কবিতা বিশেষ সংখ্যা

দ্বিত্ব শুভ্রা | ৫টি কবিতা | উৎসব সংখ্যা ২০২৪

যখনই ভোর হয়, সে ভাবে আজ হবে অন্যরকম দিন। আলোটা দেখিয়ে যাবে সুরকি ভাঙা পথের উঁচুনিচু বাঁক। খাদের কিনারাতে খপ করে টেনে ধরবে জামা। ঘরের আকাশের বড় বড় গর্তগুলো সারিয়ে তুলবে সূর্য। শান্তির একটা নিশ্চিত ব্যবস্থা রাখবে রেইন-ট্রি। সন্ধ্যার পর চাঁদ হাঁটতে হাঁটতে বলবে, আমি আছি! সব চিন্তা রাখো! শুধু জানে না সে, বাতাস আজ তাকে কোথায় উড়িয়ে নেবে।

দেখলাম সারসটাকে / ডুবে আছে বড় ঘাসে /
পালালো কিছুক্ষণ / নাকি আশাকে শিকার /
যে যেভাবে দেখে / মনস্তাত্ত্বিক রেখার ওপর /
ও পারের বিল্ডিংগুলো / হেঁটে আসছে দ্রুত /
নদীটা পালাতে পারবে না /
তার পিঠে / সাজানো থাকবে /
রেস্টুরেন্টের মেন্যু /
নৌকা দেখা যুগলের / ঘটবে সমাপ্তি /
কিছুদিনের চৈতন্য প্রবাহ /
ডেল-এর কম্পিউটারের ভেতর / নতুন প্রেমের আবহ /
তারা আসবে /
যদিও ফোয়ারারা / শুকিয়ে যায় /
আর সকল জৈবিক পদার্থই / যায় হেঁজেমজে /
টন টন স্বপ্নদৃশ্য / খিস্তি করে /
মিউনিসিপ্যলটির গাড়ি / ফেলে দেয় ডাব্বায় /
আশা – নিরাশার কৌণিক দূরত্ব / মিলেছে /
আটষট্টি তলাতে /
জেনে রাখা ভালো / সিঁড়িগুলো নোংরা।

যখনই স্বর্গে গিয়ে দেখবেন
বেহুদা আলাপ করছে সকলেই
সবাই নিজ নিজ আনন্দে মত্ত,
আপনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন একজন
আর কেউই পাত্তা দিচ্ছে না।

আর কার কাছে বলবেন?
সকলের এক মতো মুখ
হৃদয়ও নিশ্চয়ই তাই।

আপনি ঢুঁড়ছেন ব্যতিক্রম!

হো হো করে হেসে উঠলো উপস্থিতরা,
আপনার আগ জন্মের কথা স্মরণ করে।

বসেছিলাম বন্ধ হয়ে থাকা কোন ফোয়ারার পাশে। আমার মতোই
ওটা আটকা পড়েছিল কোন বৃত্তের মাঝে। দুজনেরই স্ফুরিত হবার আশা।

হর্ন বাজছিল জোরেসোরে, যেন প্ল্যান করেই চিৎকার দিলো, যেন আদ্যপান্ত
আমাকে আবারও শুনিয়ে দিতে চায়। তাকালাম সর্বত্র। ল্যান্ড করার মত
জায়গা পেলাম না কোথাও।

একটা কাক নেমে এলো সিমেন্টের মেঝেতে। দলবদ্ধ কাক অনেকদিন
দেখি না। লাগছিল বিচ্ছিন্ন ও একা। যেখানে যা নেই সেই পোকার পেছন
ছোটা। অবদমন আর প্রতিদিন পোকার মতই কেবল মাটি কামড়ে থাকা।

ল্যাম্পপোস্টের আলো বদলে দিলো সব। যানবাহন, মানুষের।
একেকটা ঢেউ আসে, জান্তব ছায়ারা গায়ে দাগ ফেলে দৌড় দেয়।
প্যাচানো, আঁকাবাঁকা। তিনকোনা, চৌকো। যে সব আদল চিনি,
তার সাথে মেলে না সম্পর্ক। একটা খোলা জায়গায় বসে আছি
আমি। শুধু উত্তর দাও, কেন?

ভাঙা পাথরটা কি কারণে ওখানে পড়ে ছিল জানিনা। জানি না
আমিও; কি কারণে আমি, আমার ভেতর পড়ে পড়ে খাচ্ছি মার।
ফোয়ারাটা ফেটে গিয়ে যদি আমায় ভিজিয়ে দিতো,
জলে ডোবা হারানো পয়সার মতন একটু জিরিয়ে নিতাম।

পথের দিকে চাই যে পথ মিলেছে সুদূরে।
সোনালু দাঁড়িয়ে রবে,
কৃষ্ণচুড়ার শাখায় কোকিল কুহু কুহু করে কবে,
‘আসিয়াছো তবে!
তবে এলে!’
প্রান্তরের দিকে চোখ তুলে,
একবার এপারে, একবার ওপারে।

হাঁটুভরা সাদা রেখা, খড়ের তলোয়ারের যত রূঢ় টান,
গোড়ালির ফাটল দেখি নাই, দেখেছি যত মায়ামৃগ ঘ্রাণ –
অচ্ছুতের মত সরিয়া গিয়েছে ওরা – তবু মাছের খালই নিয়ে
কাদা মেখে সারা গায়ে
‘এখনও বসে আছো?
এখনও অপেক্ষা করে আছো তবে?’
সকৌতুকে হেসেছে ভাদ্রের রোদ।
আধেক ডুবে, আধেক মাথাখানি কুঁজো করে নিবিষ্ট সারস।
জলের কাঁপনের মাঝে আমারই মগ্ন মুখ
আমারে ছড়ায়ে দিয়েছে আলেয়ায়, অন্ধকারে।

দ্রুত বদলায় ঘাস ফড়িঙের পথ – কত দ্রুত দেখা তার
প্রজাপতি পাখা, মথ, সাপের খোলশ, গমের পাতার!
‘কবে বদলাবে তুমি?
একই বৃক্ষরে ধরে খোঁজা শান্তি?’
একই সঙ্গ, একই ভালবাসা, শরীরে লেগে থাকা এইসব ঘাস,
পথ কাড়েনি আমারে, যতখানি পথ করিয়া নিয়েছে আমাতে আবাস।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field