রুহু বুঝতে পারছে না কার সঙ্গে কথা বলা উচিত এ সময়ে। মাথার ভিতরে মনে হচ্ছে একটা বিশাল লম্বা ফাঁকা একটা দালান। একটাও লোক নেই। কোনও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না আর। এমন একটা বড়ো হল, যেখানে একটু একটূ করে এগিয়ে গেলে, পায়ের শব্দ টের পাওয়া যায়। রুহু আগে জানত না, মাথার ভিতরে এমন একটা হলঘর রয়েছে। কিন্তু কারো জন্য কি সে এই হলঘরে অপেক্ষা করছে? পিন পড়লেও শব্দ পাওয়া যাবে এমন ফাঁকা এই হলঘরটাকে সে যে আগে কখনো দেখেনি এমনও নয়। মাঝেমধ্যেই তার স্বপ্নের মধ্যে হানা দেয় এই লম্বা হলঘর। কিন্তু হলঘরটা ঠিক কোথায় রয়েছে, তা রুহুর আন্দাজেরও বাইরে। কিন্তু বাইরে থেকে কোনও পাখির শব্দ আসে না। মানুষের গলার শব্দ যদিও পাওয়া যায়, কিন্তু তা বড়ো ক্ষীণ। যেন, অনেক দূরে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এবং এই হলঘরে যে সে রয়েছে, সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। জলের ভিতর থেকে কথা বলার মতো কারা যেন কথা বলে। কিন্তু এখন কোনও গলার শব্দই আর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। পৃথিবীটা কি তবে মাথার ভিতরের এই হলঘর থেকে আরও খানিক দূরে সরে গেল?
রুহু বিছানা থেকে উঠে পড়ে। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। নিশুতি রাতেরও শব্দের একটা জগৎ আছে। হয়তো অনেক দূরে কেউ হেঁটে যাচ্ছে, তার পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। খসখস খসখস করে শুকনো পাতার শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দূরে কিছু কিছু বাড়িতে আলো জ্বলছে। তাদের গলার শব্দও ভেসে আসছে, কিন্তু কী বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিটি ঘর এক একটি উপন্যাস। প্রতিটি ঘর এক একটি পৃথিবী। প্রতিটি মন এক একটি মহাবিশ্ব। কিন্তু মাথার ভিতর কি সব নীরব হয়ে গেল এই সময়ে? ছোটোবেলা থেকেই রুহু বুঝতে পারে তার মাথার ভিতরে অন্য একটা পৃথিবী রয়েছে। অন্য কোনও ঘর আছে, যেখানে সে থাকে। অন্য লোকজন, অন্য ইচ্ছে, অন্য অনিচ্ছে। অন্যরকম বিরক্তি, অন্যরকম বিষাদ। সে দেশের শব্দ আর এই দেশের শব্দ আলাদা। হয়তো প্রখর দুপুরে যখন রুহু হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তখন মাথার ভিতরে তার ঘরের বাইরে থেকে ডেকে উঠল কোনও কোকিল পাখি। রুহু ঘুমিয়ে পড়লে, সেই হলঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। রুহুর সে দেশের সব রাস্তাই চেনা। আর সে দেশের মানুষজনের কাছেও সে অপরিচিত নয়। হলঘর থেকে একটি মোরাম বিছানো রাস্তা চলে গেছে একটা বাগানের দিকে। সে বাগানে রয়েছে একটা সুপ্রাচীন বটগাছ। তার ঝুরিগুলো নেমে এসেছে মাটির কাছে। লোকে বলে, ওই বটগাছ নাকি পাঁচশ বছরের পুরোনো। কিন্তু এই দেশে খুব একটা গরম নেই, ঠান্ডাও নেই। বেশ কিছুদূর হাঁটার পর সে দেশের সমুদ্রতীরে পোঁছনো যায়, হাঁটার রাস্তাটায় দেখা যায় দুপাশেই ঝাউবন। রুহু জানে, সেই ঝাউবনের ভিতরে যাওয়া যায় সরু সরু রাস্তা ধরে। সমুদ্র সেখানে সজ্জন। সৈকতে সঙ্গীতের মতো আসে, আর করুণরাগিনীর মতো চলে যায়। যেন বা চাইকোভস্কির সোয়ান লেক। কতগুলি কুকুর চিৎকার করে উঠল। রুহু জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে কাউকেই দেখতে পেল না।
রুহু আস্তে আস্তে বিছানায় এসে মোবাইলটা অন করল। রাজীব মেসেজ করেছে। রাজীব এই মধ্যরাতে একটার পর একটা কবিতা পাঠায়। বাংলা কবিতা। রাজীব জানে, রুহুর বাংলা কবিতা পড়তে ভালো লাগে না। কিন্তু তাও একটার পর একটা কবিতা মেসেজ করতে থাকে। না, বেশ কদিন হলো, রুহু কবিতা আর কিছুই বুঝতে পারছে না, কিন্তু পড়ার পর কিছু অনুভূতি হচ্ছে। অনুভূতিটা অনেকটা একটা বাড়ি ফাঁকা করে বেরিয়ে যাওয়ার মতো বা এমন কোনও চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো, যে-চোখে কোনও সঙ্গীত নেই। রাজীব এই কথা শুনে বলেছিল, মানুষের চোখেও কি সঙ্গীত থাকে? না কি থাকে মানুষের মনের ভিতর? রাজীব তবু কবিতা লেখে, একথা ভেবে রুহুর খুবই হাসি পেল।
রাতের আকাশের দিকে তাকালে রাত্রিকে রুহুর খুব নিজের মনে হয়। মনে হয় ইমন রাগ বাজছে কোথাও। আলোকবর্ষের পর আলোকবর্ষ পেরিয়ে নক্ষত্রগুলি থেকে ভেসে ভেসে আসছে আলো। আলো কি কখনও ক্লান্ত হয় না মা? এ কথা জিজ্ঞেস করেছিল রুহু সেই ক্লাস সেভেনেই। রুহুর মা, স্কুলটিচার। ভূগোল। রুহুর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলেছিলেন। রুহু, ছোটোবেলা থেকেই নিজের মায়ের প্রেমে পড়েছিল। মায়ের সুন্দর টলটলে মুখ, দেবী দুর্গার মতো চোখ দেখে মনে হতো, রুহুর মা অনেকটা এই পৃথিবীর মতো। একদিন রুহুর কাছে এসে রুহুর মা বলেছিলেন, আমি চলে যাব। তুই কি তোর বাবাকে ছেড়ে আমার সঙ্গে যাবি?
কথাগুলো এত সহজভাবে মায়ের কাছ থেকে শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেছিল রুহু। মা চলে যাবে কোথায়? আর তার পরেই চোখ গেছিল পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার বিরক্ত এবং ভাঙাচোরা মুখের দিকে। শীত পড়েছিল সেবার খুব। হলঘরে কি কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে? রুহু হঠাৎ সচকিত হয়ে বসল। মাথার ভিতরে সেই হলঘরে কেউ ঢুকেছে নিশ্চয়। পায়ের শব্দ। রুহু চোখ বন্ধ করল। ভালো করে ভাবার চেষ্টা করল হলঘরটাকে। ওই তো, শোনা যাচ্ছে, কে যেন এগিয়ে আসছে। পায়ের শব্দটি এখন শুধুই খসখসে নয়, বরং অনেকটা স্পষ্ট। যেন ওর দিকেই হেঁটে আসছে কেউ। এত রাতে কে তার মাথার ভিতর হেঁটে আসছে? রুহু আরও একটু স্পষ্ট করে দেখার চেষ্টা করল। পায়ের শব্দ আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এইবার হলঘরে কেউ একটা প্রদীপ জ্বেলেছে। হলঘরটাকে পুরো দেখা যাচ্ছে। কেউ একজন হাতে একটা প্রদীপ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর তার সঙ্গে সঙ্গে রুহুও হেঁটে চলেছে।
হলঘরটাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুহু। বিশাল বড়ো হলঘর। আর সেই হলঘরের মাঝখানে একটা টেবিল। টেবিলে একটা আয়না রাখা। বেশ বড়ো একটা ছবির মতো ফ্রেমের মধ্যে আয়না। এই আয়নাটিকে কি রুহু কোথাও দেখেছে? অবশ্য মনে করার আগেই, যে হাতে প্রদীপ নিয়ে হেঁটে এসেছে, সে প্রদীপটা রাখল পাশে আর আয়নাটি তুলে ধরল মুখে। প্রদীপের আলোয় অন্ধকারের সঙ্গে মিশে যে মুখের ছায়া পড়েছে আয়নায়, সে মুখ রুহুর নিজের।
– তুমি ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছ তো আমায়?
– প্রতিবিম্ব জিজ্ঞেস করল রুহুকে।
– হ্যাঁ। কিন্তু, তুমি কে?
– আমি? আমার নাম রুবিনা।
– রুবিনা? কিন্তু তোমাকে তো আমার মতোই দেখতে।
– হ্যাঁ, আমি জানি। তাই জিজ্ঞেস করলাম আমাকে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছ কিনা।
– আমি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কীভাবে এমন হল? তোমাকে তো আমি কখনো দেখিনি।
– আমিও তোমায় দেখিনি কখনো। কিন্তু আমার স্বপ্নে তোমার সঙ্গে দেখতে পাই সবকিছুই।
– মানে?
– মানে, আমি তোমার সবকিছুই জানি। ধরে নিতে পারো আমি তোমার মাথার সিসিটিভি ক্যামেরা।
– আর আমি? আমিও তো তোমার সিসিটিভি ক্যামেরা।
– নিশ্চয়। তুমি আমাকে দেখ তোমার স্বপ্নের মধ্যে। আর আমি তোমাকে দেখি আমার স্বপ্নের মধ্যে।
– কিন্তু আজ কী হল?
– সেটা বলতেই আসা।
– বলো। আমার হাতে সময় বেশি নেই। কিছুক্ষণ পরেই ভোর হয়ে যাবে।
– তাতে কী? আমাকে তো তুমি দেখতে পাবেই। কিন্তু বিপদ আমার।
– কীসের বিপদ?
– আমাদের এখানে আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে গেছে।
– মানে?
– মানে, আকাশে আর কোনও তারা নেই। চাঁদ নেই। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা অন্য কোনও শূন্যতায় ভাসতে ভাসতে হারিয়ে গেছে।
– মানে?
– মানে, আমাদের বাঁচতে হলে, তোমাদের জগতে চলে যেতে হবে।
– কিন্তু, শুধু তো তুমি নও। তোমাদের ওখানে তো সকলে আছে।
– হ্যাঁ। আর যদি আমাদের কাউকেই তুমি না বাঁচাও, তাহলে…
– তাহলে কী?
– তাহলে তোমার মাথার ভিতরে হলঘরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যাবে। আর তাকে খুঁজে পাবে না।
– তুমি বলছ পৃথিবী এমন এক শূন্যতায় ঢুকে পড়েছে, যেখানে কোনও সূর্য নেই, চাঁদ নেই, নক্ষত্র নেই। মহাকাশ মানে নিকষ কালো অন্ধকার?
– হ্যাঁ। আমাদের আর সময় নেই। তোমার কাছে সময় আছে। আমাদের তাও নেই। সময় এখানে নিজেই নিরুদ্দেশ।
– কিন্তু কীভাবে আসবে আমাদের এই জগতে?
– যদি তুমি এমন ভাবে ঘুমিয়ে পড়ো যে রাত্রি আর শেষ না হয়, তাহলে আমরা সবাই তোমার জগতে পৌঁছে যাব।
– কিন্তু তা কী করে হবে?
– যদি, তুমি ঘুমোতে ঘুমোতে ঘুমিয়েই পড়ো চিরকালের মতো। একমাত্র তুমিই তখন আমাদের এই সম্পূর্ণ জগৎকে বাঁচাতে পারো।
– আমি বুঝতে পারছি না, তুমি চাইছ আমি এক দীর্ঘ ঘুমের মধ্যে চলে যাই? তা তো কোমা। আমি তো তাহলে আর বেঁচে থাকব না।
– আর তুমি যদি দীর্ঘ ঘুমের মধ্যে চলে না যাও, তাহলে আমরা একটা অন্ধকার শূন্যতার মধ্যে হারিয়ে যাব। ক্রমশ আমাদের পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে পড়বে। আমরা আর কারুর মাথার মধ্যে আসতে পারব না।
রুহু জোর করে নিজেকে সরিয়ে নিল। কিন্তু মাথার মধ্যে কে যেন বারবার কড়া নাড়ছে। রুহু জানলার কাছে গেল। বাইরে চাঁদ আকাশের প্রায় মধ্যভাগে এসে গেছে। নক্ষত্রগুলোকে জানলা থেকে দেখা যায় ঠিক। হাওয়া দিচ্ছে। কিন্তু শীত করছে না আর। দুটো পাই কেমন দুর্বল দুর্বল লাগছে। ভাবনা বন্ধ করতে হবে কয়েকদিন। জলের বোতলটা থেকে জল খেল। তার পর কী মনে হল, হেঁটে গেল বাবার ঘরের দিকে। ঘরের দরজাটা খোলা।
পর্দাটা সরিয়ে ঘরের ভিতর পা রাখতে গিয়েই টের পেল রুহু, তার বাবা সমীরণ বিছানার উপর বসে আছেন। এগিয়ে গেল রুহু।
– তুমি ঘুমোচ্ছ না?
– অ্যাঁ, ও তুই।
– ঘামছ কেন?
– রুহু, কী বলি বল তো।
– কেন কী হয়েছে আমাকে বলো
– তুই তোর ঘরে যা।
– না, তুমি বলো।
– তুই কেন জেগে?
– আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। বাজে স্বপ্ন। ঘুম ভেঙে গেল।
– বাজে স্বপ্ন? এখনই?
– হ্যাঁ বাবা। তুমি শুয়ে পড়ো।
– রুহু…
– বলো
– রুহু, যদি আমি আর ঘুম থেকে না উঠি, তুই নিজেকে দেখিস।
– বাবা, তোমার কী হয়েছে?
রুহু চমকে উঠল। এ কী করে সম্ভব? বাবাও কি একই স্বপ্ন দেখেছে? বাবা এমন স্বপ্ন দেখছে কেন? হলঘর কি তবে সবার মাথার মধ্যে রয়েছে?
– বাবা তুমি কী দেখেছ?
– রুহু, দ্যাখ, আমাকে লম্বা একটা ঘুমে যেতে হবে
– আমি জানি
– তুই জানিস?
– তোমার মাথার মধ্যে কে এসেছিল? বলো। একটা পৃথিবী, যার রাতের আকাশে কোনও তারা নেই?
– তুই… তুই কী করে জানলি?
– কারণ সে আমাকেও একই কথা বলেছে।
– মানে, তুইও…
– তোমারও মাথার মধ্যে এমন একটা হলঘর আছে?
– ঠিক হলঘর নয়, কিন্তু একটা সিঁড়ি। যেখান দিয়ে নেমে যাওয়া যায়। আর তার পর…
– কী করব বাবা আমরা?
বাইরে কুকুর চেঁচাচ্ছে কেন এত কে জানে? রাত অবশ্য পাতলা হয়ে আসছে। এই কলকাতা শহরে আর তেমন ভাবে কোথাও রাত হয় কি? গুনগুন শব্দ শুনতে পেয়ে রুহু আর সমীরণ চমকে উঠল।
সমীরণের ঘর থেকে বারান্দায় যাওয়া যায়। রুহু আর সমীরণ বারান্দায় গিয়েই দেখল এক অদ্ভুত দৃশ্য।
ঘুমের মধ্যে একটা মিছিল হেঁটে যাচ্ছে পাড়ার ভিতর দিয়ে। কোথায় যাচ্ছে এরা? বাবার মুখের দিকে তাকাল রুহু।
মিছিল চলেছে । ঘুমন্ত মানুষের মিছিল। এমন একটা মিছিল চলেছে, যার কোনও শেষ নেই। কোথায় চলেছে? মাও কি এই মিছিলেই?
সমীরণ আর রুহু মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পিছনের দিকে আর না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এল। সকলেই নেমে আসছে। ঘুমন্ত। আর তারা একে অপরের সঙ্গে নিরাপদ এক দূরত্ব রেখে আস্তে আস্তে হেঁটে চলেছে কোনও শব্দ না করে। এ এমন এক মিছিল যার কোনও ব্যানার নেই, স্লোগান নেই। শুধু ঘুম রয়েছে। ঘুমের মধ্যেই এক পায়ে দুই পায়ে তারা হেঁটে চলেছে কোথাও।
তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে সমীরণ আর রুহু অনেকটা এগিয়ে এল রাস্তার মোড়ে।
রাজপথেও চলেছে দীর্ঘ এক মিছিল। দীর্ঘ মিছিল। সব বাড়ি থেকে ফ্ল্যাট থেকে লোকজন বাচ্চা বুড়ো যুবক যুবতী সকলেই বেরিয়ে এসে পা মেলাচ্ছে মিছিলে। প্রথমে রুহু ভাবছিল হাজার হাজার, তার পর বুঝতে পারছে সংখ্যাটি লক্ষ লক্ষ। সম্ভবত কোটি কোটি।
সমগ্র পৃথিবীও কি হাঁটছে এই মিছিলে?
সমীরণ আস্তে আস্তে বলল, রুহু, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রে। খুব ঘুম। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এত সুন্দর ভাবে ঘুম বহুদিন পায়নি আমার।
দেখতে দেখতে সমীরণ দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। তার পর পা বাড়ালেন মিছিলে। রুহুর চোখের সামনে সম্পূর্ণ মিছিলের সঙ্গে তার বাবাও হাঁটতে শুরু করল ঘুমের মধ্যে।
রুহু একাকী ফিরে গেল ঘরে।
ঘর থেকে জানলা দিয়ে দেখতে লাগল মিছিলের সারি।
মিছিল করে মানুষ যাচ্ছে। জলস্রোতের মতো মিছিল চলেছে। ঘুমন্ত। শব্দহীন।
রুহুর মাথার মধ্যে আবার কিছু শব্দ হলো।
রুহু চোখ বন্ধ করল।
হলঘরের ভিতর সেই মেয়েটি।
– দেখেছ, সকলে হাঁটছে। সকলে আমাদের পৃথিবীটাকে বাঁচাতে চায়। সকলেই চলে যাচ্ছে আমাদের এখান থেকে তোমাদের ওখানে। সেখানে সূর্য আছে, চাঁদ আছে, নক্ষত্রপুঞ্জ আছে। আমি কি এখানে একা পচে মরব? তুমি কি আমাকে যেতে দেবে না তোমাদের কাছে?
রুহু বলল আর আমাদের পৃথিবীতে তো সকলেই ঘুমিয়ে পড়ছে। আমার চারপাশে আর কেউ নেই যারা ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যায়নি।
– তারা কোথাও যাচ্ছে না, কোথাও না, তারা আমাদের স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। রুহু, তুমি কি ঘুমোবে না?
রুহুর চোখ ভারী হয়ে আসছে।
হলঘরটা অন্ধকার হয়ে আসছে। প্রদীপ দপদপ করছে। একটু পরেই সব অন্ধকার হয়ে যাবে।
রুহু আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ল বিছানায়। চাদরটা টেনে নিল।
ঘুম পাচ্ছে রুহুর খুব। এক দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম।
হলঘরটা অন্ধকার হয়ে গেছে।
কথাসাহিত্য
ছোটগল্প
বিশেষ সংখ্যা
ঘর | হিন্দোল ভট্টাচার্য | ছোটগল্প | শারদীয় সংখ্যা
- October 20, 2023
- 0 Comments
- 322 Views
Leave feedback about this