই ছবি সম্পর্কে একটি খুব কৌতুহলোদ্দীপক, দুঃখজনকও বটে, সংবাদ হলো পিসি বরুয়া নির্মিত ও অভিনীত দেবদাস ছবিটির ১৪টি রীলের মাত্র ৬টি রীল পাওয়া গেছে, তাও আবার বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আর্কাইভ থেকে!] শোনা যায়, প্রমথেশ বাবুর অভিনয় দেখে শরৎচন্দ্র এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তাঁর মনে হয়েছিলো এই চরিত্রটির জন্যই প্রমথেশ বরুয়ার জন্ম। চলচ্চিত্র বিষয়ে ইউরোপ থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রমথেশ বরুয়া চলচ্চিত্রে ‘জাম্প কাট’ পদ্ধতি ব্যবহার করে চলচ্চিত্রে নাট্যমুহূর্ত সৃষ্টি করেছিলেন। শেষ দৃশ্যে তীরবেগে ছুটে আসা পার্বতীর চোখের সামনে জমিদারবাটির ফটক বন্ধ হয়ে যাওয়ার দৃশ্য সংযোজন দেবদাসের স্রষ্টা শরৎচন্দ্রকে এতটাই মুগ্ধ করেছিলো যে, তিনি নাকি বলেছিলেন – একটি চলচ্চিত্রিক মুহূর্ত যা বলতে সক্ষম, হাজারো শব্দেও তা প্রকাশ করা যাবে না! এইভাবে সেলুলয়েডে শরৎচন্দ্রকে ছাপিয়ে উঠেছিলো দেবদাস – এ যেনো স্রষ্টাকে ছাপিয়ে উঠেছে তাঁর সৃষ্টি। দেবদাস নিয়ে ছবি বানানোর জন্য আজো পরিচালক প্রযোজকদের আগ্রহের কমতি নেই। ২০১৮ সালেও আধুনিক মোড়কে দেবদাস নিয়ে হিন্দি ছবি ‘দাসদেব’ নির্মিত হয়েছে। শোনা যায়, হিন্দি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি গুলজারও নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন দেবদাস নিয়ে একটি ছবি, যাতে দেবদাস চরিত্রের জন্য তাঁর পছন্দ ছিল ধর্মেন্দ্র, পার্বতীর জন্য হেমা মালিনী এবং চন্দ্রমুখী চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুর।


উত্তম-সুচিত্রার ‘দেবদাস’


কোনো কোনো সমালোচকের মতে, প্রমথেশ বরুয়ার ‘দেবদাসই’ শরৎসাহিত্যের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রূপায়ন : অভিনয়, সংগীত আয়োজন, পরিবেশ রচনা ও কাহিনির কাছে দায়বদ্ধতায় পিসি বরুয়ার ‘দেবদাসই’ সেরা। এমনকি শরৎচন্দ্র নিজেও ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু নানা আলোচনা-সমালোচনা ও দর্শক অভিমত ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯৫৫ সালে বিমল রায়ের পরিচালনায় নির্মিত এবং সুচিত্রা-দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তী মালা অভিনীত ‘দেবদাসই’ উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সেরা ট্র্যাজিড-ক্ল্যাসিক। স্মরণ করা যেতে পারে, পিসি বরুয়া যখন ‘দেবদাস’ চিত্রায়ন করেন তখন বিমল রায় ওই ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন। গুরুর প্রতি তাঁর ভক্তি অটুট ছিলো বলেই ১৯৫৫ সালে হিন্দি ভাষায় নিজের নির্মিত ‘দেবদাস ’ ছবিটি তিনি তাঁকেই উৎসর্গ করেছিলেন। ‘দেবদাস’ সেই বছর ভারতের তৃতীয় সেরা ছবি হিসাবে পুরষ্কৃত হয়। একই আসরে দেবদাস চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন দিলীপ কুমার। চুনিলাল চরিত্রে অভিনয় করে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পান মতিলাল। চন্দ্রমুখী চরিত্রে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য পুরষ্কৃত হন বৈজয়ন্তীমালা। একই সময়ে, চতুর্থ ফিল্ম ফেয়ার আসরেও চন্দ্রমুখী চরিত্রে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসাবে বৈজয়ন্তী মালার নাম ঘোষিত হয় । যদিও ওই পুরষ্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁর বিশ্বাস ছিলো তাঁর অভিনীত চরিত্রটি পারু চরিত্রের সমান্তরাল। সেবার ফিল্ম ফেয়ারের একই আসরে দেবদাসের বাল্য-প্রেমিকা পারু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুচিত্রা সেন সেরার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্বে বোম্বের অপর অভিনেত্রী নূতনের কাছে তিনি হেরে যান। বিমল রায়ের দেবদাস কার্লো ভেরী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতার জন্য ভারতের একমাত্র ছবি হিসাবে অংশ নেয়। ২০০৫ সালে ‘ইন্ডিয়ান টাইমস’ ছবিটিকে ভারতের অবশ্য দর্শনীয় ২৫টি ছবির তালিকায় স্থান দেয়।


সুচিত্রা সেন-বৈজয়ন্তী মালা-দিলীপ কুমার ও বিমল রায়


পরিচালক বিমল রায় ভারতীয় সিনেমায় নিও-রিয়েলিজমের প্রবক্তা। আমাদের জন্য গৌরবের বিষয় হলো, তিনি পূর্ববঙ্গের সন্তান। ঢাকার সূত্রাপুরে এক বৈদ্য পরিবারে জন্মেছিলেন বিমল রায়। পরে কোলকাতায় গিয়ে নিউ থিয়েটারস-এ ক্যামেরা সহকারী হিসেবে কাজে যোগ দেয়ার সুবাদে তাঁর চলচ্চিত্র অভিযাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৫ সালের হিট ছবি ‘দেবদাসে’ তিনি এর পরিচালক পিসি বরুয়াকে পাবলিসিটি ফটোগ্রাফার হিসেবে সহযোগিতা করেন। রায় ১৯৪০-৫০ এর দশকে কোলকাতার প্যারালাল সিনেমা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। পঞ্চাশের শুরুতে বাংলা ছবি যখন পড়তির দিকে তখন তিনি তাঁর দলবল নিয়ে বোম্বে পাড়ি জমান। তাঁর দলের মূল সদস্যরাও ছিলেন বাঙালি। বিমল রায়ের ইউনিটে ক্যামেরায় কমল বোস, চিত্রনাট্যে নবেন্দু ঘোষ ও সংগীতে ছিলেন কিংবদন্তী সলিল চৌধুরী। বোম্বে গিয়ে ইতালীয় পরিচালক ডি সিকার নিও-রিয়েলিজম ঘরানার বিখ্যাত ছবি বাইসাইকেল থিফ-এ অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘দো বিঘা জমিন’ তৈরি করেন । ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়। একে একে তাঁর পরিচালিত ছবি – পরিণীতা, বিরাজ বৌ, দেবদাস, মধুমতি, সুজাতা, পরখ ও বন্দিনী – একই সঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায় ও বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করে। উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক নয় যে, হিন্দিতে নির্মিত তাঁর ছবির কাহিনিও তিনি যোগাড় করেছেন বাংলা সাহিত্যের রত্নভাণ্ডার থেকে। লেখক তালিকায় শরৎচন্দ্র তো ছিলেনই পয়লা নম্বরে, আরো ছিলেন সুবোধ ঘোষ, জরাসন্ধ প্রমুখ। তাঁর আলোচিত ও সমাদৃত ছবি মধুমতি’র কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন স্বনামধন্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মধুমতি ১৯৫৮ সালে ৯টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পায় যা ছিলো ভারতীয় চলচ্চিত্রে ৩৭ বছরের মধ্যে রেকর্ড অর্জন। বিমল রায় ১১ বার ফিল্মফেয়ার ও ২ বার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৫৯ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের তিনি অন্যতম জুরি ছিলেন। ১৯৬৬ সালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্যান্সারে তাঁর জীবনাবসান হয়। বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন তাঁর কন্যা রিংকি রায় ভট্টাচার্যের লেখা জীবনী – Bimol Roy: The Man Who Spoke in Pictures প্রকাশ করে ২০০৯ সালে। একজন বাঙালি পরিচালক হিসেবে বাংলার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি সেলুলয়েড ক্ল্যাসিকে রূপায়নের মেধা, প্রতিভা, প্রস্তুতি ও দক্ষতা তাঁর ছিলো।
দেবদাস চরিত্র রূপায়নের জন্য দিলীপ কুমারই ছিল বিমল রায়ের প্রথম ও একমাত্র পছন্দ। হিন্দি চলচ্চিত্রের পর্দায় দিলীপ কুমার ‘ট্র্যাজেডি কিং’ হিসেবে ১৯৪৮ সাল থেকেই দর্শকনন্দিত ছিলেন। পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণকারী ইউসুফ খান, পরবর্তী কালে পর্দায় আবির্ভূত দিলীপ কুমারকে বলা হয় ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের একজন। বাঙালি এক জমিদার তনয় ও বিরহব্যাথায় জীবনত্যাগী এক নিঃস্ব যুবকের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন এই বহুমুখী প্রতিভাধর অভিনেতা। দেবদাস উপন্যাসটি বার বার পড়েছিলেন তিনি, এবং এমনকি শুধু দেবদাস নয়, সেকালের গ্রামবাংলার সমাজ সংস্কৃতি ও জাতপাতের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণালাভের জন্য তিনি শরৎচন্দ্রের আরো কয়েকটি উপন্যাস পাঠ করেন। যাঁরা দিলীপ কুমার সম্পর্কে আরো খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানবেন, উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর কী গভীর জ্ঞান ছিলো। দেবদাস চরিত্রটি নিয়ে শুরুতে তাঁর দ্বিধা ছিলো, তার কারণও বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। এ প্রসঙ্গে দিলীপ কুমার তাঁর আত্মজীবনী – The Substance and The Shadow-তে লিখেছিলেন : It mislead the more vulnerable youth to believe that alcoholism offered the best escape from the pain of losing in love. সমালোচকদের বিচারে দিলীপ কুমার অভিনীত দেবদাসই দেবদাস চরিত্রে এযাবতকালের সেরা রূপায়ন।
পারু চরিত্রের জন্য বিমল রায় মীনা কুমারীকে প্রথম বেছে নেন। কিন্তু মীনা কুমারীর স্বামী পরিচালক কামাল আমরোহি নানাবিধ শর্ত জুড়ে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাংলার ‘মহানায়িকা’ সুচিত্রা সেনকেই তিনি নির্বাচন করেন। এই নির্বাচন যে কতটুকু সঠিক হয়েছিলো তা ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়। বাঙালি জীবনের আবহে সুচিত্রা সেনের পর্দায় উপস্থিতি যে অদ্বিতীয়, একথা আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে একই চরিত্রে সঞ্জয় লীলা বানসালি যখন শাহরুখ খানের বিপরীতে ঐশ্বরিয়া রাইকে বেছে নিয়েছিলো, তখন সেই চলচ্চিত্রের আলোচনায় আরব নিউজ লিখেছিলো : No doubt Aiswarya Rai has put all of herself into Paro but still has not come close to Suchitra Sen’s Paro (Zeba Haider, Arab News).
চন্দ্রমুখী চরিত্রের জন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিল নার্গিস। কিন্তু নার্গিস চেয়েছিলেন পারুর ভূমিকা। ততদিনে সুচিত্রা সেনের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বীনা রায় ও সুরাইয়াইকেও একই চরিত্রের প্রস্তাব দেয়ায় তাঁরাও একই কারণে চরিত্রটি প্রত্যাখ্যান করলে, অনেকটা অনন্যোপায় হয়ে চন্দ্রমুখী চরিত্রের জন্য বৈজয়ন্তীমালাকে প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। দর্শক জানেন এই ভারত-সেরা ভরতনাট্যম শিল্পী ও জননন্দিত নায়িকা কী অসাধারণ দক্ষতায় চন্দ্রমুখী চরিত্রে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। স্বীকৃতিও এসেছিলো অনতিবিলম্বে।
নবেন্দু ঘোষের চিত্রনাট্য নিয়ে বিমল রায়ের কোনো দ্বিধা ছিলো না। ‘দেবদাস’ ছবিতে কমল বোসের ফটোগ্রাফি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়। এই ছবিতে কোন কৃত্রিম আলোর ব্যবহার ছিলো না, ছবিতে তিনি ন্যাচারাল লাইট অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে ব্যবহার করেছিলেন। বিমল রায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো – এই ছবির সংগীত পরিচালনার ভার কাকে দেবেন সেই বিষয়ে। আগের ‘দেবদাসে’ কিংবদন্তি গায়ক সায়গল ও তিমির বরণের যুথবদ্ধতা সংগীতকে একেবারে চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলো। তার সমমানের সংগীতায়োজন কোথায় পাওয়া যাবে? এক্ষেত্রেও এক বাঙালি প্রতিভা এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি শচীন দেব বর্মন। মান্না দে, গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গায়ক তালাত মাহমুদকে দিয়ে তিনি ছবির ভাঁজে ভাঁজে যে সুরের যাদু রচনা করেছিলেন তা সংগীতায়োজনের আরেকটা মাইলফলক হয়ে আছে।


পিতৃতন্ত্র ও ‘দেবদাস’


কেন এতদিন পরও দেবদাসের প্রতি চলচ্চিত্রের প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পীদের আগ্রহ কমেনি? কেন অন্তত প্রতিটি পর্যায়ক্রমিক দশকে এর রিমেক হয়েছে? সমালোচকরা প্রশ্ন রেখেছেন – এটা কি একারণে যে, এখনো সমাজ বয়ে বেড়াচ্ছে সেই পিতৃতান্ত্রিকতা, পুরুষতন্ত্র ও নারীদের উপর নিগ্রহের ধারাবাহিকতা? অভিভাবকরা কি এখনো বাঁচিয়ে রাখেননি ছেলেমেয়েদের বিবাহের বেলায় সেই জাতপাত, আভিজাত্য, কৌলিন্য, ধর্ম, ভাষা, শ্রেণি, অর্থ ও বিত্তের চিরকালীন বৈষম্য? এখনও কি মেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তাদের বাবা-মা স্বামী সংসারের শত নিগ্রহেও তাদের মানিয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন না? ‘দেবদাসে’ ঠিক এমনটাই তো আমরা দেখি। চলচ্চিত্রের অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাদের মতে দেবদাসে ত্রিভুজ প্রেম, তার অসাফল্যে একনিষ্ঠ প্রেমিক-প্রেমিকাদের কোনো হাত না থাকা, কিন্তু প্রেমের পাদপীঠে তাদের বলিদান প্রেম ও ট্র্যাজেডিকে যে গৌরব দিয়েছে তার আবেদন বয়ে চলেছে যুগ থেকে যুগান্তরে। ১৯৩৫ সালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় নির্মিত পিসি বরুয়ার দেবদাসের বক্সঅফিস সাফল্য ‘Tragedy is taboo’ বাণিজ্যের এই চাবিকাঠি এমনভাবে প্রোথিত করে যার লিগ্যাসি উপমহাদেশের চলচ্চিত্র এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। অতপর দুই নারী ও এক পুরুষ ফর্মুলা চলচ্চিত্রের গল্পে প্রবেশ করে এবং পর্দায় সবচেয়ে বেশি যে বৈশিষ্ট আমরা লক্ষ্য করি, তা হলো প্রেমে ও জীবনে প্রত্যাখ্যাত/আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অবধারিতভাবে নায়কের মদ্যপান, এমনকি তার আত্মাহুতি। আলোচকরা এই বৈশিষ্ট্যকে ‘দেবদাস সিনড্রোম’ আখ্যা দিয়েছেন। এই সিনড্রোম কাকতালভাবে দেবদাসের সফল পরিচালক ও নায়ক যথাক্রমে পিসি বরুয়া ও কেএল সায়গলের জীবনে সত্য হয়ে উঠেছিল। ব্যক্তিগত হতাশায় অতিরিক্ত মদ্যপান করে উভয়ই অকালে প্রাণ বিসর্জন দেন। একই সিনড্রোম গুরু দত্তের (পরিচালক, শিল্পী গীতা দত্তের স্বামী) জীবনেও তার আত্মহননের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিলো। স্বয়ং দেবদাস দিলীপ কুমারকে পর্যন্ত ট্র্যাজেডি কিং-এর তকমা গা থেকে মুছে ফেলতে বেছে বেছে হালকা মেজাজের কমেডি ছবির গল্প নিয়ে অভিনয় করে ইমেজ পুনর্গঠন করতে হয়েছিলো।
গল্পে ত্রিভুজ ফর্মুলা ও ট্র্যাজেডির উপাদান ঠিক রেখে পরবর্তী প্রায় প্রতিটি সংস্করণে ‘দেবদাসের’ গল্পে কিছু না কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। একমাত্র পিসি বরুয়া নির্মিত ‘দেবদাসে’র প্রথম সংস্করণটিই মূল উপন্যাসকে প্রায় হুবহু অনুসরণ করেছে। এর কাছাকাছি (শতকরা আশি ভাগ) পর্যায়ে মূলানুগ বিমল রায়ের ‘দেবদাস’। কিন্ত এর পরের প্রতিটি সংস্করণে ‘দেবদাস’ পরিবর্তিত হয়েছে , এমনকি উপন্যাসে নেই এমন ঘটনা ও চরিত্রেরও সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। উপন্যাসে যে দেবদাস গ্রামবাংলার এক প্রত্যন্ত জমিদারগৃহ থেকে পড়াশোনার জন্য উনিশ শতকের শেষার্ধে কোলকাতা যান, দেবদাসের এক সাম্প্রতিক রিমেকে পরিচালক-প্রযোজক-চিত্রনাট্যকার মিলে তাঁকে লন্ডনে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। একটি সংস্করণের শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছে পার্বতী তার স্বামী জমিদারের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে জমিদার বাড়ির সেই বিখ্যাত ফটক পেরিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী তার প্রেমিক দেবদাসের শিয়রে উপস্থিত হয়েছে। দেবদাসের ভোজপুরি সংস্করণে এমনকি পারু একা উপস্থিত হয়নি, দেখানো হয়েছে একটু পর তার সাথে এসে মিলিত হয়েছে রোরুদ্যমান চন্দ্রমুখীও। বাজার অর্থনীতির ভূমিকা এতই শক্তিশালী যে, অর্থলগ্নিকারী প্রযোজক ভেবেছেন রিমেকে দর্শক আগের সংস্করণটির হুবহু আরেকটি কপি নিশ্চয়ই দেখতে চাইবে না। এই কারণে পরিবর্তন আনা হয়েছে গল্পে, নতুন চরিত্র সংযোজিত হয়েছে, পাল্টানো হয়েছে পরিবেশ, গল্প বলার ঢং ও আঙ্গিক। সাম্প্রতিক কালে প্রচার প্রচারণায় নানাভাবে উপস্থাপিত ও বক্স-অফিস মাত করা সঞ্জয়লীলা বানসালি পরিচালিত ও ঐশ্বরিয়া-মাধুরী-শাহরুখ খান অভিনীত দেবদাস নিয়ে বিশ্ব জুড়ে শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যে এর কাহিনীর বিচ্যুতি ও ট্র্যাজেডির ভাবগাম্ভীর্য ক্ষুন্ন করার ও এতে যথেচ্ছ বিনোদন ও মনোরঞ্জনের মালমশলা মেশানোর অভিযোগ তুলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এইভাবে ক্রমাগত পরির্বতন ও গল্প বিচ্যুতিতে কপিরাইট বিষয়ক প্রশ্ন কীভাবে তাঁরা সামাল দিয়েছেন তাও এক অনুসন্ধানের বিষয়! উপমহাদেশে সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে ধারণ করার সেরা উদাহরণ সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। পুস্তকে মূদ্রিত বিভূতিভূষণের নিশ্চিন্দপুর গ্রাম ও অপু-দুর্গাকে তিনি চলচ্চিত্রের ভাষায় জীবন্ত করেছেন। তাঁর হাতে নির্মিত হয়েছে ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘তিন কন্যা’, ‘চারুলতা’, ‘অরণ্যের দিন রাত্রি ’-র মতো সাহিত্যভিত্তিক কালজয়ী ছবি । একই ধারাবাহিকতায় ঋত্বিকের নির্মাণ অযানিত্রক, মেঘে ঢাকা তারা ও তিতাস একটি নদীর নাম। বাণিজ্যবুদ্ধি সেখানে তাঁদের হাত পা বেঁধে দেয়নি। দেবদাসের এই গল্প বিকৃতি কি মৌলিক সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়নে হুমকি নয় ?
বাজার অর্থনীতিই কি তবে শেষ কথা? লগ্নি-মুনাফা-বাণিজ্য! এখন আমরা যখন ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করেছি, যখন ঘরের বাজার ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দুনিয়ায়, বদলেছে সামাজিক সম্পর্কের পুরনো ছাঁচ, সম্পর্কের সমীকরণ হয়ে পড়েছে জটিল থেকে জটিলতর, তখন এক পরিত্যক্ত সময় ও সমাজে আবর্তিত নারী-পুরুষের স্লো মোশনের এই শাদা কালো গল্প চলচ্চিত্রের দর্শককে কেন আর টেনে রাখবে! চলচ্চিত্র নিজেও কি তাল রাখতে গিয়ে নিজের ভাষা বদলে নেয়নি? আমরা কি তবে বদলে নেবো ক্ল্যাসিকসের পুরনো সংজ্ঞা?
থাক না হয় এইসব প্রশ্ন ও তর্ক! বরং কোন ছুটির দিনের বিকেলে উঠে গিয়ে ঘরের জানালার পর্দাগুলি টেনে দিন, মোবাইলের সুইচ অফ করুন তারপর ল্যাপটপের ১২ ইঞ্চি স্ক্রীনে চালিয়ে দিন সেলুলয়েডে সুচিত্রা-দিলীপ কুমারের মন দেয়া নেয়া আর পেয়ে হারানোর গল্প। আপনি হয়তো পরে (ফ্ল্যাশব্যাকে) জানতে পারবেন – দেখতে দেখতে টেরও পাননি কখন আপনি উনিশ শতকী পূর্ববঙ্গের গ্রাম ও আধা-শহুরে কোলকাতার পথে পা চালিয়ে দিয়েছেন। আপনি বুঝতেও পারেননি আপনার সযত্নরচিত নিরাপদ আটপৌরে জীবনে মন ও মস্তিষ্ক জুড়ে এঁটে বসে থাকা যুক্তির সতর্ক শেকল কখন যে খসে পড়ছে! তার পরিবর্তে সেখানে জেগে উঠছে যুক্তির নতুন শৃংখলা, আরেক নতুন ভুবন। আর কখন যে আপনি নিজেই হয়ে উঠছেন সেই পৃথিবীর প্রতিনিধি – হয় পারু, নয়তো তার দেবদাস। এ এক আশ্চর্য জাদুময়তা বটে! কে সেই জাদুকর, যে ফোটাতে পারে অমন অদৃশ্য কুসুম!

সূত্র : দি হিন্দু , ইন্ডিয়ান টাইমস,আরব নিউজ , দৈনিক প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া ও দর্শক অভিমত ।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field