গদ্য

নিছক বৈঠকী | সৈয়দ কামরুল হাসান | আত্মগত গদ্য

“সেখানে দুমাস কাটাল ইউজিন। লিজার সংসর্গে, আনন্দে আর স্বস্তিতে এই দুটি মাস যেন মধুযামিনী… লঘুপক্ষে দিনগুলো কোথা দিয়ে কেমন করে উড়ে যায়, ইউজিন ঠাহর পায় না। অনির্বেদ, গ্লানিশূন্য মনে সে চারদিকে তাকায়, দেখে কত নতুন জিনিস, নতুন মানুষ, নতুন দৃশ্য!”
“কিন্তু সব ঝেড়েঝুড়ে সাফ করে দেয়া সত্বেও আবার একটু একটু করে জঞ্জাল জমে ওঠে। ইউজিন নিজেই ভালোভাবে লক্ষ করেনি, কেমন করে আবার সেই আবর্জনা ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছে। ব্যাপারটা অলক্ষ্যে ঘটতে থাকে। ইউজিনের অজ্ঞাতসারে কি যেন একটা প্রভাব আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায় মনের উপর”
[উপন্যাস : “শয়তান” – লিও তলস্তয়ের The Devil (বঙ্গানুবাদ : বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশকাল ১৯৫৬]

অনুবাদকের ভুমিকা থেকে জানা যায় – তলস্তয়ের অপ্রকাশিত রচনার মধ্যে এই পাণ্ডুলিপিটি সম্পূর্ণ ছিল। সম্ভবত প্রায় একই বিষয়ের উপর, আরও বৃহত্তর পরিসরে তিনি তাঁর কালজয়ী উপন্যাস Ressurection লিখেছিলেন বলে এই বইটি তাঁর তত মনোযোগ পায়নি। কিন্তু এই ছোট্ট বইটিও তলস্তয়ের অতলস্পর্শী প্রতিভার দীপ্তিতে ভাস্বর। বইটির দুইটি উপসংহার লিখে তিনি পাঠকের পছন্দের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলেন যে কোন একটি বেছে নেওয়ার জন্য।

বিশ্বসাহিত্যের এই মহাপ্রতিভার মৃত্যুও যেন গল্পের চেয়ে কম কিছু নয়। ১৯১০ সালের ২৮ অক্টোবর খুব ভোর বেলায় ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় নিজ জমিদারি ছেড়ে দু’একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর নিজস্ব ডাক্তার মাকভিস্কি জানাচ্ছেন, “তারপর সপ্তাহখানেক ট্রেনে ঘুরে এবং পথে ঠান্ডা লাগিয়ে তলস্তয় যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন এক তৃতীয় শ্রেণির কামরা থেকে তাঁকে নামিয়ে নেওয়া হয় আস্তাপভা স্টেশনে। স্টেশনের লাগোয়া মাস্টার ওজোলিনের বাসায় ৭ নভেম্বর ১৯১০ সালে সকাল ৬টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর চার ঘণ্টা আগে অল্পক্ষণের জন্য চেতনা ফিরে এলে তিনি স্পষ্ট গলায় বলে ওঠেন, “এই তো শেষ, তা আসুক। তবে একটা কথা তোমরা মনে রেখো, এ পৃথিবীতে লিও তলস্তয় ছাড়াও লক্ষ লক্ষ লোক আছে… আর তোমরা কেবল লিওর কথাই ভাবছ।” সেই ছিল তলস্তয়ের শেষ উক্তি। শেষ ইচ্ছা অনুসারে তিনি চেয়েছিলেন তাঁর প্রিয় একটি স্থানে অনাড়ম্বর হবে তাঁর মাটির সমাধি, যেখানে উপর থেকে গাছের ফুল ঝরে পড়বে, আর থাকবে না কোন স্মৃতিফলক! ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় তাঁর জমিদারি এস্টেটে সেভাবেই তাকে সমাহিত করা হয়।

তলস্তয়ের জীবনের শেষ দিনগুলি নিয়ে ২০০৯ সালে নির্মিত হয়েছে The Last Station নামের একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র।

ইয়াস্নায়া পলিয়ানা এখন তলস্তয় জাদুঘর। বিগত ১০০ বছরে তলস্তয়ের উত্তর প্রজন্মের স্বজন পরিজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে ইউরোপ ও আমেরিকার নানা স্থানে। অনেকেই রাশিয়া ছেড়ে অভিবাসী হয়েছেন ভিনদেশে। সংখ্যায় তাঁরা ৩০০-র কম নয়। কয়েকজন ‘তলস্তয়’ বংশধরদের উদ্যোগে ২০০০ সাল থেকে দুই বছরে একবার ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় এসে সপ্তাহখানেকের জন্য তারা মিলিত হন। শুধু এক পারিবারিক পুনর্মিলনী। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলে সেই উজ্জ্বল আলোকের উছল ধারা।

আমার নিজের করা একটা তালিকা ধরে যে কয়টা বই আমি সংগ্রহ করেছি, তার মূল ফোকাস তরুণ লেখকদের গদ্য। আমার সুবিধা হয়েছে এইটুকু যে, এদের বেশীরভাগই আমার চেনা জানা পরিচিত নন। কিন্তু এদের অনেকে ইতোমধ্যে খ্যাতি, জনপ্রিয়তা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়ে সাহিত্যের আসর আলোকিত করে আছেন। পাঠক, প্রকাশক ও সমালোচকদের এখন আর লেখক বাছাইয়ের দ্বিধা যে অনেকটা কেটে গেছে – এ যেন তারও একটা উপস্থিত প্রমাণ।

আজ আমি যে উপন্যাসটির কথা বলবো সেটি মুহম্মদ নিজামের লেখা একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অগ্নি পুরাণ’। ৩৩৬ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত উপন্যাসটি মুসলিম যোদ্ধা বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ অভিযান ও বিজয়কে কেন্দ্র করে তৎকালীন ভারতবর্ষ নিয়ে আবর্তিত। সেই সময়কার হিন্দু, বৌদ্ধ রাজা, মহারাজা ও মুসলিম সেনানীদের জয়-পরাজয় এবং তার সমান্তরালে সাধারণ জনজীবনের চালচিত্র গদ্যে ফুটিয়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা বইটি। একেবারে তরুণ, প্রায় আনকোরা একজন লেখকের পক্ষে এধরনের বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট বেছে নিয়ে কলম ধরার সাহসকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নাই।

আমাদের তথা ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে খাঁটি বাংলা উপন্যাস খুব বেশি একটা নাই। আমার যেটুকু রসাস্বাদনের সুযোগ হয়েছে, তার মধ্যে আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা শরদিন্দুর ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলির পাঠ থেকে। সেই কত আগে পড়া ‘তুঙ্গ ভদ্রার তীরে’ আজো আমার স্মৃতির কোটরে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে। সমসাময়িক কালে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত ‘দারা শিকো’ আমাকে খুব একটা টানে নি। এছাড়া অমিয়ভূষণ মজুমদার প্রমুখ যে ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস লিখেছেন তা একান্তই আঞ্চলিক, এমনকি স্থানীয়ও বলা যায়। আমাদের এখানে সত্যেন সেন ইতিহাসকে উপজীব্য করে যেসব উপন্যাস লিখেছেন সেগুলো শিল্পমানে কতটা উত্তীর্ণ হয়েছে তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে লেখা একটি মাত্র বই সাহিত্য মান অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে বলে আমরা সবাই স্বীকার করে নিয়েছি। সেটি শওকত আলীর “প্রদোষে প্রাকৃতজন”। মুহম্মদ নিজামের লেখা বইটিতে শওকত আলীর উপন্যাসের সমাজ ও সময়কালের প্রেক্ষাপটও এসেছে। লেখক চেষ্টা করেছেন চরিত্রগুলোকে নিজের মতো করে আঁকতে। প্রয়োজনে লেখক সমকালীন ইতিহাসের বিশ্বস্ত রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। তাঁর ভাষায় একটা গতিময়তা আছে, এমনকি খানিকটা নিজস্বতাও। কাহিনি বিন্যাসে মুনশিয়ানা আছে বলে পাঠকের পথ হারাবার ভয় জাগেনা। জনপ্রিয় তরুণ লেখকদের লেখা ও প্রবীণ বিজ্ঞ লেখকদের অতি সতর্ক, সিরিয়াস লেখার ভিড়ে বইটি একধরনের ব্যতিক্রমও বৈকি!

তাই বলে বইটিতে কি কোন ঘাটতি কিংবা খামতি নেই? বইটিতে কি ইতিহাসের কোন গূঢ় সত্য প্রতিফলিত হয়েছে? আছে কি সমাজের কোন পরিবর্তনের কথা? বইটি কী তরল, অতি সরলীকৃত, অগভীর উপাখ্যান; যৌনতার বাড়াবাড়ি, অযাচিত কোনও পক্ষপাতে দুষ্ট? আমি এসব খুঁজে বের করার কেউ নই। তবে বিজ্ঞ ঐতিহাসিক ও আলোচকরা নিশ্চয়ই নোট নিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে আমি বইটির একজন কৌতূহলী পাঠক মাত্র! এ আমার নিছক পাঠ প্রতিক্রিয়া!

এক দুপুরবেলায় ওর ফোন পেলাম : “আমার অফিসে চলে আয়, তোর জন্য একটা চমক আছে!” পরদিন ওর অফিসে গেলাম। স্বাক্ষর ও লেখাসমেত বইটি আগেই রেডি করা ছিলো, বসতেই বাড়িয়ে দিলো। বন্ধুত্বের অধিকারে একবার অনুরোধও করলো না, “পড়িস দোস্ত”; আমি যেমন কাউকে আমার বই দিতে গিয়ে বলতে ছাড়ি না : পড়বেন কিন্তু! হ্যাঁ, চমকই বটে ! সুন্দর, ছিমছাম বইটি, নজরকাড়া প্রচ্ছদ। পরম আগ্রহ নিয়ে বইটিকে নেড়েচেড়ে দেখি। কবির পরিচিতি জানাতে গিয়ে তাঁর সমকালীন অপর কবি সম্প্রতি প্রয়াত আহমদ আজিজ বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখেছেন : “গত শতকের মধ্য সত্তর থেকে কবিতা লিখছে রেজা সেলিম। স্নাতকে অধ্যয়নকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে “সিম্ফনী” নামক গোষ্ঠীভিত্তিক কবিতা আন্দোলনেও আমাদের সাথে অন্যতম উদ্যোগী ছিল সে। কবিবন্ধু ও সতীর্থ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, মুজাহিদ শরীফ, আলী রিয়াজ প্রমুখের সঙ্গে কবিতার আধুনিকতা, কবিতার প্রকরণ, কবিতার স্বাতন্ত্র্য. বিবিধ প্রসঙ্গ নিয়ে মেতে থেকেছে তুমুল আড্ডায়। পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতা।” অতঃপর রেজা সেলিমের কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কবিস্বভাব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আজিজ আরও বলছেন : “শান্ত নদীর অন্তঃগভীর তীব্র স্রোতের মতোই তার ভিতরে কবিতাকেন্দ্রিক আবেগ ছিলো নিয়ত বহমান। সে লিখে গেছে কবিতা নিজের মতো করে একান্তে নীরবে। আর তারই সাক্ষ্য বহন করছে এই কবিতার বইটি – “জন্মেছি এক শালিক পাখির ঘরে”। এটিই তার প্রথম কবিতার বই। কবিকে ধন্যবাদ, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর আবার ফিরে এসেছে কবিতায়। তার কবিতায় রয়েছে গভীর বেদনাবোধ আর আত্মাভিমান, রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মধ্যে আত্মানুসন্ধান আর প্রকৃতির প্রতি গভীর সংরাগ।” অবশ্যি বইয়ের শুরুতে একপাতা ‘পটভূমি’তে কবি বই প্রকাশের একটা নিজস্ব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “মহাকালের বিচারে আমি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কবিতা লিখিনি বটে তবে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীব তাঁর সম্পাদিত দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতায় আমার লেখা ছাপাতেন অন্তত এই বিচারে হলেও নিজের কবিতাগুলো কোনো একদিন সংকলিত হোক মনে মনে চাইতাম।”

চিত্রা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই ক্ষীণ কলেবর মনোরম কাব্যগ্রন্থটি তাবড় লেখক-প্রকাশক-সমালোচক ও পাঠকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বইটি থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি দিই।

১. রাতভর অন্য এক সকালের আশায়/ সে আকাশ জুড়ে কে তাকে দিল পরায়ে এমন ঘুঙুর/ মেঘের ডাকে নাচে সে ময়ূর, আর নদীতীর থেকে জানিনা/ কে তাকে নিয়ে গেলো পথ থেকে পথে,পথে আর পথে। (কে তাকে ফিরিয়ে দিল পথের ঠিকানায়)

২. কেমন আছি জেনে নিও দক্ষিণের জানালার কাছে/ আলো আর বাতাসের খেলায় মুড়িয়ে আছে যে বিকেল/ দুপুরের পরে,আমাকে দেয় না দেখতে তোমায়/ চোখ তুলে দেখো আমি খুব ভালো আছি।/ ভালো আছি এই মাতাল সবুজের দেশে, আর এই/ অর্ঘ্য নদীটিকে দেখো, যাচ্ছে বয়ে নিরন্তর তোমারই স্মৃতির কাঁধে/ কোথায় কোন ঘাটে কে জানে, তোমাকে বলছে না কেউ? (কেমন আছি)

৩. এখানে ছিলাম অনেক দিন/ যেভাবে সবাই থাকে, আমার থাকাটা ছিলো একটু অন্য রকম/ কখনোই শিশিরে যায়নি ভিজে আমার পায়ের পাতা।/ ত্রিপুরা থেকে আসা/ আমার পূর্বপুরুষের মতো আমার পা-জোড়া নাকি/ একটু বড়ই। আমার নানি বলতেন পুবের পা তো,/ একটু লম্বাই হবে।/ কী হলো তাহলে? এখন যেতে হবে। শিশিরে আর/ পায়ের পাতা ভেজানো হলো না আমার !/ বরইগাছের পাতাগুলো? আব্বার স্মৃতি?/ সাথে তাহলে নেব কি?/ পুবের লম্বা পা নিয়ে আর পথে চলা হলো না! (এখন যেতে হবে)

৪. কতদূর যাবে মাঝি? আমাকে তোমার সঙ্গে নাও/ আমরাই এক হবো যাদের ওই কূলে যাবার তাড়া নেই/ দিনমান এক সাথে, নদীর এক ধারে, আমাদের পথ চলা হবে/ অনন্তকালের শ্রমে। নেবে? …চলো ভাই, একসাথে কিছুদূর যাই।/ মর্মরে শুকনো পাতার মত জলের ধ্বনি/ বৈঠার নিঃশব্দ নির্দেশ, নদীজলে কচুরীদের ভাসমান ঢেউ, মাঝি/ তোমার কি কেউ নেই? ওই যে লালে নেমে গেছে যে আকাশ/ চলো সেইখানে যাই,সন্ধ্যাতারা এসে দেখাবে পথের রেখা/ চলো মাঝি দুইজনে একসাথে যাই। (সন্ধ্যাতারার মাঝি)

কে জানে দীর্ঘ উদ্ধৃতি পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটালো কিনা! কিন্তু কী গভীর গীতল আবেগমথিত এক একটি কবিতা! উপরন্তু গোটা কবিতার গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে একটা কোমল শ্রী আর উদাস মরমী সুর। শান্ত, সংহত, পরিশীলিত এমন কবিতা দীর্ঘদিন পড়া হয় নি। আল মাহমুদ, আবুল হাসান কিংবা আবিদ আজাদের পর! হ্যাঁ, হালফিল কবিতাও আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি। হালের বেশিরভাগ কবিতার অন্তত দশরকম মানে দাঁড়ায়! অর্থ্যাৎ কবির নিজের আছে একরকম মানে আর বাদবাকি নয় জনের কাছে একই কবিতার নয় রকম মানে। কিছু কবিতা স্রেফ মানেহীন, শুধুই শব্দের বিন্যাস, যেন ফরমায়েশ পেয়ে রবোট লিখেছে! আবার কিছু আপাত-নিরীহ কবিতা আছে সেগুলো এমন এক গোলোকধাঁধা বটে! কবিও যেন ভাবেন : পাঠক, একবারটি তুমি ঢোকোই না ঐ পড়োবাড়িতে দ্যাখো কী রকম দফা রফা করি তোমার! কবিতা পাঠ-অভিজ্ঞতার এই প্রেক্ষাপটে, রেজা সেলিমের প্রথম কবিতার বইটি একটু ব্যতিক্রম বৈকি! হতে পারে, ব্যতিক্রম বোঝাতেই আমি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছি একটু বেশি! শুধু কি তাই? আমি নিজে গদ্যচর্চার লোক হলেও “সিম্ফনী”-র কাব্যসারথীদের সাথে, বিশেষ করে উপরোক্ত কবিযুগলের সঙ্গে আমারও ছিল একেবারে হরিহর আত্মার সম্পর্ক। সেই সব দিনের সাথে আমরা যেন এক রক্তের বন্ধনে বাঁধা! তাই বুঝি বিস্মরণের দায়মোচন ভাগাভাগি করে নিতে একটা গভীর তাগিদ বুকের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ ছলকে ওঠে!

হায়রে কী সব দিন গেছে! সেই সব দিনের ভাঁপ আজো এসে চোখে মুখে লাগছে। নিছক তাপ, তেজ আর উত্তেজনা তো নয়, নয় কোন হ্যাংওভার কিংবা খোঁয়ারি! সেই সব দিনের পটভূমিতে আছে মধ্য-সত্তরের রাজনীতি ও সমাজ, তারুণ্যের দীপ্তি ও সংকট; আর অফুরন্ত স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। আমাদের দিনগুলির একটা ডকুমেন্টেশন করা গেলে, বিস্মরণের গ্রাস থেকে ইতিহাসের একটা কালপর্বকে বুঝি বাঁচানো যেত!

সৈয়দ কামরুল হাসান

গল্পকার ও শিক্ষাকর্মী।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field