তীরন্দাজ নববর্ষ সংখ্যা
[কিছু কবিতার নাম আছে, কিছু কবিতার নেই। ইচ্ছের কথা আমাদের জানিয়েছেন ফরহাদ নাইয়া। আমরা সেভাবেই প্রকাশ করছি।]
সারাদিন শুয়ে ছিলাম তোমার না থাকার উপরে। তুমি যে নাই, বলে নাই কেউ। আমি বিশ্বাস করেছি। ঢাকায় যার কেউ নাই তারও আছে কা কা। এরকম এক কা কা র কাছে বেড়াতে গিয়ে আর ফিরে আসিনি। মা বলেছিলো আমি কুহুপুত্র কেবল বসন্তে আমার ডাক আসবে। অথচ আজ সারা দিন ইটভাঙার চিৎকার করে গেছি। সেলাই করে গেছি সুঁই ও শোভা। আমাদের শোভা একটা সাদা পায়রা তার শান্তির কালো বিষ্ঠা মাথায় নিয়ে আজ সারাদিন শুয়ে ছিলাম। তুমি যেখানে নাই তাও এতো উচুঁতে, হাত দিয়ে মেঘ ধরা যায়। চমকে দেয়া যায় বিদ্যুৎ। আমি কাউকে চমকাতে পারিনা। তোমার শূন্যতা থেকে নীচে পরে যাই নীলা।
*
ধরে নিছি আমি ধরি নাই
যদি ধরে থাকি সে তোমার হাত
সূর্যের তেজ নিয়ে
একাকী প্রভাত।
নদী যেভাবে ধরে বন
আর গুটায় শামুক
তেমনি ধরেছি আমি
তোমার চিবুক
ধরে নিছি, রেখেছিলাম ধরে
তাওতো গিয়েছ সরে
বাড়িয়েছ অজুহাত
গলা কেটেছিলো কিছুটা
প্রণয় করাত
ধরে নিছি তুমি ধরো নাই
আমিই ছিলাম ধরে।
রেখেছিলাম
জলের ভেতর
মাছের আদরে।
ধরে নিছি
আসলে কি নিয়েছিলাম
যদি নিয়ে থাকি
কিছু নগদ আর কিছু বাকি
তবে ধরে নাও আমি ধরি নাই
তুমিও ধরেছিলে অল্প
আমরা ধরেছিলাম
আমাদের
যৌথ থাকার গল্প।
বিচ্ছেদ
গ্লাসভর্তি চিৎকার আর চিরহরিৎ। রাত মরে গেছে পাখি ও পাখানার দাপটে। এই দিনে কেউ কেউ উড়বে কেউ থাকবে নীড়ে। কয়েকজন শিকারি স্রেফ নীড় থেকে রিভিউ করবে ঘুম। আর কেউতো থাকবে যে আমার মতো সারাদিন ঘরের ভেতর ডানা ঝাপটাবে। প্লাস্টিকের ফুল গাছে ঢালবে জল, বরফ খুলে বের করবে স্যালমন ফিস। সেটাকে ফ্রাই করার কথা ভাবতে ভাবতে টানা পঁচিশ বছর ধরে ছাড়াবে পেঁয়াজের খোসা। খোসায় চন্দ্রবিন্দু নেই। তাও খোসা ছাড়ানোর সময় তার মনে হবে পৃথিবী থেকে খুলে নেয়া হচ্ছে চাঁদ।
*
গভীর আলোর মাছ, এখানে সকাল হয়। সাঁতরায় দুয়েকটা বন্য গাড়ির চিৎকার আর সহস্র তিমির হুইসেল। নীলাকে নীল তিমি ভেবে ঢুকে পড়েছিলাম তার পেটের সন্ধ্যায়। সেখানে পক্ষীকুলের ভেতর দুইটা হরিণ। সেখানে বাঘের ঘোঁৎ ঘোঁৎ চুরি করে নিয়েছিল যে জু, গৃহ ভেবে তার ভেতর ঢুকে পড়েছে আমার সকল বৃষ্টি ও বিস্ময়। কার্পেট ভিজে লাল ফুলগুলো হয়েছে তাজা। দেয়ালে আঁকা মেঘ ডাকছে অথচ আমার এখন তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে, এই জুয়ের বাইরে অন্য জুয়ে। তোমার পোষা খচ্চরের পীঠে আমার চিন্তা ও চীৎকার রেখে গভীর সমুদ্র সংকটে চলে যাব একদিন। সকল জাহাজ নিয়ে ভাসব তরঙ্গ ত্রিনয়নে। কোন কূলে ভেড়াব না। তীর থেকে দুরে, ভীড় থেকে আরো দুরে, নীড় থেকে আরো আরো দুরে ভাসব নীলা।
সায়েদাবাদ
পুঁজিবাদে নাই মার্কসবাদে নাই
আমি আছি
সায়েদাবাদে
আর তোমারে বাদে।
তুমি থাকো মিরপুর, মহাখালি, বাড্ডা
মাঝে মাঝে যাও বসুন্ধরা
বন্ধুর সাথে দেও আড্ডা
আমি থাকি সায়েদাবাদ
দুনিয়ার বাইরে ধুলায় ভরা।
এখান থেকে
যে কেউ হয়তো যাবে শিবিরে
কেউ খুঁজবে বাকশাল
সাকুরায় টিকেট কেটে
আমি শুধু যাব
মায়ের কাছে, বরিশাল।
উদারবাদ কী ফ্যাসিবাদ
যাই বলো
আমি ভালোবাসি
সায়েদাবাদ
আর তোমার সাথে
কিছুটা ঝগড়া বিবাদ।
মুজিববাদ, ইসলামবাদে নাই আস্থা
আমি বিশ্বাস করি সায়েদাবাদ
যেখান থেকে ইচ্ছা মতো
যাওয়া যায় চলে
জঙ্গলে
পাহাড়, সমূদ্র
মানুষের মঙ্গলে
আর এলাহাবাদ।
জাতিবাদ, ব্যক্তিবাদ
নারীবাদ, উগ্রবাদ
ইহুদিবাদ, হিন্দুত্ববাদ
জনতুষ্টিবাদ, প্রাচ্যবাদ
আরো আরো বাদ
সব বাদ দিয়া
আমি একলা রয়ে যাব
এইখানে
চিরকাল সায়েদাবাদ
আর তোমারে বাদ।
চতুর দশ
দেখা ভুলে গেছি পরানের ফাইরুজ
আমে জামে মন নাই দেখি কাউফলে
তোমাকে দেখার দিনে ফাঁটা তরমুজ
ভেতরে লোহার লাল এখনো কি জ্বলে?
বাহিরে রুপার মেঘ ভেসেছিল গোল
যেন নূপুর তোমার, জড়িয়ে পা দুটি
রাস্তায় উঠবে বেজে পথের ভূগোল
ভ্রমণের কাছে রেখে চোখের ভ্রুকুটি।
যদি যাই ততদূর, করে আসমান
পীরিতের গান গেয়ে উড়াব বোরাক
পুড়িয়ে তারার ছাই আগুন সমান
করব রুহের ধান তোমার খোরাক
আমার সকল হাত অযুহাতসহ
চোখেতে মরিচ মারে তোমার বিরহ।
মৌসন্ধ্যা
মগজে মৌচাক ভেঙে
হৃৎপিণ্ডে ঢুকে গেছে মধু
এখন
যা ভাবি মৌ মৌ
শিরার ভেতর
মধুর চলাচল
ফলাফল ভয়াবহ।
কানের কাছে অনবরত ডেকে যাচ্ছে একটা
মৌকথাকও পাখি
যে ফুলের গন্ধ আসছে নাকে
তার গোড়ায়
জমেছে মৌ
যে কথা লোকে বলছে তা শোনাচ্ছে মধুর
যাকেই দেখতে পাচ্ছি সেই মৌয়াল
যেদিকেই যেতে যাই উঠি গিয়ে মৌচাক মার্কেট
কি এক ধাঁধার ভেতর
মোম আর মধু কিনে ঘরে ফিরি
মুলত জতুগৃহ
আমিতো জানি
ভালোবাসা সে এক আশ্চর্য খচ্চর
তবু
প্রত্যেকেটা মানুষ ফুলের মতো
তাদের গোড়ায় রাখে নিজস্ব মৌ।
গুলশানের মেয়েরা
কোহিনুরের মাকে নিয়ে আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না। গ্রামে বড় হইলেও আমার ভালো লাগে গুলশানের মেয়ে। তারা যখন হাঁটে মনে হয় হাঁটছে না, মাটিতে পরছে ফুলের স্পর্শ। যেন গাছ থেকে নাগেশ্বর ফুল মাটিতে উড় উড়ে পরতেছে। তারা যখন কথা বলে, মনে হবে টিয়া পাখির ঠোঁট থেকে বের হচ্ছে রাগ ভৈরবী আর হাসলে নদীর কলকল ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাইনা। গুলশানে গেলে মনে হয় ন্যাচারের খুব কাছে চলে এসেছি। কোন একটা সারস পাখি ঘাড় উঁচিয়ে কল করছে উবার। কোন একটা ফিঙে লেজ নাড়িয়ে নাকের সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাখি স্রেফ বুলবুলি, তাদের ব্যাকসাইড দেখে আপনার চোখ সরবে না। মনে হবে এরকম লাল পাছার একটা বুলবুলিকে পুষি। শপিংমলগুলারে মনে হবে শালিমার বাগান সেখানে বিচিত্র পাখি আর পাখনা কিচির মিচির করছে। গুলশানের মেয়েরা যখন আইসক্রিম খায় আমি ফিল করতে পারি হিমালয়ের বরফ কীভাবে গলে যায়। ওরা কি থুতু ফেলে? ফেললেও মনে হয় বেসিনে গড়াগড়ি খাচ্ছে দুইটা গোল্ড ফিস।
Leave feedback about this